সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় - সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়
একজন সিজারিয়ান মায়ের সিজারের সেলাই শুকানোর উপায়, সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়, এ বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় নিয়ে। আপনি যদি জানতে চান সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় কি তাহলে অবশ্যই আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বর্তমান সময়ে সিজারের হার অনেকাংশে বেড়ে গেছে। সিজারের পরে সিজারিয়ান মাকে অবশ্যই নিজের কিছু যত্ন নেওয়া উচিত। তা নাহলে সিজারিয়ান মাকে শুধু শুধুই অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। চলুন এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক।
ভূমিকা
সিজার শব্দটি আমাদের কাছে এখন খুবই পরিচিত একটি শব্দ। সিজারের পরে একজন মায়ের সঠিক যত্ন না দেওয়া হলে সিজারের জায়গাতে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একজন সিজারিয়ান মায়ের অবশ্যই জানা উচিত সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় সম্পর্কে। কারণ সেলাই যদি ভালোভাবে না শুকায় তাহলে সিজারিয়ান মাকে অহেতুক কষ্ট ভোগ করতে হবে।
সিজার কিংবা অন্য কোন অপারেশন হোক না কেন তারপরে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতে সঠিক সচেতনতা এবং যত্ন না পেলে জটিল যেকোনো সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা সিজারের সেলাই সম্পর্কিত সকল বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এর মধ্যে প্রধান বিষয়বস্তু হলো সিজারের সেলাই শুকানোর উপায়, সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়, ইনফেকশন হলে করনীয় কি, এই সকল বিষয়গুলো থাকছে সুতরাং এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
সিজারের সেলাই শুকানোর উপায়
সিজার শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সিজারের পরে যে সেলাই দেয়া হয় তা নিয়ে অনেক মা বিরম্বনার শিকার হন। এর একমাত্র কারণ হলো সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় তিনি জানেন না। তাই আগের মতোই স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু করতে থাকেন। যার কারণে সেলাই শুকানোর বদলে সেখানে ইনফেকশন হয়ে যায়। চলুন জেনে নেই সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় সম্পর্কে-
কাটা স্থান শুকনো রাখাঃ অবশ্যই সেলাই এর জায়গাটি সম্পূর্ণরূপে শুকনো রাখতে হবে। কারণ কাটা স্থান যদি শুকনো থাকে তাহলে সেখানে ব্যথা কিংবা ইনফেকশন হওয়ার ভয় থাকে না। এর ফলে কাটা স্থানটি খুব দ্রুত শুকাবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামঃ অন্যান্য যেকোনো অপারেশনের মতো সিজার ও একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। তাই সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসার জন্য অবশ্যই আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে। কাটা স্থানে শুকানোর ক্ষেত্রে আপনাকে সামগ্রিকভাবে সেরে উঠতে হবে সবার আগে। তাই যখনই সুযোগ পাবেন তখনই অবশ্যই বিশ্রাম নিবেন।
প্রয়োজনে এক্ষেত্রে পরিবারের বাকি সদস্যদের সহযোগিতা নিন। নিজের বাচ্চাকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি নিজে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিন।
শরীর সচল রাখাঃ শরীর যত সক্রিয় থাকে শরীরের রক্ত প্রবাহ তত ভালোভাবে হয়। কাটা স্থানে যদি রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় তাহলে তা খুব দ্রুত শুকায়। এক্ষেত্রে আপনি ঘরে টুকিটাকি কাজ করতে পারেন। হালকা কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। প্রতিদিন একটু একটু করে হাঁটতে পারেন। এতে করে রক্ত জমাট বাঁধার মত প্রাণঘাতী জটিলতা থেকে মুক্ত থাকবেন।
