নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় বিস্তারিত জানুন
নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় এই বিষয়ে জানার জন্য আমরা অনেকেই google এ সার্চ করে থাকি। নাকের ভিতর মিউকাস আবরণ আছে। যা এলার্জির কারণে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রূপে নাকের পলিপাস দেখা দেয়। আজকে আমরা নাকের পলিপাস হলে করণীয় কি এবং কেন হয় এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এলার্জির ফলে হাঁচি, সর্দি, কাসি, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এর থেকেই সাধারণত নাকে পলিপাস হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
নাকে এলার্জির কারণে সাধারণত পলিপাসের সমস্যা হয়ে থাকে। ধুলাবালি বা ধোওয়ার কারণে কারণে এ ধরনের সমস্যা হয়। নাকের ভিতরে যে মাংস পেষি রয়েছে তাতে ইনফেকশন হলে তা পানির মত হয়ে আস্তে আস্তে ফুলে শেষ পর্যন্ত পলিপাস আকার ধারণ করে। কারো কারো ক্ষেত্রে উভয় নাকে এবং অনেকের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সাইনাস জুড়ে পলিপাস তৈরি হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের নাকে এলার্জি রয়েছে তাদের অনেকেরই হাঁপানিরও সমস্যা রয়েছে। হাঁপানি রোগীদের মধ্যে ৫৫ থেকে ৭০ শতাংশ লোকের নাকের এলার্জি থাকে। পলিপ সাধারণত সাধারণ সাদা রঙের হয় এবং আকৃতি আঙ্গুর ফলের মত। এটিতে কোন কিছুতে দিয়ে স্পর্শ করলে বোঝা যায় না। টার্মিনেট একটু লালচে কালারের হয়। এছাড়াও নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয়?
নাকে পলিপাস হয়েছে কি-না, এটা জানার জন্য আগে জানতে হবে নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয়। এই সমস্যা বা উপসর্গগুলো জানা থাকলে আমরা নাকের পলিপাস সম্পর্কে সচেতন হতে পারব। নাক দিয়ে পানি পড়া এবং নাক বন্ধ হয়ে থাকা প্রধান সমস্যা। ধুলাবালি, রাসায়নিক পদার্থ এবং ধোয়া যেখানে বেশি সেখানে কম যাওয়াই ভালো।কারণ নাকের মধ্যে এগুলো প্রবেশ করলে বেশি অসুস্থ বোধ হয়। এই কারণে সংক্রমণ অতিরিক্ত বেশি দেখা যায়।
যদি একটানা ১২ সপ্তাহের বেশি নাক বন্ধ থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে পলিপাস হতে পারে। পলিপাস গুলো ছোট এবং নরম অবস্থায় তেমন কোনো সমস্যা করে না। কিন্তু যদি পলিপগুলো্র সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যায় এবং আকারে অনেকটাই বড় হয় তাহলে এগুলো নাকের প্রকোষ্ঠ কে বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় তার মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে অতিরিক্ত ঝুঁকি রয়েছে।
- প্রচুর মাথা ব্যথা হয় কিন্তু প্রথম দিকে হালকা থাকে
- প্রায় সব সময় নাক বন্ধ হয়ে থাকে
- নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে
- নাকে কোন গন্ধ পাওয়া যায় না
- খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না
- নাক বন্ধ থাকার জন্য নাক ডাকার সমস্যা হয়
- সাইনাসের মাথাব্যথা হয়
- কপালে -মুখে চাপের অনুভূতি হয় অনেক ক্ষেত্রে নাক থেকে রক্ত পড়ে
- মুখের উপরের চোয়ালে ব্যথা হয় এবং এটি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে
নাকের পলিপাস হলে করনীয় কি
নাকের সাধারণত দুই ধরনের পলিপ থাকে। একটি নাকের একপাশে বন্ধ করে রাখে এবং অন্যটি নাকের দুই পাশেই বন্ধ করে রাখে। নাকের দুই পাশে কিছু মাংসপিণ্ড থাকে এগুলোকে টার্মিনেট বলে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ এগুলোকেই পলিপ হিসেবে ধরে নেই। এগুলো আসলে পলিক নয়। পলিপ হল দুই ধরনের। যেগুলোর নাকের একপাশে হয় সেগুলোকে এন্ট্রোকোনাল পলিপ বলা হয়।
আরো পড়ুনঃ শিশুদের টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা
অপারেশন ছাড়া সাধারণত এর কোন মেডিকেল ট্রিটমেন্ট হয় না। আর যদি দুই পাশে নাক বন্ধ থাকে তাকে ইকমডাল পলিপ বলে। যাদের এলার্জির সমস্যা বেশি থাকে তাদের ইকমডাল পলিপ বেশি হ এগুলো নাকের দুই পাশ দিয়ে আঙ্গুরের ধোকার মত বেরিয়ে আসে এই পলিপের রং সাধারণত বেলের মত হয়। এগুলোর দুই ধরনের চিকিৎসা রয়েছে।
