প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল - কিভাবে স্মার্টলি কথা বলতে হয়

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকে আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাকে প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল শিখিয়ে দিব। আপনি যদি প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশলগুলো শিখে তা প্রয়োগ করেন তাহলে আপনার প্রিয় মানুষটি আপনার প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হবে। সেই সাথে সাথে কিভাবে স্মার্টলি কথা বলতে হয় তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করব।
ছবি
আপনি যদি প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল গুলো ফলো করেন তাহলে আশা করি আপনার প্রিয় মানুষটি আপনার প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। তাই দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

ভূমিকা

আজকাল মানুষের কাছে খুবই কম সময় থাকে। তাই আজকাল সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসাও অনেক কম। কিছু লোক তো এমন আছে যারা জানে না প্রিয় মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়। কিভাবে রোমান্টিক হতে হয় বা কথা বলতে হয় সেটাও তারা জানে না। যার ফলে ধীরে ধীরে প্রেমিক-প্রেমিকা এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। 

পরবর্তীতে এই দূরত্বকে ঘনিষ্ঠতায় পরিবর্তন করতে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা এই সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা আজকে আলোচনা করব প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল। যা জানার পরে আপনার প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলতে সুবিধা হবে। সাথে সাথে আরো অনেক আলোচনা করা হবে। 

যেমন, কিভাবে স্মার্টলি কথা বলতে হয়, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল, মানুষের সাথে সুন্দর করে কথা বলার কৌশল এবং বুদ্ধি করে কথা বলা। এই সমস্ত বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। শুরু করা যাক।

প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল

প্রিয় মানুষটির সাথে কে না সুন্দরভাবে কথা বলতে চাই। কিন্তু অনেকেই জানে না কিভাবে সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে হয়। সেজন্য তারা তাদের মনের ভাবও ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারেন না। যার কারণে ধীরে ধীরে প্রেমিক-প্রেমিকা এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং এই দূরত্বকে ঘনিষ্ঠ করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। 

এটা এমন কোন সমস্যা না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আপনাকে শুধু জানতে হবে প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল কি। আপনি যদি এই সমস্ত সম্পর্কে জানেন তাহলে আপনার প্রিয় মানুষটির সাথে স্বাচ্ছন্দে কথা বলতে পারবেন। এমতাবস্থায় আপনার চিন্তা করার কোন কারণ নেই। আমরা এখন আপনাকে জানাবো প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল কি।

প্রিয় মানুষটির প্রশংসা করুন: প্রশংসা শুনলে সবাই খুশি হয়। আপনি যদি প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলতে চান তাহলে মুখে মিষ্টি হাসি রেখে আপনার প্রিয় মানুষটি প্রশংসা করুন। দেখবেন সে এমনিতেই আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি মানুষেরই কিছু না কিছু সৌন্দর্য রয়েছে। আপনি সেই বিষয়গুলো লক্ষ্য করে প্রশংসা করুন।

ভালোবাসা প্রকাশ করুন: আপনার প্রিয় মানুষটিকে মাঝে মাঝে ভালোবাসার কথা বলুন। প্রিয় মানুষটিকে মাঝে মাঝে ভালোবাসার গান শোনাতে পারেন। আবার আপনি এসএমএস এর মাধ্যমেও তাকে ভালোবাসার কথা জানাতে পারেন। মাঝেমধ্যে কথার ফাঁকে ফাঁকে বলুন, "আমি তোমাকে ভালোবাসি"।

যত্নবান হতে শিখুন: প্রিয় মানুষের যত্ন অবশ্যই নিতে হবে। কারন কেয়ারিং মানুষের প্রতি সবাই একটু বেশি আকৃষ্ট হয়। আপনার প্রিয় মানুষকে আপনি কখনোই ব্যস্ততা দেখাবেন না। প্রিয় মানুষের খাওয়া দাওয়া, লেখাপড়া, ঘুম এ সকল ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হন। কারণ সে চাই কেউ একজন তার যত্ন নিক, নিয়ম করে ভালোবাসুক।

মাঝে মাঝে উপহার দিন: উপহার পেলে সবাই খুশি হয়। তাই প্রিয় মানুষটির জন্য মাঝে মাঝে উপহার কিনুন। ছোট হোক কিংবা বড় হোক একটি গিফট আপনার ভালবাসাকে আরো অনেক গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে।