তবে অবশ্যই এটি খেয়াল রাখতে হবে সিজারের পরে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো রকম ভারী কাজ করা যাবে না। সিজারের পরপর হাঁটাচলা সাঁতার এবং এ ধরনের হালকা একটিভিটিস গুলো আপনি করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামও করতে পারেন এতে শরীর সক্রিয় থাকে।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়াঃ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিকর এবং সুষম খাবার খাওয়া আমাদের সকলের জন্যই অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে সিজারের পরে বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার, ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে হবে। দুধ, ডিম, মুরগি, মাছ এর পাশাপাশি আইরন ফলিক এসিড এগুলো সিজারের পরে অন্ততপক্ষে তিন মাস খেতে পারেন। এক্ষেত্রে সিজারের জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি শুকাবে।
বেশি বেশি পানি পান করাঃ অপারেশনের পরে অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এই কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পেটে চাপ পড়ে এবং কাটা জায়গায় শুকাতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে বেশি বেশি পানি পান করুন। এতে করে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার, ফলমূল এবং শাকসবজি খান।
এই নিয়ম গুলো যদি আপনি সঠিকভাবে পালন করতে পারেন তাহলে সিজারের সেলাই শুকাতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে না। আপনি খুব তাড়াতাড়ি আপনার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।
সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়
বর্তমানে আমাদের দেশে নরমাল ডেলিভারির তুলনায় সিজারিয়ান ডেলিভারি বেশি হয়। সিজারের ডেলিভারি যেহেতু বেশি হয় তাই সিজারের পর ইনফেকশন কিন্তু কম হয় না। আপনি কি জানেন সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রতিবছর ও 32 লক্ষ মা সন্তান জন্ম দেন। তার মধ্যে ৪২ শতাংশ সিজারের মাধ্যমে।
এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন রকম সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অপারেশন পুনরায় করতে হয়। চলুন জেনে নেই সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়। আমরা জানি ইনফেকশন সাধারণত ময়লা নোংরা থেকে হয়ে থাকে যেমন -
- হাসপাতালের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর থাকলে
- সিজারের সময় জিনিসপত্র জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার না করলে
- সিজারের রুম সঠিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করলে
- রোগীর পোশাক যদি পরিষ্কার না থাকে
- রোগীকে সিজার কক্ষে নেওয়ার পরে আত্মীয়-স্বজন দেখা করলে
- রোগীর যদি পুষ্টির অভাব হয়
- সিজারের সময় ব্যবহৃত পানি জীবাণুমুক্ত না হলে
এছাড়াও সিজারের পরে কিছুটা কালেকশন শরীরের ভিতর যাই, রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে ইনফেকশন হতে পারে। হাসপাতালের এক বেড থেকে অন্য বেডের দূরত্ব খুবই কম থাকে। একসাথে অনেক রোগী থাকে একই রুমে। তাই হাঁচি, কাশির মাধ্যমেও সংক্রমণ ছাড়াতে পারে। এছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সিজারর পরে সঠিকভাবে রক্তনালী বন্ধ না করা হয় তাহলে ইনফেকশন হতে পারে।
সিজারের পর ইনফেকশন এর লক্ষণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ তেমন ভাবে দেখা দেয় না। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে সিজারের পর মাত্র তিন থেকে পাঁচ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেয়। কিন্তু সিজারের পর ইনফেকশন সম্পর্কে যদি সঠিক ধারণা থাকে তাহলে এই ইনফেকশন খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন। চলুন জেনে নেই সিজারের পর ইনফেকশন এর লক্ষণ গুলো কি কি-
- কাটা জায়গার চারপাশে লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে
- ক্ষতস্থান থেকে দুর্গন্ধযুক্ত রস পড়তে পারে