শুরুতেই মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। যদি মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এ কাজ না হয় তখন অপারেশন করার প্রয়োজন পড়ে। মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এর মধ্যে কিছু স্প্রে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এই স্প্রে অনেকদিন যাবত ব্যবহার করতে হয়। অনেক সময় ট্যাবলেট আকারে মুখে অল্প সময়ের জন্য খেতে দেওয়া হয়। এগুলো খেলে দুই পাশে যে পলিপ থাকে সেগুলো অনেক সময় ছোট হয়ে যায়। কিন্তু এটার মূল চিকিৎসা হলো অপারেশন।
নাকের পলিপাস কেন হয়
নাকের পলিপাসের বিষয়ে আমরা কমবেশি সবাই জানি। তবে নাকের পলিপাস কেন হয় এটি নিয়ে এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত নাকে এলার্জির কারণে পলিপাস হয়ে থাকে। নাকের ভিতর ধুলাবালি ধোঁয়া ইত্যাদির কারণে এলার্জি সমস্যা হয়। ক্রনিক ইনফেকশনও নাকের ভিতরে এলার্জির কারণ হতে পারে। নাকের ভিতর ফাংগাল ইনফেকশন থেকেও এই সমস্যা হয়।
নাকের ভিতরে যদি রক্ত অসামঞ্জস্যতা থাকে তাহলেও পলিপাস হতে পারে। নাকের ভিতরের এলার্জিকে এলার্জিক রাইনাইটিশ বলা হয়, এবং গলার এলার্জিকে এলার্জিক ফ্যারিনজাইটিস বলা হয় এবং একই সাথে ফুসফুসের এলার্জিকে অ্যাজমা বা হাঁপানি বলা হয়। এই সমস্যাগুলো প্রত্যেকটি একটি অন্যটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
যাদের নাকের এলার্জি আছে তারা শতকরা ১৭ থেকে ১৯ ভাগ হাঁপানিতে আক্রান্ত আবার যাদের হাঁপানি আছে তারা ৫৫ থেকে ৭০ ভাগ নাকের এলার্জিতে আক্রান্ত। অর্থাৎ নাকের এলার্জি ও ফুসফুসের এলার্জি একটি প্রভাবে আরেকটি প্রভাবিত হয়। নাকের এলার্জি কন্ট্রোল না করলে হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে আবার হাঁপানি ঠিকঠাক মতো চিকিৎসা না করলে তা নাকের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় এ ব্যাপারে তো আমরা জানলাম। কিন্তু নাকে পলিপাস হলে নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো আমাদের জেনে রাখা উচিত। যাতে করে সমস্যা হলে আমরা সরাসরি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ঘরোয়া ভাবে চেষ্টা করে দেখতে পারি। চলুন জেনে নেই কি কি উপায়ে ঘরোয়া ভাবে আমরা চিকিৎসা করতে পারি।
হলুদঃ হলুদে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে। যা মানব শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। এক গবেষণায় জানা যায়, হলুদ এলার্জির সমস্যার সমাধান দ্রুত করতে পারে। তাই প্রতিদিন খাবারের সাথে অন্তত এক চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া উচিত। এছাড়াও হলুদের চা খেতে পারেন, আবার হলুদের গুড়া পানিতে মিশিয়ে একসাথে ফোটানোর পরে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
রসুন: রসুনের অনেক ওষুধে গুণ রয়েছে। এই রসুন শরীরের কার্য ক্ষমতা বাড়ায় এবং এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। নাকের পলিপাস এর ক্ষেত্রে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। অতএব প্রতিদিন আমাদের কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। অথবা রসুনের গুড়া এবং কুসুম গরম পানি একসাথে মিশিয়েও হওয়া যেতে পারে।
আদা: আদাতেও অনেক রকমের ওষুধে গুণাবলী বিদ্যমান। এক গবেষণায় জানা যায়, আদাতে এন্টি মাইক্রোবিয়াল ও সংক্রমণ রোধকারী উপাদান বিদ্যমান। তাই প্রতিদিন রান্নায় অবশ্যই মশলা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। আমাদের সবার প্রতিদিন আদা চা খাওয়া উচিত। তাহলে নাকের পলিপাসের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে আমরা কিছু অভ্যাস গড়ে নিতে পারি। যাতে করে নাকের পলিপাস ঘরে বসেই সমাধান করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই সেই ঘরোয়া পদ্ধতি সমূহ-
- লবণ এবং কুসুম গরম পানি একসাথে নিয়ে নিয়মিত নাকের ভিতর পরিষ্কার করতে হবে
