খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় - রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়, রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল। অনেকে এই সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য গুগলে সার্চ করে থাকেন। খেজুর সম্পর্কিত নানা রকম তথ্য যারা জানতে চান আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
খেজুর
খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনি ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতে খেজুরের বিস্ময়কর গুণ রয়েছে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

ভূমিকা

খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাছাড়া ও খেজুরের ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, প্রোটিন, ফাইবার এবং আইরন বিদ্যমান। কেউ যদি খেজুর খায় তাহলে তার শরীরের নানা রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। 

খেজুরে বিদ্যমান ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদ হজমের সমস্যা দূর করে। মস্তিষ্ক সচল রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে, এরকম নানা ধরনের উপকার করে থাকে। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়, রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, খেজুর খাওয়ার অপকারিতা, দুধ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, প্রতিদিন খেজুর খাওয়া উচিত এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব‌। 

সুতরাং সঠিক তথ্য জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। চলুন শুরু করা যাক।

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়

খেজুরে নানা রকম পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। খেজুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা নানা রোগের সম্ভাবনাকে কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

কিন্তু খেজুর যেহেতু অতিরিক্ত মিষ্টি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল সেজন্য অনেকেই খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করতে পারেন না। ভিজিয়ে রেখে খাওয়া উচিত নাকি কাঁচা খাওয়া উচিত এ নিয়ে আমাদের চিন্তার কোন শেষ নেই। খালি পেটে খাবে নাকি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাবে তাও অনেকে চিন্তা করেন। জেনে নিন খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় এবং অনুপযুক্ত সময়।

উপযুক্ত সময়ঃ যদিও খেজুরের চিনির পরিমাণ বেশি থাকে তারপরেও এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে না। কাজে যাওয়ার আগে অন্তত ৩০ - ৬০ মিনিট আগে দুই চারটি খেজুর খাওয়া যেতে পারে। কারণ খেজুরের উপস্থিত কার্ড ধীরে ধীরে নিশ্চিত হয় যার জন্য কাজ করার সময় শরীর এনার্জি ঠিক থাকে। 

খেজুরের বিদ্যমান ফাইবার আমাদের প্রধান নিয়ন্ত্রণে রাখে তাই খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে আমাদের ঝামেলা থাকা উচিত নয়। সকালের নাস্তায় এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেজুর খাওয়া যেতে পারে। খেজুর খেলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পরিষ্কার হয় তাই হার্ট এবং লিভার সুস্থ থাকে। খেজুর একটি এপ্রোডিসিয়া হিসেবে কাজ করে এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

খেজুরের বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুল ও ত্বক সুস্থ রাখে। খেজুর খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, মস্তিষ্ক ও হার্ট সুস্থ থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়, অ্যালজাইমাস, নানা ধরনের ক্যান্সার ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। তাই বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

অনুপযুক্ত সময়ঃ আপনার যদি বদহজমের সমস্যা থাকে তাহলে খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ডায়রিয়ার সমস্যা থাকলে খেজুর খাওয়া একেবারে উচিত নয়। খেজুরে উপস্থিত সরবিটল নামক সুগার অ্যালকোহল বাউল মুভমেন্ট বাড়িয়ে দিতে পারে। এলার্জি ইরিটেবল ভাওয়েল সিনড্রোম এবং সেনসিটিভ সমস্যা থাকলে খেজুর না খাওয়াই ভালো।

রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

খেজুরে নানারকম পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। একটি খেজুরের 277 গ্রাম ক্যালোরি, 1.81 ও গ্রাম প্রোটিন, 0.15 গ্রাম চর্বি, ৭৫ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬.৭ গ্রাম ফাইবার এবং ৩% ভিটামিন বিদ্যমান। এছাড়াও ৬০.২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি আর, 0.3 মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ, ০.৩৬ মিলিগ্রাম তামা, ৫৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ৬৯৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে। 

খেজুরে নানারকম খনিজ উপাদান বিদ্যমান যা ও পুরুষ দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় এর মধ্যে রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। চলুন জেনে নেই রাতে খেজুর খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।