- কাটা জায়গায় প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে
- জ্বর হতে পারে
- প্রসবের সময় কষ্ট হতে পারে
- মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়তে পারে বা দুর্গন্ধযুক্ত তরল পদার্থ বের হয়ে আসতে পারে
- সমস্ত শরীর অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে পারে
সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়
সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় কি এ বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা। আমি এবার আপনাদের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। বর্তমানে বাংলাদেশে সিজারের হার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এর ফলে অনেক মা মৃত্যুর মুখে ঝুকে পড়ছেন। বিশেষ করে সিজারের পর ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক মায়ের সমস্যা হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় গুলো কি।
- যদি ইনফেকশন হয় তাহলে ক্ষতস্থানে ভায়োডিন অথবা ডেটল দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। কোনভাবেই ক্ষতস্থানে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না।
- ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন লেবু, কমলালেবু ইত্যাদি শুকাতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে। কারণ পানি কম খেলে প্রস্রাব কম হয়। অবশ্যই প্রসাবের পরিমাণটি ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরী।
- ক্ষতস্থানে কোন প্রকার সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না। এগুলো ব্যবহার করলে ইনফেকশন আরও দ্বিগুণ হারে বাড়তে শুরু করবে।
- খেয়াল রাখতে হবে ক্ষতস্থান যেন ঘেমে না যায়। কারণ ভিজে থাকলে ইনফেকশন বাড়তে পারে।
সবশেষে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার যা বলে সেটা মেনে চলতে হবে এবং ওষুধ কোনভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। তাহলেই ইনফেকশনের হাত থেকে একজন প্রসূতি মা নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। আশা করছি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম
সিজারের পরে পেটের মেদ বা চর্বি কমিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অনেকটা বেশি সময় লাগে। সেজন্য আমরা অনেকেই বেল ব্যবহারের চিন্তা করি। আবার সিজারের পরে হাটাচলা করলে ক্ষত স্থানে ঝাকি লেগে ব্যথা হতে পারে। সে জন্য বেল্ট ব্যবহার করে থাকি। বেল্ট ব্যবহারের নানারকম সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। চলুন জেনে নেই সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম কি-
সিজারের পরে এনেস্থেশিয়ার প্রভাব কেটে গেলে বেল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। বেল্ট ব্যবহার করলে পেটের মেদ কমে। অবশ্যই সাইজ অনুসারে সঠিক বেল্ট পড়তে হবে। কোনভাবেই টাইট করে পড়া যাবে না।
অনেকেই মনে করেন বেল্ট ব্যবহার করলে কাটা জায়গাতে চাপ পড়ে। এটি একটি ভুল ধারণা। আপনি যদি সাইজ অনুযায়ী বেল্ট না পরে ছোট বেল্ট পরেন তাহলে কষ্ট হবে এটি স্বাভাবিক। কিন্তু সঠিক সাইজের বেল্ট হলে অপারেশনের জায়গায় ব্যথা অনেক অংশে কম হয়।
অনেকেই মনে করেন সিজারের পরে সব সময় বেল্ট পড়ে থাকা উচিত। এটি ঠিক না। যখন হাঁটাচলা করবে তখন বেল্ট ব্যবহার করতে হবে। যাতে কাটা জায়গাটিতে ব্যথা না লাগে। শোয়ার সময় অবশ্যই বেল্ট খুলে শোয়া উচিত। কারণ শুয়ে থাকা অবস্থায় বেকায়দায় পড়লে পেটে বাজে রকম ভাবে চাপ পড়তে পারে।
সিজারের পরে এক বা দুই সপ্তাহ বেল্ট ব্যবহার করলে যথেষ্ট। বেল্ট সাধারণত কাটা জায়গা ঝাকুনির হাত থেকে রক্ষা করে।
ব্যাক সাপোর্ট রয়েছে এমন বেল্ট কেনা উচিত। কম দামি বেল্ট কিনে ভোগান্তির শিকার হবেন না।
সিজারের পর ড্রেসিং
