হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায় বিস্তারিত জানুন
আপনার হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায় গুলো কি আপনার জানা আছে। যদি জানা না থাকে তাহলে অবশ্যই এগুলো আপনার জেনে নেওয়া উচিত। হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার কি কি কিংবা হার্ট ভালো রাখার খাবার কি এগুলো আমাদের সবার জেনে রাখা উচিত। যাতে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের হার্ট ভালো আছে নাকি খারাপ।
আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা হার্ট সম্পর্কিত সকল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। সুতরাং এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
আমরা অনেকেই হার্টের সমস্যায় ভুগছি। এর প্রাথমিক কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি, হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায়গুলো সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। হার্টের সুস্থতা আমাদের সকলেরই কাম্য। হার্ট সুস্থ রাখার জন্য আমাদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানা উচিত।
যেমন- হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার কি, আর ভালো রাখার খাবার কি, কি খেলে হার্টের রোগ ভালো হয়, কিংবা হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় গুলো কি কি। এগুলো সম্পর্কে যদি আমাদের ধারণা থাকে তাহলে আমরা অনেকটাই হার্টের সমস্যাগুলো থেকে নিজেদের হার্টকে রক্ষা করতে পারি। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায়
আমরা যদি আমাদের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করি তাহলে প্রথমেই আমাদের মাথায় আসে আমাদের হার্ট ভালো আছে কিনা, বা হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায় কি। হার্ট ভালো আছে কিনা বুঝার উপায়গুলো আমরা বাসায় বসেই এপ্লাই করে জেনে নিতে পারি আমাদের হার্ট ভালো আছে কিনা। হার্টে যে রোগ গুলো হয় তার মধ্যে অন্যতম রোগ হল রক্তনালি ব্লক হয়ে হার্ট অ্যাটাক হওয়া।
এটাকে স্টেমিক হার্ট ডিজিজ বলে। এ কারণেই বুকে ব্যথা হয়। একে আমরা এনজাইনা বলি। রক্তনালী ব্লক হয়ে যদি বুকে ব্যাথা হয় এটি আসলেই একটি শঙ্কার ব্যাপার। যদি হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় তাহলে তো আপনার ক্ষতি হয়ে গেল। হার্টের মাংসপেশী পচে গিয়ে আপনার হার্টফেলিউর হয়ে যাবে। আপনি দুর্বল হয়ে যাবেন।
তাই যাতে আগে থেকেই আমরা বুঝতে পারি আমাদের হার্ট খারাপ থেকে যাচ্ছে কিনা, হার্ট অ্যাটাকের দিকে যাচ্ছে কিনা, অথবা আমার রক্তনালী ব্লক হয়ে যাচ্ছে কিনা। তাহলে কিন্তু আমরা আগে থেকেই চিকিৎসা নিতে পারব এবং হার্ট অ্যাটাক থেকে মুক্তি পেতে পারি। তাহলে আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার হার্ট অ্যাটাকের দিকে যাচ্ছে কিনা।
রক্তনালী ব্লক হতে যাচ্ছে কিনা। বা হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায় কি। এটি আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। দুটি উপায় রয়েছে এটি বোঝার জন্য। একটি হল আপনি বাসায় এটি নিজে নিজে বুঝতে পারবেন, আরেকটি হল আপনি ডক্টরের কাছে গিয়ে চেকআপ করালে বুঝতে পারবেন।
বাসায় কিভাবে বুঝবেন
আপনি বাসায় ভারী এক্সারসাইজ করবেন। আপনি সিঁড়ি বেয়ে পাঁচ তলায় কিংবা ছয় তলায় উঠে যাবেন। অথবা আপনি এক ঘণ্টার মতো জগিং করবেন অথবা দৌড়াবেন। এই পরিশ্রম বা দৌড়ানোর সময় যদি আপনার বুকে ব্যথা না হয্, আপনার ক্লান্ত না লাগে এবং অল্প একটু হাঁটলেই যদি আপনার শ্বাসকষ্ট না হয় তাহলে আপনি সুস্থ।