ত্বকের বার্ধক্য রোধ করেঃ খেজুর ব্যবহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। খেজুরে বিদ্যমান ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি ত্বক শীতল হওয়া থেকে রক্ষা করে। খেজুরে উপস্থিত এন্টি এজিং বৈশিষ্ট্য শরীরে মেলানিন সংগ্রহ করতে দেয় না। তাই আপনার ত্বক দীর্ঘ সময় যাবত বার্ধক্যে আক্রান্ত হয় না। বিশেষ করে পুরুষের ত্বকের জন্য খেজুর ভীষণভাবে উপকারী। পুরুষরা সাধারণত নিজের ত্বকের জন্য তেমন কিছুই করেন না। সেক্ষেত্রে নিয়মিত খেজুর খেলে ভালো উপকার পাবেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খেজুর ডায়াবেটিস চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত। খেজুর প্রচুর পরিমান ফাইবার সমৃদ্ধ একজন মানুষের রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। সেজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বন্ধ্যাত্ব রোধ করেঃ খেজুরের প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিদ্যমান। যা নানা রকম রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। খেজুর খেলে ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং হৃদরোগের মতো আরো অনেক রোগ নিরাময় হয়। এটি পেটের ক্যান্সার এবং আলসার এর ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। আফ্রিকার লোকেরা পুরুষ বন্ধত্ব রোধ করার জন্য নিয়মিত খেজুর খায়। 

এমনটা শোনা যায় যে খেজুর, ফুলের পরাগরেণু বন্ধ্যাত্ব দূর করে এবং শুক্রাণু বৃদ্ধি করতে পারে। খেজুর ও খেজুরের ফুলে থাকা পরাগরেণু ও ডি এন এ এর গুণগত মান বৃদ্ধি করে। ওষুধ কোষের শক্তি বাড়ায়। পুরুষরা কাজের চাপে অনেক সময় শরীর দুর্বলতা অনুভব করেন। সেক্ষেত্রে কয়েকটি খেজুর খেয়ে নিলে আগের এনার্জি ফিরে পাবেন।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম। যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। সাথে সাথে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

হার্ট সুস্থ রাখেঃ বেশিরভাগ পুরুষের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে কোলেস্টেরলের কারণে হার্টের সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে রাতে শোয়ার সময় এক ক্লাস জলে খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে সেই পানি খেলে হার্টের সমস্যা কমে যায়। খেজুর খেলে হৃদপিন্ডের সমস্যা দূর হয় এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে। 

শরীরের সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মধ্যে সমতা বজায় রাখে। খেজুরে এমন সব পুষ্টিগুণ বিদ্যমান যা খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

খেজুর সব সময়ের জন্যই আমাদের শরীরের পক্ষে উপকারী। খেজুরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা অনেক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। খেজুর শুকিয়ে খেলে খেজুরের পুষ্টিগুণ অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়। শুকনো খেজুরের প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই এটি তৎক্ষণাৎ শক্তি বাড়াতে পারে যাতে শরীরে শক্তি ফিরে আসে। 

খেজুর খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং হাড় মজবুত হয়। ১০০ গ্রাম খেজুরে ৭৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান। এছাড়াও ২৭৭ গ্রাম ক্যালোরি রয়েছে। খেজুরে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, আইরন, ভিটামিন বি৬ এবং ফাইবার রয়েছে। খেজুরে কোলেস্টেরল নেই। চর্বিও খুবই সামান্য পরিমাণ। তাই এটি হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। জেনে নেই শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো।
  • শুকনো খেজুর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
  • খেজুরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম হাড় মজবুত করে।
  • শুকনো খেজুর স্ট্যামিনা বাড়াতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে শক্তি দেয়।
  • শুকনো খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ বিদ্যমান যা হজম শক্তি বাড়ায়।
  • ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব এবং হরমোনের সমস্যা কমাতে পারে।
  • খেজুরের বিদ্যমান ভিটামিন এবং মিনারেল নানা রকম রোগ নিরাময় করতে সক্ষম।
  • শরীরে আয়রনের ঘাটতি কমায়।
  • নিয়মিত খেজুর খেলে ত্বকের শুষ্কতা রোধ হয়।
  • রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে।
  • শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাই এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
  • হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
  • শীতকালীন বিভিন্ন সমস্যা যেমন গলা ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডার সমস্যা দূর করতে পারে।
  • খেজুরে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খুব দ্রুত কর্মশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।

পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা

খেজুরে রয়েছে নানা রকম পুষ্টিগুণ। খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় যদি আপনি খেজুর খান তাহলে নানারকম উপকার পেয়ে থাকেন। খেজুর যে শুধু সামগ্রিকভাবে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় তা কিন্তু নয়, পুরুষের যৌন শক্তি বাড়াতেও খেজুর অত্যন্ত উপকারী। চলুন পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