সিজারের পরে একজন মাকে বাসায় নিয়ে আসার পরে তার কাটা জায়গায় ড্রেসিং করা অত্যন্ত জরুরী। সিজারের পর ড্রেসিং করার পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। ভুলভাবে ড্রেসিং করার ফলে কাঁটা জায়গায় ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। চলুন জেনে নেই সঠিকভাবে ড্রেসিং করার উপায় কি।
প্রথমেই হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে নিতে হবে যদি গ্লাভস না থাকে তাহলে স্পিরিট দিয়ে হাত ভালো করে ময়েশ্চারাইজ করে নিতে হবে।
একটি গজ কাপড়ের সাহায্যে ডক্টর স্প্রিট দিয়ে কাটা জায়গাটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
তারপর গজ কাপড় হাতে নিয়ে কাঁটা জায়গার উপরে তা রাউন্ড করে করে ঘুরাতে হবে। এতে করে
সেলাইয়ের মার্শাল এলাকায় যদি কোন কালেকশন থেকে থাকে তা বের হয়ে যাবে।
ভায়োটিন অথবা অন্য কোন জীবাণু নাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ডাক্তার যেই ক্রিম বা অয়েনমেন্ট সাজেস্ট করেছিল তা অ্যাপ্লাই করতে হবে।
সিজারের পর খাবার তালিকা
সিজারের পরে স্বাভাবিকভাবে আপনি সকল খাবার খেতে পারবেন। খাবার নিয়ে তেমন কোন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় না। তবে আপনার শরীরে সিজারের পরে কিছু ঘাটতি পরে এবং সেলাই শুকানোর একটা বিষয় থাকে তাই দ্রুত সেরে ওঠার জন্য আপনার একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার তালিকা জরুরী। চলুন জেনে নেই সিজারের পর খাবার তালিকা কেমন হতে পারে।
ভিটামিন সি যুক্ত খাবার ক্ষত সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে লেবু, কমলালেবু, আমলকি, পেয়ারা এগুলো রয়েছে। সাথে ডিম, মাছ, ডাল ইত্যাদি প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে পারেন। আবার কোষ্ঠকাঠিন্য ও সর্দি কাশি হলে ক্ষতস্থান শুকাতে বেশি সময় লাগে। এই সংক্রান্ত ঝামেলা যাতে না হয় সে জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, লাল চালের ভাত ইত্যাদি খেতে হবে। যেসব খাবারে এলার্জি আছে সেগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ এলার্জির সমস্যা হলে সেলাইয়ের কাছে চুলকানি হতে পারে। কিছু কিছু খাবার হজম হতে বেশি সময় লাগে এবং পেট ফেপে যায়। এতে করে অস্বস্তি বোধ হয়। তাই সিজারের পরে এই সবগুলো খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। যার মধ্যে রয়েছে-
- ভাজাপোড়া
- কোমল পানীয়
- চা এবং কফি জাতীয় খাবার
- অ্যালকোহল জাতীয় খাবার
- যে সকল খাবারে পেট ফেঁপে যেতে পারে এমন খাবার
বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, ডাল, পেঁয়াজ, ঢেরস এগুলো থেকেও সমস্যা হতে পারে। যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এই সকল খাবার গুলো এড়িয়ে চলায় ভালো। কোন একটি খাবার যদি আমাদের খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় তাহলে তার পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরে অভাব দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
সিজারের পর শোয়ার নিয়ম
সিজারের সেলাই শুকানোর নিয়ম, ইনফেকশন কেন হয়, এর করনীয় কি, এগুলা সম্পর্কে আমরা জানলাম। এখন আসি একজন মায়ের ঘুমের ব্যাপারে। গর্ভবতী অবস্থায় এবং সন্তান জন্মদানের পরে একজন মায়ের শরীরে হরমোনের মাত্রা অনেকটা বৃদ্ধি পায়। যার কারণে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারেন না এবং ঘুমাতে অসুবিধা হয়।সিজারের পরে যন্ত্রণার কারনেও মায়েদের অবসাদ, অনিদ্রা এবং হতাশা গ্রস্থ হয়ে পারে।
সিজারের পরে ব্যথা কমাতে সকল মাকেই ডাক্তাররা পেইন কিলার দিয়ে থাকেন। যা খেলে ঘুম ভালো হয়। কিন্তু শুধু পেইনকিলার খেলে হয় না, সঠিক পজিশনে ঘুমালে মায়েদের সঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে সুবিধা হয়। ঘুমের পজিশন যদি ভালো হয় তাহলে পেটের পেসি গুলোর উপর চাপ কম লাগে। তাহলে ঘুম ভালো হয়। চলুন জেনে নেই সিজারের পর শোয়ার নিয়ম।
