ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে বিস্তারিত জেনে নিন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে। বিভিন্নভাবে ধনেপাতা খেয়ে থাকি। তবে অনেকেই জানিনা ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে। আজকে আমরা ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সুতরাং আপনি যদি জানতে চান ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ধনেপাতা
ধনেপাতা আমরা সাধারণত রান্নার স্বাদ বাড়াতে এবং সালাত হিসেবে খেয়ে থাকি। কিন্তু শুধু স্বাদ কিংবা ঘ্রাণের জন্য নয় ধনেপাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আমাদের দেশে প্রায় সর্বত্রই ধনে বীজকে মসলা হিসেবে খাওয়া হয়।

ভূমিকা

ধনেপাতার বৈজ্ঞানিক নামCoriandrum sativa. এটি একটি এক বছর জিবি উদ্ভিদ। ধনিয়া পাতা পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে ধনেপাতা খেয়ে থাকি। যেমন রান্নার স্বাদ বাড়াতে কিংবা সালাত হিসেবে সুপরিচিত। এই ধনিয়া পাতা বিভিন্ন রকম পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমরা ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে তা না জেনেই এটি খেয়ে থাকি।

আজকে আমরা বিস্তারিত জানবো ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে। আমরা সবাই ধনে বীজ খেয়ে মসলা হিসেবে খেয়ে থাকি। ধনেপাতা আমাদের শরীরে নানা রকম ভিটামিন, মিনারেল, জিংক, ক্যালসিয়াম যোগান দিয়ে থাকে। ধনেপাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলুন জেনে নেই ধনেপাতা সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য।

ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে

আমরা সকলেই ধনেপাতা খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে। ধনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে না জেনেই আমরা নিয়মিত রান্নার কাজে ব্যবহার করে আসছি। ধনে পাতাতে রয়েছে ১১ জাতের এসেনসিয়াল অয়েল। তার মধ্যে অন্যতম হলো লিনোলিক এসিড, লিনোলেনিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক এসিড, পামেটিক অ্যাসিড ইত্যাদি।

এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ধনেপাতা তে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, ইত্যাদি ভিটামিন রয়েছে। ম্যাঙ্গানিজ, আইরন, ফসফরাস, ক্লোরিন, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। এছাড়াও ধনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনোল ও ফাইটোকেমিক্যাল আছে।

যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ধনে পাতায় কোলেস্টেরল একেবারে নাই বললেই চলে। তাই ধনেপাতা কে একেবারেই সাধারণ বলে উড়িয়ে দেওয়ার কিছু নেই। এটি অতিরিক্ত পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি পাতা।

ধনিয়া বীজ খাওয়ার অপকারিতা

ধনিয়া বীজ খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যে কোন জিনিসের যেমন উপকারী দিক থাকে ঠিক তেমনি অপকারিতাও থাকে। ধনেপাতা যদি স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় তাহলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক।

যদি অতিরিক খাওয়া হয় তাহলে বুকে ব্যথা, মুখে ব্যথা, ডায়রিয়া, গর্ভবতী মা দের ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা রকম সমস্যা হতে পারে। ধনিয়া বীজ খাওয়ার সময় অবশ্যই আমাদের মাথায় রেখে খেতে হবে এটি যেন পরিমাণে বেশি না হয়ে যায়। যদি এ ধরনের কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

বিলাতি ধনিয়া পাতার উপকারিতা

আমরা দেশি ধনিয়া পাতার গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সবাই জানি। কিন্তু বিলাতি ধনিয়া পাতা সম্পর্কে আমাদের তেমন কোন ধারণা নেই। বিলাতি ধনিয়া পাতা আমাদের দেশি ধনিয়া পাতার মত হয় না। ওগুলো সাধারণত লম্বা পাতা হয় এবং পাতায় ছোট ছোট কাটা থাকে। এই ধনিয়া গাছের শুধু পাতা খাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই বিলাতি ধনিয়া পাতার উপকারিতা গুলো।
  • শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে
  • হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলেন
  • দাঁতের মাড়ি মজবুত করে
  • পাকস্থলীর জ্বালাপোড়া কমায়
  • কৃমি নিরাময় করে
  • রুচি বাড়ায়
  • হাইপার টেনশন কমায়
উপরিউক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও ধনেপাতা বিভিন্ন রকম পেটের ব্যাথা এবং ডায়রিয়ার সমস্যা সমাধান করতে পারে।

ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম

ধনেপাতা তে যেহেতু অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে তাই ধনেপাতা খাওয়ার কথা মনে হলেই আপনি ভাবেন এটি কিভাবে খেলে সঠিক পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে। আপনি যদি এই বিষয়টি ভেবে থাকেন তাহলে এবারের আলোচনা আপনার জন্য। প্রথমে আপনাকে পাতা নির্বাচন করতে হবে। যদি মরা পাতা হয় তাহলে আপনি এর স্বাদ ভালো মতো পাবে না। এবং পুষ্টিগুন ভালো হবে না।

যতদূর সম্ভব সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন। প্রথমে পাতাগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। তারপর পাতাগুলি কুচি কুচি করে কেটে ফেলুন। এবার এক গ্লাস পানি এবং ধনেপাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। ফোটানো হয়ে গেলে তা ছেঁকে ফেলুন। এবার তাতে এক চিমটি লবণ এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। এভাবে ধনেপাতা খেলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়। কারণ এতে ধনেপাতার পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় না।

ধনে বীজের উপকারিতা

আমরা সবাই তরকারি, সালাদ ইত্যাদি সবকিছুতেই মসলা হিসেবে ধনে পাতা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু ধনে বীজের ওষুধে গুণাবলী সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে সেগুলো আপনারা জানেন। যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, এছাড়াও পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি ঔষধি গুণাবলী তে ভরপুর ধনে বীজ। চলুন ধনে বীজের উপকারিতা গুলো বিস্তারিত জেনে নেই।

ত্বকের রোগ নিয়ন্ত্রণে: ত্বকের বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন ইনফেকশন, চুলকানি, একজিমা ইত্যাদি ধনে বীজে সেরে যায়। এছাড়াও আলসার কিংবা মুখের ঘা সারাতে ধনে বীজ কাজ করে। পানি এবং ধনে বীজ একসাথে গরম করে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের ঘা কিংবা আলসার অনেকটাই কমে যায়।

ব্রণ: যাদের মুখের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত তাদের মুখে প্রচুর ব্রণ উঠে। ব্রণের সমস্যা বয়সন্ধিকালে বেশি দেখা দেয়। ব্রণের সমস্যা কমাতে ধনে বীজ কাজ করে। ধনে বীজের পেস্টের সাথে এক চিমটি হলুদ ও এক চামচ মধু মিশিয়ে লাগাতে পারেন।

যাদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত তারা এর সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। তারপর আবরণটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ধনে বীজে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমাতে সাহায্য করে।

চুল লম্বা করে: চুল বিভিন্ন কারণে পড়তে পারে। যেমন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, স্ট্রেস, হেয়ার ফলিকল দুর্বল হওয়া এবং অপর্যাপ্ত খাবার ফলে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ধনে বীজ খুবই উপকারী। এটি চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আপনি চুলের যেই তেল ব্যবহার করেন তার সাথে ধনে বীজের গুঁড়া অল্প পরিমানে মিশিয়ে মাথায় মাসাজ করুন। এটি অন্তত সপ্তাহে দুইবার এপ্লাই করুন।

হজম শক্তি বাড়ায়ঃ ধনে বীজ এবং ধনেপাতা দুটোই হজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এক মুঠো ধনে বীজ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি ছেঁকে খেলে হজমের সমস্যা হয় না। ধনে বীজে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডায়েটরি ফাইবার। যা হজম ক্রিয়ায় ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এবং মলমল নির্গমনে সহায়তা করে। ধনে বীজ ডাইজেস্টিভ এনজাইম উৎপাদন করে যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে অনেকটা সহজ করে তোলে।

কোলেস্টেরল কমায়: ধনে বীজ আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ধনে বীজে রয়েছে দস্তা, জিংক এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ যা রক্তে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়ায় এবং হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে।

ডায়াবেটিস নিরাময়: ধনে বীজ অতিরিক্ত ওজন কমাই এবং অতিরিক্ত চর্বী কমায়। ধনে বীজে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন রয়েছে যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে। তাই এটি ওজন কমাতেও ভালো কাজ করে।

ধনিয়া ভেজানো জলের উপকারিতা

ধনিয়া বীজ কিংবা পাতা শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না বরং এর রয়েছে নানা রকম ঔষধি গুন। সব মসলার কোন না কোন পুষ্টিগুণ থাকে। সেই সূত্র ধরেই ধনে আরো কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে। এতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ, ফাইবার, ভিটামিন বি ক্যারোটিন, পলিফেনালস ইত্যাদি ভেষজ গুণাবলী বিদ্যমান। এছাড়াও ধনে বীজ এবং পাতায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী। 