অর্থাৎ ব্যায়ামের শুরুতেই আপনি হাঁপিয়ে যাচ্ছেন, আপনি 40 মিনিট হাঁটতে পারছেন না, কিংবা আপনার ৫ তলা উপরে ওঠার কথা ছিল কিন্তু আপনি অতটা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার আগেই হাপিয়ে যাচ্ছেন। তখন কিন্তু আপনার মনে করতে হবে যে আপনার হার্টের রক্তনালী ব্লক হয়ে যেতে পারে। এটি কিন্তু আপনি বাসায় নিজেই পরীক্ষা করে ফেলতে পারেন।
আমরা হসপিটালে গেলে ডাক্তাররা কিভাবে আমাদের হার্টের পরীক্ষা করেন। একটি ইটিটি মেশিনে আপনাকে হাঁটতে দেয়। সেখানে নয় মিনিট বা ১২ মিনিট হাঁটার পরে ডক্টর সিদ্ধান্ত নেয় আপনার হার্টের সমস্যা আছে কি না। শরীরের ওপরে প্রেসার দিয়ে দেখা হয় আপনার হার্টের ক্ষমতা কতটুকু। অর্থাৎ এই পরীক্ষাটি আপনি বাসায় বসেই করে ফেলতে পা্রেন। এজন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
ডক্টরের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করে
অনেকেরই এটা জানার ইচ্ছা থাকে যে, আমার হার্টে কোন সমস্যা তৈরি হতে যাচ্ছে কিনা। কিংবা আমার হার্টের রক্তনালী ব্লক হতে যাচ্ছে কিনা। আমাদের মধ্যে অনেকেরই বাবার অথবা ভাইয়ের অথবা অন্য কারোর হার্টের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। এর থেকে আমরাও শঙ্কিত হয়ে থাকি যে আমাদের হার্টেও কোন সমস্যা আছে কিনা।
সে ক্ষেত্রে আমরা ডাক্তারের কাছে যেতে পারি। ডক্টর কিছু পরীক্ষা করে আপনাকে জানিয়ে দিবে যে আপনার হাটে কোন সমস্যা হতে যাচ্ছে কিনা। সেটা ইসিজি, কো-কাটিয়াগ্রাম, পিটিটি, সিটি স্ক্যান এর মাধ্যমে করা যেতে পারে। আপনারা ইসিজি, কো কার্ডিওগ্রাম, পিটিটি এই পরীক্ষাগুলো সম্পর্কে অনেকেই জানেন।
কিন্তু সিটি স্ক্যান একটি পরীক্ষা আছে যার মাধ্যমে ক্যালসিয়াম স্করিং করে দেখা হয় যে, হার্টের রক্তনালিতে ব্লক হতে যাচ্ছে কিনা। অর্থাৎ ব্লক শুরু হতে যাচ্ছে কিনা। অর্থাৎ ক্যালসিয়াম স্করিং টেস্টের মাধ্যমে একজন জানতে পারবেন যে তার হার্টের ব্লক তৈরি হতে যাচ্ছে কিনা। এছাড়াও রক্তের কোলেস্টেরল টেস্ট করে অথবা সুগার টেস্ট করেও দেখা যায়। এগুলোতে কোন এবনরমালিটি আছে কিনা। এগুলোতে এবনরমালিটি থাকলে ভবিষ্যতে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সুতরাং এই চেকআপেও আপনি চলে যেতে পারেন। আপনার বয়স যদি ৪০ এর উপরে হয় তাহলে আপনি হার্টের একটি চেকআপ করে ফেলতে পারেন। আর যাদের ফ্যামিলিতে হার্টের সমস্যা হওয়ার প্রবণতা আছে তাদের উচিত ৩০ বছর পেরোলেই হাটের হার্টের চেকআপে চলে যাওয়া। অর্থাৎ হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায় দুই রকমের। আমরা দুই ভাবেই এটি পরীক্ষা করে দেখতে পারি।
হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার
হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের প্রধান এবং প্রাথমিক কাজ হল হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার কি কি সেগুলো জানা। কারণে এমন কিছু কিছু খাবার হয়েছে যেগুলো খেলেই হার্টের রাফা দফা হয়ে যায়। অর্থাৎ সুস্থ থাকতে হলে হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলোকে আমাদের সারা জীবনের মতো গুডবাই বলে দিতে হবে। চলুন জেনে নেই কি সেই খাবারগুলো-
রেড মিট বা পাঁঠার মাংস
রেডমিট হার্টের জন্য অত্যন্ত খারাপ একটি খাবার। এই ধরনের মাংসে সেচুুরেটেড ফ্যাট অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে এই ফ্যাট ভূমিকা রাখে। হার্টের রক্তনালীতে রক্ত চলাচল করতে বাধা দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব রেডমির থেকে দূরে থাকাই ভালো।
কোল্ড ড্রিঙ্কস বা কোমল পানীয়