- প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে নাকের ভিতর ভাপ দিতে হবে
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে যাতে শরীরে পানির ঘাটতি না পরে
- কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
- নিয়মিত রং চা খেতে হবে আদা এবং লেবুর সাথে
- নিয়মিত আনারস খেলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়
- এলার্জি জাতীয় খাবার গুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে
- পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায় ইত্যাদি
নাকের পলিপাস এর ড্রপ
নাকের পলিপাস দেখা দিলে প্রাথমিক পর্যায়ে ডক্টররা কিছু স্টেরয়েড স্প্রে ব্যবহার করতে দেন। যেগুলো নাক বন্ধ হওয়া থেকে আমাদের মুক্তি দেয়। নাকের পলিপাসের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা নিম্ন লিখিত ড্রপ এবং স্প্রে সমূহ ব্যবহার করতে দিয়ে থাকেন-
- Fluticasone
- Budesonide
- Mometasone
- xylocon Nasal Drop
পলিপাসের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপরোক্ত ড্রপ সমূহ ব্যবহার করা উচিত।
বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস চিকিৎসা
বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় নানা রকমের বিজ্ঞাপন দেয়া হয় যে, বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস চিকিৎসা করা হয় এবং তা ধ্বংস করা হয়। এগুলো সাধারণত মানুষ ঠকানো ছাড়া আর কিছুই না। কারণ এ সকল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এমন কিছু এসিড জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা নাকি চিরতরে নাকের ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট।
তাই এই সকল বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে আমাদের উচিত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নাকের পলিপাস এর লক্ষণ
অন্য রকমের অসুখ এজমা কিংবা এলার্জি নাকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এগুলোকে সঠিক সময় চিকিৎসা না করা হলে নাকের পলিপাস হতে পারে। এগুলো ছোট অবস্থায় তেমন কোন অসুবিধা হয়না কিন্তু আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলে নাকের প্রকোষ্ঠ বন্ধ করে দেয়। তাহলে নাক থেকে পূজের ন্যায় গারো তরল পদার্থ বের হতে থাকে। চলুন জেনে নেই নাকের পলিপাস এর লক্ষণ গুলো কি কি-
- প্রচুর মাথা ব্যথা হয় কিন্তু প্রথম দিকে হালকা থাকে
- প্রায় সব সময় নাক বন্ধ হয়ে থাকে
- নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে
- নাকি কোন গন্ধ পাওয়া যায় না
- খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না
- নাক বন্ধ থাকার জন্য নাক ডাকার সমস্যা হয়
- সাইনাসের মাথাব্যথা হয়
- কপালে মুখে চাপের অনুভূতি হয় অনেক ক্ষেত্রে না থেকে রক্ত পড়ে
- মুখের উপরের চোয়ালে ব্যথা হয় এবং এটি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে
আমাদের শেষ কথা
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আমরা এটি নিশ্চিত হয়েছি যে, নাকের পলিপাস সাধারণত ধুলাবালির বা এলার্জির কারণে হয়ে থাকে। সেজন্য আমাদের ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা উচিত। তারপরেও যদি পলিপাসের লক্ষণ গুলো দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের নাকের পলিপাসের পরবর্তী ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে। যাতে পলিপাস থেকে আমরা খুব সহজেই পরিত্রাণ পেতে পারি।
আমরা যথাযথ চেষ্টা করেছি আপনাদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়ে গেছেন। যদি আমাদের লেখাটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে নতুন নতুন বিষয় তথ্যের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন এবং আপনার ব্যবহৃত সোশ্যাল মাধ্যমিক গুলোতে শেয়ার করতে পারেন ধন্যবাদ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url