ধনিয়া শরীরের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও কিডনি, ইমিউনিটি, ডায়াবেটিস, রক্তস্রাবের মত সমস্যা দূর করতে সক্ষম। ধনিয়া ভেজানো জল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। চলুন জেনে নেই ধনিয়া ভেজানো জলের উপকারিতা গুলো-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ধনিয়া ভেজানো জল নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ফলে বিভিন্ন প্রকার সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

হজম শক্তির বৃদ্ধি করেঃ ধনিয়া ভেজানো জল হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। দুনিয়াতে নানা রকম পুষ্টিগুণ রয়েছে। যা পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ধনিয়া ভেজানো পানি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত ধনিয়া ভেজানো জল পান করুন।

বিষাক্ত পদার্থ নির্মূল করেঃ ধনিয়া ভেজানো পানি শরীর ডিটক্স করতে সহায়তা করে। ফলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। এ কারণেই সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।

আর্থ্রাইটিস এর সমস্যা দূর করেঃ আর্থ্রাইটিস এর ঘরোয়া চিকিৎসা হলো ধনিয়া ভেজানো জল। এতে আন্টি উপাদান রয়েছে যা আর্থ্রাইটিস এর সমস্যা দূর করতে পারে।

শরীরের তাপমাত্রা কমায়ঃ যাদের শরীর সবসময়ই গরম থাকে তারা নিয়মিত ধনিয়া ভেজানো জল পান করতে পারেন। এতে করে শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমে।

কিডনি সুস্থ রাখেঃ ধনিয়া ভেজানো জল কিডনি পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে ফলে কিডনি সুস্থ থাকে।

ধনে পাতার অপকারিতা

ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা জেনেছি। ধনেপাতা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে তা ক্ষতির কারণও হতে পারে। অতিরিক্ত ধনেপাতা লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে ফেলতে পারে।

অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে প্রেসার লো হয়ে যেতে পারে। সেজন্য বিশেষজ্ঞরা হাই প্রেসার হলে ধনেপাতা খেতে বলেন। অল্প পরিমাণে ধনেপাতা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়। কিন্তু ধনেপাতা অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। গর্ভবতী মা দের ধনেপাতা একটু হিসাব করে খাওয়া উচিত কারণ অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে গর্ভের ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

শ্বাসকষ্টের রোগীদের ধনেপাতা না খাওয়াই ভালো। ধনেপাতা খেলে ফুসফুসে অ্যাজমার সমস্যা দেখা দিতে পারে। শ্বাসকষ্টের রোগীরা যদি ধনেপাতা খায় তাহলে ছোট ছোট নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে বুকে ব্যথা হতে পারে। ধনেপাতা তে যে এসিডিক উপাদান রয়েছে তা সূর্য রশ্মিকে ত্বকে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।

অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে সূর্যের রশ্মি একেবারে ত্বকের ভিতর প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ভিটামিন কে এর ঘাটতি পড়তে পারে। যার ফলস্বরূপ ত্বকে ক্যান্সারও হতে পারে। ধনেপাতা এলার্জির সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।

টবে ধনিয়া পাতা চাষ পদ্ধতি

ধনেপাতা যেহেতু আমরা সবাই বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি তাই সবাই আমরা একে চাষ করতে চাই। কিন্তু যারা শহরে থাকি তারা জমিতে এটা চাষ করতে পারবোনা। যদি খুব সহজেই বারান্দায় বা ছাদে চাষ করা যায় তাহলে কেমন হয়। চলুন জেনে নেই তবে ধনিয়া পাতা চাষ পদ্ধতি।

উপযুক্ত সময়ঃ ধনিয়া চাষের উপযুক্ত সময় হল সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ আশ্বিন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত।

মাটি তৈরিঃ প্রায় সব ধরনের মাটিতে ধনেপাতা চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ মাটি এবং বেলে মাটি তে ধনেপাতা খুব ভালো চাষ হয়। কিন্তু ধনেপাতা অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারেনা। তাই তবে অবশ্যই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