আমরা গরমের দিনে অতিরিক্ত পরিমাণে কোলড্রিংস খেয়ে থাকি। তবে আমরা এটা অনেকেই জানিনা যে, কোল্ড্রিংস শরীরের জন্য খুবই খারাপ। এতে এডিট সুগার থাকে। এছাড়া নানা ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত থাকে। কোল্ড ড্রিঙ্কস ডাইবেটিস ও ব্লাড প্রেসার বাড়াতে পারে। সরাসরি হার্টের রোগের সাথে এই দুটি অসুখের সম্পর্ক রয়েছে। গরম লাগলে ঠান্ডা পানি, ডাবের পানি এগুলো খাওয়া উচিত। কিন্তু কখনোই কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া উচিত নয়।
পাস্তা বা পাউরুটি
পাস্তা বা পাউরুটি ময়দা দিয়ে তৈরি হয়। ময়দা হলো রিফাইন গ্রিন। রিফাইন খেলে শরীরে খুব তাড়াতাড়ি মেদ জমে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত পাউরুটি খায় তাদের ডায়াবেটিস এবং হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যতটা সম্ভব এ ধরনের খাবার থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত।
ফাস্টফুড
আমরা অনেকেই এখন নিয়মিত ফাস্টফুড খাই। বাইরে বেরোলে বিভিন্ন রকমের ফাস্ট ফুড যেমন সিঙ্গারা, রোল, চাউমিন, পিজা খেয়ে থা্কি। এ ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতেই থাকবে। কারণ ফাস্টফুডে প্রচুর পরিমাণে তেল, নুন থাকে। এ দুটোই হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমাদের এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
মদ্যপান
মদ্যপানএকটি ঘাতক নেশা। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাটের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। মদ খেলে খারাপ কোলেস্টেরল দেহের মধ্যে বাড়তে থাকে ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে। এছাড়াও মদ খেলে ক্যান্সারেও হতে পারে। সেজন্য আমাদের কারোর মধ্যপন না করাই ভাল।
হার্ট ভালো রাখার খাবার
আমাদের যেমন হার্ট ভালো আছে বোঝার উপায়, হার্টের জন্য কোন খাবার গুলো ক্ষতিকর এ ব্যাপারে জানা উচিত। ঠিক তেমনি হার্ট ভালো রাখার খাবার সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা জরুরী। কারণ হার্ট এই অঙ্গটি দেহের প্রতিটি অংশের অক্সিজেন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে দেয়ার কাজ করে। ফলে তার কোষগুলোকে সুস্থ রাখা খুবই জরুরি। হার্টে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়।
হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও এরিদমিয়া ও হার্টফেলিওর এর মত শুরু হয়। চলুন এমন সব খাবার সম্পর্কে জেনে নেই যেগুলো হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে হার্টের সমস্যা অনেকটাই কম হবে আশা করা যায়।
শাক পাতা
নিয়মিত শাক খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। সাথে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই সমস্ত উপাদান হার্টের অসুখকে দমিয়ে দিতে পারে। শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে। এই ভিটামিন রক্তনালী সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেজন্য প্রত্যেকদিনের খাবারে শাক রাখা অত্যন্ত জরুরি।
গোটা শস্য দানা
গোটা শস্য দানা হল হার্টের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। এই ধরনের শস্য দানায় জার্ম অ্যাণ্ডোস্পারম এবং ক্রেইনউপস্থিত থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি হোল ক্রেইন জাতীয় খাবার নিয়মিত খেলে শরিরকে আক্রান্ত করা সংখ্যা অনেক গুনে কমে যায়। সেজন্য ওটস, বার্লি, ব্রাউন রাইস নিয়মিত খাওয়া উচিত।
বেরি জাতীয় ফল
