থাইরয়েডের ওষুধ না খেলে কি হয় বিস্তারিত জানুন

থাইরয়েডের ওষুধ না খেলে কি হয় সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। থাইরয়েড হচ্ছে এক প্রকারের গ্রন্থি, যার আকার ছোট প্রজাপতির মত। এটি হরমোন তৈরির মাধ্যমে শরীরের সকল বিপাকীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েড এর লক্ষণ বেশি পরিলক্ষিত হয়। আজ আমরা থাইরয়েড সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।থাইরয়েডের ছবি

থাইরয়েডের সমস্যা তৈরি হওয়ার পেছনে নানা রকম রোগের প্রভাব রয়েছে। যেগুলোর ফলে থাইরয়েডের অতিরিক্ত হরমোন নিঃসৃত কিংবা অনেকটা কম হরমন নিঃসৃত হয়। এই সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

থাইরয়েড সাধারণত হরমোন উৎপাদন করে থাকে। হরমোন উৎপাদনের ভিত্তিতে থাইরয়েডের সমস্যা কে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে যখন খুব বেশি হরমোন উৎপাদন হয়, তাকে হাইপাইয়থাইরয়েডিজোম বলে। অন্যটি হলো থাইরয়েড থেকে খুব কম হরমোন উৎপাদিত হয়, একে হাইপো থাইরাইডিজম বলে।

আজকে আমরা মহিলা ও পুরুষের মধ্যে থাইরয়েডের লক্ষণ, হাইপো থাইরয়েডের লক্ষন, থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয, থাইরয়েড কমানোর উপায় থাইরয়েডের ওষুধ না খেলে কি হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। বিভিন্ন রকম রোগের কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন হার্টের সমস্যা, পেটের সমস্যা, হাড়ের সুস্থতা এবং আরো অনেক শারীরিক রোগের কারণে থাইরয়েডের স্বাভাবিক হরমোন উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি হয়।

মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েডের লক্ষণ

আমাদের গলার কাছে শ্বাসনালীর দুই পাশে প্রজাপতির মত একটি ছোট গ্রন্থী আছে। একে থাইরয়েড বলে। এই গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদিত হয়। এই হরমোন শরীরের সকল বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোনের পরিমাণ যদি অতিরিক্ত বেশি অথবা কম হয়ে যায় তাহলে শুরু হয় নানা রকমের সমস্যা।

একটি হল হাইপো থাইরয়েডিজম এবং অন্যটি হাইপারথাইরয়েডিসম। বেশিরভাগ মানুষই হাইপোথাইরয়েডিজম এ বেশি আক্রান্ত। এই রোগের সৃষ্টি হলে বিভিন্ন রকমের লক্ষণ দেখা যায়। চলুন জেনে নেই মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েডের লক্ষণ গুলো কি কি-

ওজনে তারতম্যঃ ওজন কমা বা বাড়ার হরেক রকম কারণ রয়েছে। কিন্তু থাইরয়েডের মাত্রা যেহেতু শরীরের সকল বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। সেজন্য শরীরের ওজনের তারতম লক্ষ্য করলে অবশ্যই থাইরয়েড চেক করে নেয়া উচিত। এর কারনে মহিলাদের ওজন কমে যেতে পারে আবার বেড়ে যেতে পারে।

দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করাঃ ক্লান্তি হচ্ছে থাইরয়েডের সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণ। থাইরয়েড হরমোন যেহেতু শরীরে শক্তির যোগান দেয়, সেহেতু হরমন এর কম বা বেশি হলে শরীরও অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। থাইরয়েড হরমোন যেহেতু শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তাই এটি নিয়মিত আপনাকে অলস, দুর্বল এবং ক্লান্ত করে তুলতে পারে।