সোজা হয়ে শোয়াঃ সিজারের পরে সোজা হয়ে শুতেই মায়েরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এতে সেলাইয়ে কোনরকম চাপ পড়ে না। হাঁটুর নিচে একটি বালিশ দিয়ে এভাবে ঘুমাতে পারেন। কয়েক সপ্তাহ পর একটু এদিক ওদিক করার চেষ্টা করতে হবে।
পাশ ফিরে শোয়াঃ যদি বাঁ দিকে ঘুরে শোয়া হয় তাহলে রক্ত চলাচল ভালো হয়। এক্ষেত্রে পেটের নিচে সাপোর্ট এর জন্য অবশ্যই একটি বালিশ দিতে হবে। এভাবে শুলে কনুই এবং হাতের উপর ভর দিয়ে ওঠা যায় এটি বড় সুবিধা।
পিঠ উঁচু করেঃ সিজারের পর বালিশ সব থেকে বেশি আরাম দেয়। পিঠের নিচে একটি নরম বালিশ দিয়ে ঘুমালে শ্বাস নিতে সুবিধা হয়।
আরাম চেয়ারঃ অনেক মা আছেন যারা আরাম চেয়ারে ঘুমাতে ভালোবাসেন। এতে বিছানার মত না হলেও এভাবে ঘুমানো অনেকে আরাম দায়ক।
সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয়
সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয় এ ব্যাপারটি অনেকেই জানেন না। এটি না জানার ফলে অনেকেই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন। কিন্তু এই সিজারের পর ব্লিডিং নিয়ে দুশ্চিন্ত করার তেমন কিছুই নেই। অপারেশনের পরে স্বাভাবিকভাবে যোনিপথ দিয়ে কিছুটা রক্ত যায়। প্রায় এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত এমন রক্ত কিংবা স্রাব যেতে পারে।
এর সাথে সাথে রক্তের দলা যেতে পারে এবং পেট কামড়াতে পারে। এজন্য সাধারণত সেনেটারি প্যাড ব্যবহার করা হয়। এ সময় যাতে ইনফেকশন না হয় সেজন্য যোনিপথে টেম্পল ব্যবহার করতে পারেন এবং সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু অবশ্যই ভারী রক্তপাত থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রতি ঘন্টায় যদি দুইটি প্যাড সম্পূর্ণরূপে ভিজে যায় আর এভাবে যদি দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রক্তপাত হতে থাকে তাহলে তাকে ভারী রক্তপাত বলে। যদি ভারী রক্তপাতের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সিজারের পর কাশি হলে করণীয়
সিজারের পরে অনেকেই কাশির মতো সমস্যাতে ভোগে। সিজারের পরে কাশি রক্ত জমাট বাধার মত মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। যদি সিজারের পরে কাশি অথবা শ্বাসকষ্ট হয় সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে যদি দেখা যায় যে এটি সাধারণ কাশি হয়েছে তাহলে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। কাশি হলে বাড়িতে মধু খেতে পারেন।
কারণ মধু কাশি উপশম করতে ভূমিকা রাখে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে কাশি দেওয়ার সময় পেতে হালকা করে বালিশ চেপে ধরবেন। এতে করে পেটে তুলনামূলকভাবে কম ঝাকি লাগবে এবং কষ্ট কম হবে। আস্তে আস্তে সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে।
সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে
সিজারের পরে কয়েকদিন অনেক বেশি ব্যাথা থাকে এবং অস্বস্তি বোধ হয়। এটি খুবই স্বাভাবিক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেউ সিজারের পরে একটু লম্বা সময় ব্যথা অনুভব করতে পারে। এই ব্যথা এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। যদি একটানা ব্যথা হয় কিংবা জ্বর হয় অথবা ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শেষ কথা
আপনি যদি আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় সম্পর্কে লিখা হয়েছে। সাথে সাথে আমরা সিজার পরবর্তী আরো নানারকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে সিজারের পরে একজন মায়ের বাড়তি কিছু যত্নের প্রয়োজন।
এতে করে একজন মা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। খুব সতর্কতার সাথে সিজার পরবর্তী কয়েকটি দিন কাটানো উচিত। এতে করে ইনফেকশনের কোন ভয় থাকে না। আশা করছি আপনি আপনার প্রত্যাশিত মূল্যবান তথ্যটি জানতে পেরেছেন।
আমাদের লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন কারণ। এখানে প্রতিদিন নিত্যনতুন বিষয়ে আর্টিকেল লিখে প্রকাশ করা হয়। ধন্যবাদ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url