স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও ব্লুবেরি যতরকমের বেরি জাতীয় ফল রয়েছে এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, ক্রেইন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এগুলো শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ধরনের ফলে অ্যান্থোসায়ানিন নামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে। সেজন্য হার্টের ব্যথা জনিত সমস্যা দূর করে।
মাছের তেল
মাছের তেল প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রী ফ্যাটি এসিড থাকে। এই ফ্যাটি এসিড হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রের মাছ খেলে সব থেকে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
আখরোট
আখরোটে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম,এর মত কিছু খনিজ পদার্থ। যেগুলো ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেলে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে। যা রোগ প্রতিহত করে। তাই প্রতিদিন এক মুঠ আখরোট খেতে আমরা যেন ভুল না করি।
হার্ট ভালো রাখার ব্যায়াম
শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল হার্ট বা হৃদপিণ্ড। এটি আমাদের শরীরে সরাসরি বিশুদ্ধ রক্ত পৌঁছে দেয়ার কাজ করে। কয়েকটি ভুলের কারণে আমাদের এই অঙ্গে নানারকম অসুখ বাসা বাঁধে। বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে বলেছেন, আগের থেকেই এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। পরিসংখ্যান থেকে যায়, হার্টের অসুখ ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
সকল স্তরের মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হার্টের বিভিন্ন ধরনের রোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওর ইত্যাদি। এই সকল রোগের লক্ষণ দেখা মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। হার্টের রোগ মূলত কয়েকটি কারণে হয়ে থাকে। যেমন-
- কোলেস্টেরল
- ডায়াবেটিস
- অতিরিক্ত ওজন
- অনিয়ন্ত্রিত আদ্যাভ্যাস
- ধূমপান
- অলস জীবনযাত্রা
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দিনে মাত্র কয়েক মিনিট শরীরচর্চা করলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। হার্ট ভালো রাখার ব্যায়ামগুলো চলুন জেনে নেই। আমরা এখন এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, ব্যায়ামের জন্য সময় বের করে ওঠা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। কিন্তু সারা দিনের মধ্যে যদি মাত্র ৩০ মিনিট আমরা বের করতে পারি,তাহলেই রোগ মুক্তি পাওয়া যায়। সপ্তাহে পাঁচ দিন মাত্র ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করলেই যথেষ্ট। এতোটুকু সময়ই আমাদের হাতে নিশ্চয় থাকে।
এরোবিক ব্যায়াম
করলে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং স্বাভাবিক থাকে। হার্টের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। তাই হাটা, জগিং, সাইকেল চালানো ইত্যাদি আমাদের নিয়মিত করা উচিত।
রেজিটেন্স ট্রেনিং
রেজিটেন্স ট্রেনিং হল বাড়তি ওজন তোলা, পুশ আপ, স্কোয়াড এগুলোর মত ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ। এগুলো শরীরকে একটি সেপ দেয়। ফলে ওজন দ্রুত কমে গবেষণায় জানা গেছে, এই ধরনের ব্যায়াম খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
স্টেচিং
স্কেচিং করলে শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। ফলে হার্ট ও শরীর নিজে ঠিকঠাক মতো কাজ করতে পারে। স্টেচিং করলে ভারী এক্সারসাইজ করতে অনেকটাই সুবিধা হয়। এছাড়াও প্রতিদিন এক্সার সাইজ করা যেতে পারে তাহলে হার্ট সুস্থ থাকবে।
হার্ট দুর্বল কেন হয়
