চা পাতা দিয়ে চুলের কালার
চা পান করা সাস্থের জন্য উপকারি। তবে অনেকেরই এটা অজানা যে, চা পাতা দিয়ে চুলের কালার ও চা পাতা দিয়ে ত্বকের যত্ন খুব সহজেই নেয়া যাই। চা পাতায় বিভিন্ন উপকরণ রয়েছে যা ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারি। কিন্তু আমাদের অনেকেরই অজানা এটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয়।আজ আমরা চা পাতার বিভিন্ন রকমের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি ভাবে চা পাতা আমরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারি।
ভূমিকা
চাএমন একটা পানীয় যা শরীর ও মন দুটোই ফুরফুরে রাখে। এর পাশাপাশি ত্বক ও চুলের জন্য চা পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। চা পাতা দিয়ে চুলের কালার,ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি করে বয়সের ছাপ কমানো ইত্যাদি অনেক প্রকার কাজ করে থাকে।।
চা পাতা দিয়ে চুল লম্বা করার উপায়
চা পাতা দিয়ে চুল লম্বা করার উপায় অনেক রয়েছে। স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও কোমল চুল সকলের প্রত্যাশিত। চুলের যত্নে কত কিছুই তো ব্যবহার করা হয় কিন্তু তাই বলে চা। চুলের যত্নে চা পাতা বহু গাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চায়ের লিখার ব্যবহার করা হয় চুলের গোড়া শক্ত রাখার জন্য। চা পাতা আমাদের চুলের জন্য ভীষণ উপকারি। খুব সহজেই চা পাতা দিয়ে চুলের কালার করা যাই। চুলের গোরা শক্ত ও লম্বা করতে চা পাতা সাহায্য করে। চা পাতায় রয়েছে এন্টিজেন্ট, যা চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।
চা তে রয়েছে প্যান্থেনল ভিটামিন সি এবং ই।যা চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। কোন ধরনের চা কেমন চুলের জন্য ব্যবহার করা উচিত চলুন এবার সেগুলো জানা যাক-
সবুজ চা বা গ্রিন টিঃগ্রিন টি আনঅক্সিডাইস্ট চা নামেও পরিচিত। ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদের পাতা থেকে এটা তৈরি করা হয়। প্রথমে পাতা ছিড়ে তারপর সামান্য শুকিয়ে নেওয়া হয়। এতে ক্লোরোফিল পলিফেনাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে।ফ্লাভোনয়েড নামের একটি উপাদান চুল গজাতে এবং চুলের ভিত্তিতে সহায়তা করে। অন্যান্য যে কোন উপাদানের চেয়ে গ্রিন টি এর নির্যাস চুলের বৃদ্ধিতে অনেক বেশি অবদান রাখে।
সাধারণ চা বা ব্ল্যাক টিঃব্ল্যাক টি তে টেনিন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। যা চুলের রং কে উজ্জ্বল ও তীব্র করতে পারে। সাধারণ চা পাতা দিয়ে চুলের কালার করা খুব সহজ। এছাড়াও ব্ল্যাকটিতে ক্যাফিন রয়েছে যা এন্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া এবং চুল পড়া রোধ করে।
রোজমেরি চাঃরোজমেরি চা তে মূলত ছত্রাক বিরোধী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। রোজমেরেজ চা মাথার ত্বক পরিস্কার এবং খুশকি মুক্ত রাখে।
এছাড়াও বিভিন্ন রকমের ভেষজ চার রয়েছে যেগুলো চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।চা পাতা দিয়ে চুল লম্বা করার উপায় গুলো জানলে এবং ঠিক ভাবে ব্যাবহার করলে ভাল ফল পেতে পারি।
চা পাতা দিয়ে চুলের কালার
চা পাতা দিয়ে চুলের কালার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। যাদের চুলের রং ধূসর বর্ণের কিংবা অল্পতেই চুল পেকে যায় তাদের জন্য চা উপকারি একটি উপাদান। যা ব্যবহার করে খুব সহজেই চুল কুচকুচে কালো করা সম্ভব। চা পাতা দিয়ে চুলের কালার করা খুবই সহজ। অনেক সময় দেখা যায় চুলে বারবার রং করানোর ফলেও চুলের সমস্যা সমাধান হয় না। পাকা চুল রং করার পরে এক মাস হতে না হতেই আবার সাদা রং হয়ে যায়। এক্ষেত্রে চায়ের ব্যবহার আপনাকে দিতে পারে একটি স্থায়ী সমাধান।