বীজ বপনঃ ধনে বীজ বাজার থেকে নিয়ে আসার পরে একদিন রোদে শুকাতে হবে। তারপরে ২৪ ঘন্টা একটি পাতলা কাপড়ে জড়িয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তাহলে তাড়াতাড়ি গজাবে। তিন থেকে চার সেন্টিমিটার গভীরে বুনতে হবে এবং তারপর আবার মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তারপর এতে পানি সেচ দিতে হবে।

সার প্রয়োগঃ টবের মধ্যে পরিমাণ মতো ইউরিয়া, টি এস পি, এম পি এবং গোবর সার দিতে হবে।

পরিচর্যাঃ মাটি শুকিয়ে গেলে দু একদিন পরপর পানি দিতে হবে। গাছগুলো যাতে পাখিতে না খেয়ে নেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি পিঁপড়া লেগে থাকে তাহলে পিঁপড়া দমনের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাতা তোলার উপযুক্ত সময়ঃ গাছ যদি খুব ভালো হয় তাহলে পাতা তুলে পাতলা করতে হবে। বেশি বয়স হয়ে গেলে ধনেপাতা খেতে ভালো লাগেনা তাই মাঝারি বয়স হলেই পাতা তুলে খেতে হবে।

ধনে পাতার উপকারিতা

আমরা রোজ রোজ ধনেপাতা খেয়ে থাকি ধনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে না জেনেই। আমরা যদি ধনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানি তাহলেও হয়তো ধনেপাতা খাওয়ার পরিমাণ অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারি। ধনে পাতায় কি ভিটামিন আছে সেই সম্পর্কে আমরা জেনেছি। চলুন ধনেপাতার উপকারিতা গুলো জেনে নেই।

১. ধনেপাতায় কোলেস্টেরলের মাত্রা শূন্য, তাই ধনেপাতা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

২. ধনেপাতা ইনসুলিনের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে নিয়ে আসে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ধনেপাতা অনেক উপকারী।

৩. ধনেপাতা চোখের জন্য অনেক উপকারী এবং এতে বিদ্যমান অ্যান্টি সেপটিক মুখের আলসার নিরাময় করতে সক্ষম।

৪. ধনেপাতায় থাকা বিভিন্ন রকম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ম্যাঙ্গানিজ, এসকরবিক অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।

৫. আয়রন সমৃদ্ধ ধনেপাতা রক্তশূন্যতা রোধ করে। পিরিয়ড চলাকালীন রক্ত সঞ্চালন এ সহায়তা করে।

৬. ধনেপাতা তে বিদ্যমান এন্টি ইনফ্লামেটরি বাতের ব্যথা, হাড়ের ব্যথা এবং জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

৭. মস্তিষ্কের স্নায়ু সচল রাখতে ধনে পাতার ভূমিকা অপরিসীম। ধনেপাতা খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

৮.এনজাইমার রোগের জন্য ধনেপাতার ভিটামিন কে বেশ কার্যকরী।

৯. ধনেপাতা খেলে ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া কমে যায়। কারণ এতে এসেনশিয়াল ওয়েল রয়েছে যাতে অ্যান্টি রিউমেটিক এবং আন্টি আর্থ্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

১০. ধনেপাতা তে বিষাক্ততা রোধকারী এন্টিসেপটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। যা বিভিন্ন রকম ত্বকের অসুস্থতা যেমন একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা, ফাংগাল ইনফেকশন ইত্যাদি সারাতে সাহায্য করে।

১১. ধনেপাতায় এন্টি হিস্টামিন নামক উপাদান রয়েছে যা এলার্জি এর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

১২. ধনেপাতায় বিদ্যমান আন্টি মাইক্রোবিয়াল এন্টি ইনফেকসাস, ভিটামিন সি এবং আয়রন দুটি বসন্ত রোধ করতে পারে।

ধনেপাতায় কি ভিটামিন আছে এবং ধনে পাতার উপকারিতা জানলাম। আমরা যদি ধনেপাতা খাওয়ার অভ্যাস না থাকে তাহলে নিয়মিত ধনেপাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবো।

শেষ কথা

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পর্যালোচনা করে এটি বোঝা যায় যে, ধনেপাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটোই রয়েছে। ধনেপাতা যেমন উপকারী ধনের বীজ ঠিক ততটাই উপকারি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয় কিন্তু সেটা খুবই নগণ্য। আশা করছি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি ধনেপাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

আমাদের লেখা আর্টিকেল টি যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। কারন এখানে নিত্য নতুন বিষয়ে নিয়মিত আর্টিকেল লিখে প্রকাশ করা হয়। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url