সব সময় ঠান্ডা লেগে থাকাঃ আমাদের শরীর যদি ক্যালরি সঞ্চয় করে রাখে অর্থাৎ যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালরি শরীর থেকে না ঝরাই তাহলে আমাদের অতিরিক্ত ঠান্ডা লেগে থাকতে পারে। এটি একটি থাইরয়েড সমস্যা হওয়ার লক্ষন। বিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘাটলে পেশীর এবং জয়েন্টের শক্তি ক্ষয় হতে থাকে। ফলে জয়েনগুলো আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে।
চুল পড়ে যাওয়াঃ থাইরয়েডের সমস্যা হলে অতিরিক্ত পরিমাণে চুল ঝরতে থা্কে। থাইরয়েডের সমস্যা হলে চুলের গোড়া অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই কারণে চুল ঝরে পড়ে। অন্যদিকে থাইরয়েড দেখা দিলে মানুষ অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে।

অনিয়মিত মাসিকঃ থাইরয়েড হরমোন শরীরের অন্য সকল হরমোনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সেই কারণে থাইরয়েড হরমোনের কমবেশি হলে অন্যান্য হরমোনেও তার প্রভাব পড়ে। থাইরয়েড জনিত হরমোনের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। যার ফলে মাসিকের সময় এবং তীব্রতা দুটোই কমে অথবা বেড়ে যেতে পারে।

পুরুষের থাইরয়েডের লক্ষণ

আমরা প্রায়ই দেখতে পাই আমাদের মধ্যে অনেকেই সন্তানহীনতাই ভোগে। এই সমস্যার পেছনে আরো অনেক কারণ থাকলেও আমরা যে বিষয়টা নিয়ে কম চর্চা করে সেটাই বেশি ভূমিকা রাখে। আর সেটা হল থাইরয়েডের সমস্যা। পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা সহ আরো বিভিন্ন ক্রিয়ায় এই থাইরয়েড হরমোন ভূমিকা রাখে।থাইরয়েড থেকে থাইরক্সিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়।

টেস্টিস এর কার্যকারিতা এবং শুক্রাণুর গুণমান কে নিয়ন্ত্রণ করে গোনারট্রফির নামক হরমোন। উচ্চমাত্রায় যদি থাইরয়েড হরমোন উৎপাদিত হয় তাহলে এই হরমোনটিও প্রভাবিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপার থাইরয়েডিজম আক্রান্ত পুরুষরা শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বিটির মাত্রা কমে যাওয়া এ সকল রোগে বেশী আক্রান্ত হয়।

হাইপোথাইরয়েটিজম এর লক্ষণ

অতিরিক্ত ক্লান্তিঃ হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা দেখা দিলে পুরুষের টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা কমে যায় এবং শুক্রাণু উৎপাদন হ্রাস পায়। সেই কারণেই শরীর অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করে।

ওজন বৃদ্ধিঃ থাইরয়েড গ্রন্থি যেহেতু শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে সেজন্য এর উৎপাদন কম বা বেশি হলে শরীরের ওজনের তারতম্য দেখা দিতে পারে।

শীতবোধ বেশি হয়ঃ থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিলে শরীরের তাপ ধারণ ক্ষমতার হ্রাস পায়। সে কারণে শরীর অতিরিক্ত শীত অনুভব করতে থাকে।

হাইপারথাইরয়েডডিজোম এর লক্ষণ
  • ওজন কমে যাওয়া
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
  • প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া

হাইপো থাইরয়েড এর লক্ষণ

হাইপো শব্দের অর্থ হচ্ছে কম। অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থি প্রয়োজনে তুলনায় কম হরমোন উৎপাদন করলে তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। হাইপোথাইরয়েটিজম হলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। চলুন জেনে লক্ষণ গুলো কি কি-
  • রক্তচাপ বেড়ে যায়
  • গলগন্ড রোগ দেখা দেয়
  • কানে কম শুনে অথবা একেবারেই শুনেনা
  • স্নায়ু ও মাংসপেশিতে রিফ্লেক্স কমে যাই
  • মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়
  • অনিয়মিত মাসিক হয় এবং অতিরিক্ত রক্তপাত হয়
  • শরীর ফুলে যায়
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হয়
  • বন্ধ্যাত্বতা দেখা দেয়
  • যৌন ক্ষমতা কমে যায়
  • কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যায়
  • পেটে অতিরিক্ত পানি জমা হয়
  • স্মৃতিশক্তি আস্তে আস্তে লোপ পেতে থাকে