চায়ের মধ্যে যে টেনিক এসিড বিদ্যমান এতে চুলের রংকে ধরে রাখে।পাকা চুলের সমস্যার সমাধান করে।তবে চা পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে যেগুলো মেনে ব্যবহার করলেই আশাররুপ ফলাফল পাওয়া যায়। চা ব্যবহারের জন্য প্রথমেই যাকে ফুটিয়ে লিকার বানিয়ে নিতে হয়। চলুন জেনে নেই কিভাবে চা পাতা দিয়ে চুলের কালার করবেন।
১। চা বানিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে।এরপর এই চা ভালো করে চুলে লাগিয়ে নিতে হবে।অন্তত 30 মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখতে হবে।তারপর এটি ঠান্ডা পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এটি হচ্ছে সাধারণ চা ব্যবহারের একটি সহজ পদ্ধতি।
২। চায়ের সাথে কফি মিশিয়েও চুলের জন্য একটি প্যাক তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে ফুটন্ত চায়ের সাথে কয়েক চামচ কফির গুঁড়া মিশিয়ে নিতে হয় তারপর পাঁচ মিনিট ফুটাতে হবে। এবার ঠান্ডা হলে একটি ব্রাশের সাহায্যে তা চুলে লাগাতে হবে।15 থেকে 20 মিনিট লাগিয়ে রাখার পর তা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩। চায়ের লিকার কড়া করে বানাতে হবে। বানানোর লিকার খুব ভালো করে চুলে ঢালতে হবে।15-20 মিনিট পরে আবারো লিকার চা চুলে ঢালতে হবে।এভাবে দুই থেকে তিন বার 15-20 মিনিট পর পর চুলে লিকার ঢালতে হবে।তারপর সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৪। চায়ের লিকার বানানোর সময় তাতে কিছু পরিমাণ তুলসী পাতা মিশিয়ে তারপর এটি ভালোভাবে ফোটাতে হবে।বানানোর লিকার ঠান্ডা হতে দিতে হবে ।ঠান্ডা হয়ে গেলে এতে অল্প পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে।এটি ব্যবহার করলে পাকা চুলের সমস্যা-নিমেষে দূর করা সম্ভব।
উপরোক্ত নিয়মগুলো মানলে আপনিও খুব সহজেই চা পাতা দিয়ে চুলের কালার করে নিতে পারবেন যা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।
চা পাতা চুলে দিলে কি হয়
চা পাতা চুলে দিলে কি হয় তা অনেকেরই অজানা। চা পাতা চুলে দিলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। পাকা চুল এ সুন্দর একটা রঙ হয়। চুল অনেক নরম ও সিল্কি হয়। চুলের বৃদ্ধি ও উজ্জলতা বারাতে সাহায্য করে। চলুন আরো ভালোভাবে জানি চা পাতা চুলে দিলে কি হয়।
চুলের প্রাণ ফিরে আসেঃ অনেকের চুলের আগায় ফাটল ধরে এবং চুল ভেঙে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ব্ল্যাকটি ব্যবহার করা যেতে পারে।যাদের চুল উসকো খুসখু হয়ে থাকে অর্থাৎ উজ্জ্বলতা একদম কম তারা এই ব্ল্যাকটি এর ব্যবহার করতে পারে।দুই ক্ষেত্রেই চায়ের লিকার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ চায়ের লিকার দিয়ে কন্ডিশনার বানানো যায় যা চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।চা পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে তারপর ঠান্ডা করে ছেকে লেবুর রস একসাথে করে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা যায় ।নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল অনেক ঝলমলে হয়।
খুশকি দূর করেঃ বিশেষ করে শীতকালে সবার চুলেই খুশকি দেখা যায়।এই খুশকির সমস্যার সমাধান করতে নিয়মিত চা পাতার ব্যবহার করা যেতে পারে।ব্যবহার করা চা-পাতা না ফেলে সেগুলো পরিষ্কার পানি দিয়ে পরিষ্কার করে চুলের গোড়ায় গোড়ায় ব্যবহার করলে চুল খুশকি মুক্ত হয়।
চুলের ঝরে পড়া রোধ করেঃ চুলের ঝরে পড়া ও চুলের বৃদ্ধিতে চা পাতার লিকার কাজ করে। চায়ের লিকার ভালোভাবে বানিয়ে ঠান্ডা করে এই পানি চুল ও মাথার তালুতে স্প্রে করলে চুল পড়া কমে।এটা নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি ও ঘটে।