বীর্যের ঘনত্ব বৃদ্ধি করেঃ পুরুষদের মধ্যে অনেকেই বীর্য পাতলা হওয়ার মতো সমস্যায় ভোগেন। খেজুর বীর্যের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আপনি যদি মাখন এর সঙ্গে খেজুর মিশিয়ে নিয়মিত খান তাহলে বীর্যের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে। খেজুরের প্রচুর পরিমাণে আশ রয়েছে যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। 

হজম শক্তি ভালো থাকলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। যা যৌন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। যৌন স্বাস্থ্য ভালো থাকলে বীর্যের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। বীজের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে হলে খেজুর খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে।

শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করেঃ খেজুরে উপস্থিত জিংক শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও খেজুরে বিদ্যমান ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম এবং খনিজ যৌন স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে অর্থাৎ শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস যৌন স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলার কারণে শুক্রানুর উৎপাদন কমে যায়। খেজুরে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় ফলে। শুক্রাণুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

সেক্স ড্রাইভ বাড়াইঃ মহিলা ও পুরুষ বয়স বাড়ার সাথে সাথে যৌন ইচ্ছা কমে যায়। যৌন স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত খেজুর খাওয়া উচিত। কারণ খেজুর সেক্স ড্রাইভ বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য আপনি রোজ চারটি থেকে পাঁচটি খেজুর খেতে পারেন।

অকাল বীর্যপাত রোধ করেঃ খেজুর এমন একটি পুষ্টিকর ফল যা অকাল বীর্যপাতের মত যৌন সমস্যা রোধ করতে পারে। নিয়মিত খেজুর খেলে অকাল বীর্যপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। তাই অকাল বীর্যপাত রোধ করতে প্রতিদিন খেজুর খান।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়ঃ খেজুরের পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত খেজুর খেলে বিষন্নতা, উদ্বেগ, মানসিক চাপ, অনিদ্রা দূর হয়। ফলে যৌন জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে।

রক্ত প্রবাহের মাত্রা বাড়াইঃ খেজুর মানবদেহে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বাড়ায়। সেক্স ড্রাইভে রক্ত প্রবাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। খেজুর খেলে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও খেজুর খাওয়ার কিছু উপকারিতা রয়েছে। যেমন -
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
  • রক্তস্বল্পতা ও রাতকানা প্রতিরোধ করে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
  • কিডনি সুস্থ রাখে
  • হাড় মজবুত করে
  • পুরুষের যৌন শক্তি বাড়ায়
  • ত্বক প্রচুর সুস্থ রাখে
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে

খেজুর খাওয়ার অপকারিতা

প্রত্যেকটা খাদ্যদ্রব্যের যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমন অপকারিতা রয়েছে। তবে খেজুরের মধ্যে তেমন একটা অপকারী দিক নাই বললেই চলে। কিন্তু অতিমাত্রায় খেজুর খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়। বেশি পরিমাণে খেজুর খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। খেজুর রয়েছে উচ্চমাত্রার শক্তি যার জন্য খুব তাড়াতাড়ি ওজন বাড়তে পারে। 

অতএব যারা ওজন কমাতে চান ডায়েট করছেন তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকা উত্তম। শুকনো খেজুর খেলে অনেক সময় এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই তাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 

এছাড়াও খেজুরের প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে যা কিডনির সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। খেজুরে যেহেতু প্রাকৃতিক চিনি বিদ্যমান তাই অতিমাত্রায় খেজুর খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

দুধ ও খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় এক গ্লাস দুধ এবং ২ টি খেজুর একসাথে খান। খেজুরের প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। যা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। চলুন জেনে নেই দুধ ও খেজুর খাওয়ার উপকারিতা।

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করেঃ খেজুরের প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। যা রক্তের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। গবেষণায় বলা হয়েছে, দুধে খেজুর ভিজিয়ে রেখে তা কিছুক্ষণ গরম করার পর ১৮ - ৫৫ বছর বয়সের যে কোন মানুষ খেলে তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তাই দুধ খেজুর খেলে অ্যানিমিয়া সেরে যাই।

অন্তঃসত্তার স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ গরুর দুধে খেজুর ভিজিয়ে খেলে অন্তঃসত্ত্বা তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এর ফলে গর্ভে থাকা শিশুর হার ও রক্ত তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এজন্য রাতের বেলা পাঁচ-ছয়টি খেজুর দুধের মধ্যে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা দুধ এবং খেজুর ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে হবে।