হাইপারথাইরয়েড এর লক্ষণ

এর বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে -
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া
  • অতিরিক্ত ঘাবড়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
  • হার্টবিট দ্রুত হওয়া
  • ঘুম কমে যাওয়া
  • ত্বক পাতলা হয়ে যায়
  • চুল পড়ে যায়
  • অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়
  • ডায়রিয়া হতে পারে
  • ওজন কমে যায়
  • বমি হতে পারে
  • মাসিকের তারতম হতে পারে

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়

মানুষের শরীরে এমন কতগুলো গ্রন্থি রয়েছে যেগুলো শরীরের নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে সহায়তা করে। থাইরয়েড গ্রন্থী ও ঠিক এমনি একটি গ্রন্থী যা সমস্ত শরীরের বিপাকক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় এবং থাইরয়েড হওয়ার পরে থাইরয়েড ওষুধ না খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানে না। চলুন জেনে নেই থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হতে পারে-
থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। এইমাত্রার কম বা বেশি হরমোন উৎপন্ন হলে শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি থাইরয়েড হরমোন কম উৎপাদিত হয় তাহলে তাকে বলে হাইপোথাইরয়েডিজম এবং যদি বেশি হরমোন উৎপাদিত হয় তাহলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজম। থাইরয়েডের সমস্যা হলে যে সকল পরিবর্তন বা সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো হলো-
  • দিনের প্রতিটি সময় শরীরের ক্লান্ত ক্লান্ত ভাব আসবে
  • শরীর অতিরিক্ত শীতকাতুর হয়ে পড়ে
  • ত্বক ও চুল শুষ্ক হয়ে যায়
  • অস্বাভাবিকভাবে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে অথবা কমে যেতে পারে
  • মুখ ও গলায় ফোলা ভাব অনুভূত হয়
  • মাংসপেশিতে দুর্বলতা এবং ব্যথা পরিলক্ষিত হয়
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের সাইকেলে পরিবর্তন আসতে পারে এবং রক্তচাপ বেশি হতে পারে
  • অনেকে ডিপ্রেশনে ভোগে
  • চুলের গোড়া নরম হয়ে যাওয়ার ফলে চুল ঝরে পড়তে থাকে
  • অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতিশুদ্ধি লোক পেতে থাকে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য এবং গলগন্ড এর মত রোগ দেখা দিতে পারে
উপরোক্ত সমস্যাগুলো থাইরয়েড কোন পর্যায়ে থাইরয়েড তার উপরে নির্ভর করে। অনেকেই মনে করেন থাইরয়েডের সমস্যা শুধুমাত্র মহিলাদের হয়। কিন্তু এই ধারণাটি ঠিক নয়।তবে এটা ঠিক যে পুরুষের তুলনায় মহিলারা থাইরয়েডের সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়। অতএব থাইরয়েডের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত।

থাইরয়েডের ওষুধ না খেলে কি হয়

থাইরয়েডের ঔষধ না খেলে কি হয়? থাইরয়েডের সমস্যা হলে কি সারা জীবন ঔষধ থাকতে হয়? আমরা এই সকল বিষয়ে না জেনেই সমস্যা কিছুটা কমে আসলেই ওষুধ খাওয়া বাদ দিয়ে দেই। এতে আমাদের শরীরের সমস্যা আরো বাড়তে থাকে ।সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনভাবেই ওষুধ বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত নয়।

প্রয়োজনের তুলনায় যদি কম থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন হয় তাকে বলে হাইপোথাইরয়েটিজম। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই এই সমস্যা তে ভোগে। বিশেষজ্ঞদের মতে TSH- এর মাত্রা বেশি হলে এবংT3,T4- এর মাত্রা কমে গেলে শরীরের অবসাদ আসতে পারে, ক্লান্তি অনুভব করে, গলার আওয়াজ অন্যরকম হয়ে যায়, হৃদস্পন্দন কমে যায়।