অল্প বয়সের চুল পাকা রোধ করেঃ এমন অনেকেই আছে যাদের চুল খুব অল্প বয়সেই পেকে যায়।এই পাকা চুল থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়ের।লিকার ব্যবহার করতে পারেন। পাকা চুলের কালো রং পেতে চা পাতার লিকারের সাথে হেনা রস ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। চায়ের লিকার ও হেনার রসের এই প্যাক বানিয়ে অন্তত 30 মিনিট চুলের লাগিয়ে রাখতে যায়।চুল শুকিয়ে যাওয়ার পর তা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চা পাতা দিয়ে ত্বকের যত্ন
চা এর ব্যাবহার ত্বকে লাবণ্য নিয়ে আসে। চা এ থাকা বিভিন্ন উপাদান যা ত্বকের যত্নে অবদান রাখে। চা পাতা দিয়ে ত্বকের যত্ন নিতে টোনার বানিয়ে খুব সহজে মুখে লাগানো যায়। চোখের নিচের কাল দাগ, বলিরেখা দূর করতে চা ভীষণ উপকারি। আন্টি অক্সিডেন্ট ও এন টি ইনফ্লামেটরি এই সকল উপাদানের সমাহার হল চা।যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে। গ্রিন টি ব্যবহার করলে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই চা পাতা দিয়ে ত্বকের যত্ন নিলে কি কি উপকার পেতে পারি।
ব্রণের সমাধানঃ চায়ের লিকার ,কাঁচা হলুদ ও টমেটোর পেস্ট দিয়ে একসাথে একটি প্যাক তৈরি করতে হবে।এই ফেসপ্যাক টি মুখে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং ব্রণের সমস্যার সমাধান হয়।
চা-পাতার মাস্ক ব্যবহারঃ পাতা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে।তারপরে এটি ব্লেন্ড করে মাস্ক হিসেবে মুখে লাগাতে হবে। 15-20 মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এন্টিঅক্সিডেন্ট নামক একটি উপাদান চায়ের মধ্যে থাকে যা ত্বকে পুষ্টি প্রদান করে। সেজন্য ত্বক পরিষ্কার রাখতে এই মাস্ক অত্যন্ত উপকারী।
ঠোঁটের আদ্রতা রক্ষা করেঃ ঠোঁটের রুক্ষতা শুষ্কতা দূর করার জন্য গ্রিন টি এর একটি ব্যাগ হলেই চলে। হালকা গরম পানিতে ব্যাগ টি ডুবিয়ে ঠোঁটের চেপে ধরতে হয়।এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে শুষ্ক ভাব অনেকটাই কমে যায়।এতে করে ঠোঁট অনেকটাই নরম থাকে।
ত্বকের পড়া ভাব দূর করেঃ ত্বকের ভাঁজ পড়া বা পোড়া ভাব কমানোর জন্য চায়ের লিকার ব্যবহার করা যায়।এর জন্য ঠান্ডা করা লিকারে টাওয়েল ভিজিয়ে নিয়ে মুখে লাগাতে হয়। ট্যানিক এসিড ত্বকের কালো ভাব দূর করতে সাহায্য করে। যাদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এলার্জি কিংবা জ্বালা করে তারা চা-পাতা মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে করে অনেকটাই উপকৃত হবেন।
চোখের ফোলা ভাব দূর করেঃ অনেকের রাতে বেশি ঘুমানোর ফলে কিংবা ঘুম না হলে চোখ ফুলে যায় কিংবা চোখের নিচে কালো দাগ পরে।চায়ে থাকা ট্যানিক ও ক্যাফেন এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। গ্রিন টি এর ব্যবহার করা ব্যাগ দিয়ে ফেলে না দিয়ে ১০ মিনিট চোখের উপরে রাখলে এই সমস্যার সমাধান হই।এটি রোজ ব্যবহার করলে চোখের ফোলা ভাব কমে এবং ডার্ক সার্কেল দূর হয়।
লেখকের বক্তব্য
আমরা এতক্ষন ত্বক ও চুলের যত্নের চা পাতার বিভিন্ন রকমের ব্যবহার বিশেষ করে চা পাতা দিয়ে চুলের কালার কিভাবে করবেন এই নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করছি আমার এই তথ্যবহুল লেখাটি থেকে আপনারা চা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।
যদি আমার এই লেখাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতজনদের কাছে লেখাটি শেয়ার করবেন।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url