বয়সের ছাপ দূর করেঃ দুধ ও খেজুরে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। যেগুলো মুখের চামড়া কুচকে যাওয়া, বয়সের ছাপ দূর করে। দুধে কয়েকটি খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে দুধ ও খেজুর ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে 10-15 মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। সপ্তাহে একদিন এই পেস্ট মুখে লাগালে উপকৃত হবেন।

জীবনী শক্তি বৃদ্ধি করেঃ ১০০ গ্রাম খেজুর থেকে প্রতিদিন ১৫% শক্তি পাওয়া যায় আর দুধ থেকে পাওয়া যায় 9%।তাই দুধ এবং খেজুর একসাথে খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়।

প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়ঃ দুধের সঙ্গে খেজুর ভিজিয়ে খেলে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে ছাগলের দুধের মধ্যে খেজুর ভিজিয়ে রেখে তা ভালোভাবে মিশিয়ে এলাচ এবং মধু মিশিয়ে খেতে হবে।

শারীরিক দুর্বলতা দূর করেঃ খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা এবং দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি। এই দুটি উপাদান যদি একসাথে মেশানো হয় তাহলে এর পুষ্টিগুণ অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত দুধে খেজুর মিশিয়ে খেলে শরীর দুর্বল লাগা, মাথা ঘুরা সহ যত রকমের শারীরিক দুর্বলতা আছে সবগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। খেজুর খেলে পেট পরিষ্কার থাকে।

চোখের সমস্যা দূর করেঃ দুধ এবং খেজুর চুল এবং ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের দাগ দূর করে হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।

দিনে কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত

একজন ব্যক্তি দিনে কয়টা খেজুর খেতে পারবেন সেটা তার শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই প্রতিদিন কতগুলো খেজুর খাওয়া উচিত তা একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে এবং পরিবর্তন হতে পারে। তবে একবারে অনেকগুলো খেজুর না খাওয়াই ভালো। 

কারণ খেজুরে অতিরিক্ত পরিমাণ ফাইবার থাকে যা বেশি পরিমাণ খেলে হজমে সমস্যা হয়। একজন সুস্থ ব্যক্তি সকালে বা বিকালের নাস্তায় দুই তিনটি খেজুর খেতে পারেন। এবং যারা ব্যায়াম করেন অথবা কায়িক পরিশ্রম বেশি করেন তারা পরিশ্রম শেষে কিংবা শুরুতে চার পাঁচট খেজুর খেতে পারেন।

খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

খেজুরের পুষ্টিগুণ নিয়ে নতুন করে বলার তেমন কিছুই নেই। খেজুর এই ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, পানি, আমিষ, শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, খনিজ পদার্থ, আইরন, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার ইত্যাদি বিদ্যমান। 

নিয়মিত খেজুর খেলে নানারকম উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। এটি শরীরের অনেক রকম রোগ থেকে মুক্তি দেয়। চলুন জেনে নেই খেজুর ভিজিয়ে খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।
  • খেজুরে ফাইটিক এসিড রয়েছে যা ভিজিয়ে রাখলে দূর হয়ে যায় এবং খেজুরের পুষ্টিগুণকে শোষণ করে। ভিজিয়ে রাখলে খেজুর সহজে হজম হয়। তাই আপনার যদি এই অভ্যাস না থেকে থাকে তবে আজ থেকেই খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • আপনি যদি খেজুরের শক্তি পুরোপুরি শোষণ করে নিতে চান তাহলে অন্তত পক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে খালি পেটে সেই খেজুর গুলো খান। সারাদিন সতেজ অনুভব করবেন। খেজুর খেলে অনেক লম্বা সময় পেট ভরে থাকে।
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য খেজুর একটি উপযুক্ত খাবার। কারণ খেজুর খেলে দিনের অনেকটা সময় ক্ষুধা কম লাগে। ফলে খাবার আগ্রহ থাকে না। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকাই এটি পেট ভরিয়ে রাখে। নিয়মিত ভেজানো ভেজিয়ে খেলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা খেজুর সম্পর্কিত সকল বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যেমন খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়, খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা, রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, ভেজানো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, পুরুষের জন্য খেজুরের উপকারিতা, সকল বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। 

আমরা সম্পূর্ণ রূপে চেষ্টা করেছি সঠিক তথ্যগুলো আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি আমাদের লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে। আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এটি আপনার পরিচিত জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। 

প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয়ে তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ, আমরা এখানে সকল বিষয়ে নিত্য নতুন আর্টিকেল লিখে প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url