এই সমস্যাগুলো যদি দেখা যায় তাহলে রোগী ক্লিনিক্যাল হাইপো থাইরয়েড এ আক্রান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঔষধ শুরু করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ওষুধ একবার শুরু করলে তা সারা জীবন খেতে হয়। অন্যদিকে TSH-এর ভারসাম্য কম বেশি হলে বা T3,T4-এর মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে যে সমস্যা দেখা দেয় তাকে সাব ক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজম বলে।

এই রোগে এনটিটিপিও পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা নিশ্চিন্ত হন যে থাইরয়েড আছে কিনা। যদি রোগ ধরা পড়ে তাহলে অতি দ্রুত ওষুধ শুরু করা উচিত এবং উপসর্গ যতদিন থাকবে ততদিন পর্যন্ত ওষুধ খেতে হবে। তারপর ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া যায়।
প্রয়োজনের তুলনায় যখন থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায় তখন সে সমস্যাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। গর্ভাবস্থায় ব্যতীত বাইরের দেশগুলোতে এই সমস্যাটা হলে সাধারণত কোন ওষুধ খেতে দেওয়া হয় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায় এই সমস্যার সমাধানের জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপি প্রদান করা হয়ে থাকে। অনেক সময় অপারেশন করারও প্রয়োজন পড়ে।

থাইরয়েডের ওষুধ না খেলে কি হয় অর্থাৎ ওষুধ বাদ দেয়া যাবে কিনা অথবা সারা জীবন খেতে হবে কিনা এই ব্যাপার নিয়ে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনভাবে ওষুধ বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত নয়।

থাইরয়েড কি খেলে ভালো হয়

বর্তমান সময়ে থাইরয়েড একটি গুরুতর সমস্যা রুপে দেখা দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে না, চুল পড়ে যায়, ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে। কিন্তু কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে এই রোগটি অনেকটাই কন্ট্রোলে রাখা যায়। চলুন জেনে নেই কি কি সেই খাবারগুলো-

আমলকিঃ যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। কারণ একটি আমলকিতে যে কোন টক জাতীয় ফলের তুলনায় আট গুণ বেশি ভিটামিন সি মজুদ থাকে। যা মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

নারিকেলঃ নারিকেল বা ডাব মানব শরীরে বিপাক প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সহায়তা করে। এটি খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়। তাই থাইরয়েডের সমস্যা নিরাময়ের জন্য নারকেল বা ডাব কে মহা ওষুধ হিসেবে ধরা হয়।

মুগ ডালঃ প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ পদার্থের ভরপুর হচ্ছে মুগডাল। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুগ ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা থাইরয়েড জনিত সমস্যার সমাধানের অবদান রাখে।

ব্রাজিলিয়ান বাদামঃ ব্রাজিলিয়ান বাদাম আমাদের শরীরে সেলুনিয়াম উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। চিকিৎসকরা বলেন প্রতিদিন তিনটি করে ব্রাজিলিয়ান নাট খেলে শরীরের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি হতে থাকে। সেলুনিয়াম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদার্থ যা থাইরয়েড হরমোনের বিপাকক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন।

কুমড়ো বীজঃ কুমড়া বীজ এ প্রচুর পরিমানে জিংক থাকে। এটি শরীরের ভিটামিন এবং খনিজ শোষণ করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে হরমোন সংশ্লেষণ করে এটি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে।

থাইরয়েড কি ভালো হয়

থাইরয়েডের সমস্যা সাধারণত দুই রকমের। একটি হলো হাইপারথাইরাইডিজম অন্যটি হাইপোথাইরয়েডিজম। চিকিৎসকরা আবার হাইপোথারিডিজম কে দুই ভাগে ভাগ করেন। একটি হলো ক্লিনিকাল হাইপোথাইরয়েডিজম এবং সাব ক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজম। ক্লিনিকাল হাইপোথাইরয়েডিজম এর ক্ষেত্রে সারা জীবন ওষুধ খেতে হয়।