দুশ্চিন্তা এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম হার্টের দুর্বলতার প্রধান কারণ। দেরিতে ঘুমানো, পরিমান মত খাবার না খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব ইত্যাদি কারণে হার্ট দুর্বল হতে পারে। দুর্বল হার্টের কিছু লক্ষণ রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক লক্ষণ গুলো কি কি।
হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়
আমাদের হার্ট সবসময়ই স্পন্দিত হয় কিন্তু আমরা অতটা খেয়াল করি না। কিন্তু হৃদস্পন্দন যদি বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই এটি আমাদের ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে। যদি ৬০ থেকে ১০০ এর ভেতর থাকে তাহলে সমস্যা নেই। তবে বেশি বা কম হলেই যে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্লান্তি ও দুর্বলতা
সারাদিন কাজ করার ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের শরীরে একটি ক্লান্তি আসে। কিন্তু কোন রকম কাজ করা ছাড়াই যদি শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে তাহলে বুঝে নিতে হবে হার্টের কোন সমস্যা অবশ্যই হচ্ছে। হার্ট দুর্বল হয়ে গেলে রক্ত ঠিকমতো সারা দেহে পৌঁছায় না। তখন দুর্বলতা ক্লান্তি এগুলো দেখা যায়।
বুকে ব্যথা
হার্টের রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা। অর্থাৎ বুকে ব্যথা হলেই এটিকে কখনো হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। বুকের মাঝে ব্যথা হলে বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
শ্বাসকষ্ট
হার্ট দুর্বল হয়ে পড়লে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। যদি খুব কম পরিমাণেও শ্বাসকষ্ট দেখা যায় তাহলে বিষয়টি কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
দুর্বল হার্ট সবল করার উপায়
দুর্বল হার্ট সাধারণত সে সকল হার্ট কে বলা হয় যে সকল হার্টের ক্যাপাসিটি কমে যায়। অর্থাৎ কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। এ দুর্বল হার্টকে সবল করার কিছু উপায় রয়েছে। যার মধ্যে ওষুধপত্র তো রয়েছেই। তাছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করা, খাবার গ্রহণে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা, এগুলো করে দুর্বল হার্টকে সবল করা যায়।
যাদের হার্টের রক্তনালীতে ব্লক হয়ে গেছে তাদের রক্তনালীর ব্লক ছাড়িয়ে দিয়ে অথবা ওপেন হার্ট সার্জারি করিও এটি সারানো যায়। যাদের হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নাও হতে পারে। অর্থাৎ ১০০পার্সেন্ট হার্টের রোগীর ক্ষেত্রে যে এটি কার্যকর হবে তা কিন্তু না।
লেখক এর মন্তব্য
আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে আমরা হার্ট সম্পর্কিত অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যেগুলো হয়তো লেখাটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জেনেছেন। এখানে আমরা হার্ট ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় থেকে শুরু করে কি ধরনের খাবার আমাদের খাওয়া উচিত, কি ধরনের খাবার আমাদের খাওয়া উচিত না, কোন ধরনের ব্যায়াম করা উচিত, হার্ট দুর্বল হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়, দুর্বল হার্ট কিভাবে সবল করা যায় সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
আশা করছি আমার এই লেখাটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। যদি আমার এই লেখাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন যাতে সবাই বিষয়টি জানতে পারে।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url