সাব ক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েটিজম এর ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকা পর্যন্ত ওষুধ খেতে হয় এবং তারপর আর প্রয়োজন হয় না। হাইপারথাইরয়েডিজম এর ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেন। সে ক্ষেত্রে ওষুধ প্রদান করা হয় না। এটির জন্য বিভিন্ন রকম থেরাপি প্রদান করা হয় এবং বিশেষ ক্ষেত্রে অপারেশন করা হয়।

অর্থাৎ আমরা এটা জানলাম যে থাইরয়েডের ওষুধ না খেলে কি হয়, থাইরয়েড ভালো হয় কি না, থাইরয়েডের ধরনের উপর নির্ভর করে এটি ভালো হয় কিনা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সারাজীবন সুস্থ থাকার জন্য ওষুধ কে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে হয়।

থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায়

আজকাল থাইরয়েডের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। চলুন জেনে নেই থাইরয়েডের ওষুধ না খেলে কি হয়, ওষুধ না খেয়েও কিছু ঘরোয়া টোটকা দিয়ে থাইরয়েড বসে রাখা যায় কিনা-

দই এবং দুধঃ দুধে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন রয়েছে। এগুলো থাইরয়েড সমস্যার সমাধানের কাজ করে। যাদের থাইরয়েড সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত দুধ এবং দই খেতে পারেন।

জোয়ান এবং গমঃ থাইরয়েড এর ক্ষেত্রে এই দুইটি খাবার অত্যন্ত উপকারী। এটি সাইনাস রক্তের অস্বাভাবিক চাপ এবং রক্তের বিভিন্ন রকম সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে। অতএব থাইরয়েডের সমস্যার সমাধান পেতে হলে নিয়মিত জোয়ান এবং গম খাওয়া উচিত।
লাউঃ থাইরয়েডের সমস্যা থেকে বের হতে প্রত্যেকদিন সকালে লাউ এর রস খাওয়া উচিত। এতে কিছু অ্যালোভেরার রস যোগ করে নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

ভিটামিন এঃ সব ধরনের রঙিন শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে। ভিটামিন এ থাইরয়েড রোগীদের থাইরয়েড সমস্যা কমাতে সহায়তা করে। সেজন্য নিয়মিত ভিটামিন এ যুক্ত হওয়ার হওয়া উচিত।

ডিমঃ থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডিম অত্যন্ত উপকারী খ্বার। অনেকেই মনে করেন ডিম খেলে থাইরয়েডের সমস্যা বাড়ে। এ কথাটি একেবারেই ঠিক নয়। ডিম থাইরয়েড এর সমস্যা কমানোর জন্য কাজ করে থাকে। যাদের থাইরয়েডের সমস্যা হয়েছে তারা নিয়মিত ডিম খাওয়ার অভ্যাস করুণ।

সেলেনিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়াঃ যে সকল খাবারে সেলেনিয়াম রয়েছে যেমন মুরগি, বাদামি চাল, টুনা মাছ। এগুলো নিয়মিত খাওয়া উচিত।

ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে থাইরয়েডের সমস্যা হয়ে থাকে। ভিটামিদ ডি শুধুমাত্র সূর্যের আলোতে পাওয়া যায়। তাই দিনে অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকা উচিত। এতে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। কিছু খাবার রয়েছে যেমন সালমোন, ম্যাটারাল জাতীয় খাবার, কমলালেবুর রস, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।

ভিটামিন বিঃ এর অভাবে ও শরীরে থাইরয়েডের সমস্যা হয়ে থাকে। সেজন্য রোগীদের উচিত ভিটামিন বি যুক্ত খাবার নিয়মিত খাওয়া।

শেষ কথা

আজকে এই আর্টিকেলের মধ্যে আমরা থাইরয়েডের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। যেমন থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হতে, পারে থাইরয়েডের ওষুধ না খেলে কি হয়, এটি প্রতিরোধের জন্য ঘরোয়া কি কি উপায় রয়েছ্র, এরকম আনুষাঙ্গিক আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আশা করছি আপনার কাঙ্খিত তথ্যটি আপনি পেয়ে গেছেন।

যদি আমাদের লেখাটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এটি আপনাদের ব্যবহৃত সোশ্যাল মাধ্যম গুলোতে শেয়ার করে দিবেন এবং আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url