সব সময় হাসি খুশি থাকুন: প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলার সময় সব সময় মুখে হাসি রাখুন। হাসিখুশি থাকলে আপনার সাথে যে কোন মানুষই কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। কথা বলার সময় অবশ্যই আপনার প্রিয় মানুষটির চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। এতে করে প্রিয় মানুষটি আপনার কথায় আরো অনেক বেশি আকৃষ্ট হবে।

পরিপাটি থাকুন: পরিপাটি মানুষ সবাই পছন্দ করে। আপনার গায়ের রং যেমনই হোক সেটা কোন সমস্যা নয়। আপনি যদি পরিপাটি থাকেন তাহলে আপনার প্রিয় মানুষটি আপনাকে অবশ্যই সময় দিবে। এজন্য আপনাকে সবসময় পরিপাটি থাকার চেষ্টা করতে হবে। প্রিয় মানুষটি সামনে যাওয়ার আগে সুন্দর পোশাকটি পরে নিন।

মাঝে মাঝে রসিকতা করুন: মানুষের সাথে মাঝে মাঝে রসিকতা করুন। কারণ নিজেকে হাসাতে পারে এমন মানুষের সাথে মানুষ নিজেকে বেশি কমফোর্টেবল মনে করে। তাই প্রিয় মানুষদের সাথে কথা বলার সময় মাঝে মাঝে ছোট ছোট জোকস বলুন। অথবা যে কথাটি বললে আপনার প্রিয় মানুষ খুশি হয় সে কথাগুলো বারবার বলার চেষ্টা করুন।

ভালো একজন বন্ধু হন: আপনি যদি একজন ভালো বন্ধু হতে না পারেন তাহলে আপনি কোন ভাবে প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলতে পারবেন না। আপনার প্রিয় মানুষের সাথে আপনি রোমান্টিক হতে চাইলে সবচাইতে বড় বেস্ট ফ্রেন্ড আপনাকে হতে হবে। তাই আপনি আপনার প্রিয় মানুষের সাথে একজন ভালো বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করুন।

প্রিয় মানুষটির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন: প্রিয় মানুষটি যখন আপনার সাথে কথা বলবে তখন আপনি অবশ্যই তার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনবেন। কারণ তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে সে আপনার প্রতি বেশি খুশি হবে। তার কথায় গুরুত্ব দিন এবং তাকে বোঝার চেষ্টা করুন।

ভালো মানুষ হন: আপনি যদি একজন ভালো মানুষ হন তাহলে আপনাকে সবাই ভালবাসবে। একজন ভালো মানুষের সাথে থাকবে। এখন খারাপ মানুষ যদি মানুষকে আকৃষ্ট করে তাহলে তা বেশিদিন টিকে না। আপনার প্রিয় মানুষটিকে যদি আপনি কোন কিছু দিয়ে আকৃষ্ট করতে না পারেন, তাহলে আপনি যদি একটি ভালো মানুষ হন। তবে আস্তে আস্তে সে নিজে থেকেই আপনার প্রতি অবশ্যই আকৃষ্ট হবে। আপনাকে ভালবাসবে।

কিভাবে স্মার্টলি কথা বলতে হয়

আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য এবং অনুভূতি প্রকাশের জন্য কথা বলার কোন বিকল্প নেই। আমাদের প্রতিদিন শত শত মানুষের সাথে ভাবের আদান-প্রদান করতে হয়। আর এই মানুষগুলো সর্বপ্রথম আমাদের কথা বলার ধরন দেখে আমাদের ব্যক্তিত্বের বিচার করে থাকেন। কথা বলার মাধ্যমেই তাদের মনে আমাদের চরিত্রের একটি প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়। 

আপনি যদি কর্কশ কণ্ঠে কোন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন তাহলে সবাই আপনাকে বেয়াদব বা খারাপ মানুষ হিসেবে ভাববে। সুতরাং আপনার পোশাক আশাক যতই সুন্দর হোক না কেন আপনি যদি কথা বলতে না পারেন তাহলে সবই বৃথা। আমাদের প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল যেমন জানা দরকার ঠিক তেমনি কিভাবে স্মার্টলি কথা বলতে হয় সেটাও জানতে হবে। 

কারণ এই গুণটি যদি আপনার থাকে তাহলে আপনার চারিত্রিক গুণাবলী আরও সমৃদ্ধ হবে। স্মার্টলি কথা বললে আমাদের ব্যক্তিতে একটি আলাদা মাত্রা যোগ হয়। এবং এটি ব্যক্তিত্বের মাত্রা বহন করেন। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে স্মার্টলী কথা বলতে হয়।

আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করুন: আমাদের দেশে এমন কিছু আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে যেগুলো শুনে কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই যে সেগুলো আসলে বাংলা ভাষা নাকি অন্য কিছু। নিজ নিজ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। কিন্তু এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে তা যেন আপনার কথার উপরে কোন প্রভাব না ফেলে। 

আপনার কথায় যদি আঞ্চলিক ভাষা ঢুকে পড়ে তাহলে আপনার অফিসে ক্লাসে বা বন্ধুদের সামনে যেখানে যান সেখানেই আপনাকে অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় আঞ্চলিক ভাষা সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করুন।

শব্দের উচ্চারণ ঠিক করুন: অনেক সময় আমরা ঠিক ঠাক কথা বলি। কিন্তু কিছু কিছু শব্দ আমরা সেই ভুলভাবে উচ্চারণ করি। প্রথমেই ঠিক করে ফেলুন আসলেই আপনার কোন কোন শব্দগুলো উচ্চারণে সমস্যা হচ্ছে। অল্প কিছু শব্দের উচ্চারণ আপনার কথায় আকাশ পাতাল কোনো পরিবর্তন একদিনে এনে দিতে পারবে না। নিজে নিজে প্র্যাকটিস করুন। তাহলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

মিশ্র ভাষা ত্যাগ করুন: অনেকে ইংরেজি কিংবা হিন্দি ভাষায় কথা বলে নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবে। আপনি ইংরেজিতে অবশ্যই কথা বলবেন। কারণ এটা আমাদের আন্তর্জাতিক ভাষা। তবে যখন ইংরেজিতে কথা বলার দরকার ঠিক তখনই কথা বলুন। 

বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলে প্র্যাকটিস করতে পারেন। কিন্তু একজন বাঙালি হয়ে সবসময় ইংরেজিতে কথা বলা, শুধু মাত্র স্মার্টনেস দেখানোর জন্য। আপনি একটি বাক্যের মধ্যে অর্ধেক বাংলা অর্ধেক ইংরেজি বলে ভাবছেন আপনি খুব স্মার্টলি কথা বলছেন। আসলে এটা আপনার ভুল ধারণা।

কথা বলার আগে চিন্তা করুন: হুট করে কোন কথা বলে না ফেলে আগে কি বলতে চান সেটা মনে মনে চিন্তা করুন। সেই সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে কিনা। আপনার কথা শ্রোতার কেমন লাগবে সে বিষয়টি ভাবুন। কথা বলার আগে একটু চিন্তা করলে অনেক বেফাঁস কথা বলার হাত থেকে রক্ষা করবেন। এতে করে আপনার কথা যৌক্তিক হয়ে উঠবে।

কথার মাঝে বিরতি দিন: আমরা যখন বন্ধুবান্ধবদের সাথে কিংবা বাসায় কথা বলি তখন অনেক সময় আমাদের খেয়ালে থাকে না আমরা আসলে কি বলছি। অনেক দ্রুত কথা বলে ফেলি। এই অভ্যাসটি ত্যাগ করতে হবে। প্রত্যেকটা শব্দ ধরে ধরে আস্তে আস্তে কথা বলতে হবে। এতে করে আপনার কথা সবাই খুব সহজেই বুঝতে পারবে। এবং আপনাকে একটু আলাদা দৃষ্টিতে দেখবেন।

শব্দ ভান্ডারে নতুন শব্দ বাড়ানো: স্মার্টলি কথা বলার জন্য সেটা বাংলা হোক কিংবা ইংরেজি আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে শব্দ জানতে হবে। এতে করে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না যে একটা শব্দের পরে আবার কোন শব্দটা ব্যবহার করবেন। 

আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে সকল শব্দ ব্যবহার করি আপনি সেই শব্দের সমার্থক শব্দ দেখতে পারেন। যেগুলো আমরা সচরাচর ব্যবহার করিনা। সেই শব্দগুলো উপযুক্ত সময় বুঝে ব্যবহার করুন। এতে আপনার কথাটা যেমন সুন্দর হবে তেমন শ্রোতার মনে আপনার জন্য একটি ভালো ধারণা তৈরি হবে।

অঙ্গভঙ্গি ঠিক করুন: অঙ্গভঙ্গি আপনার কথার মূল্যকে অনেক গুণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার এক্সপ্রেশন, দাঁড়ানোর কিংবা বসার ভঙ্গি, হাত নাড়ানো এইসব দিকে বিশেষ মনোযোগ দিন। অতিরিক্ত কোন কিছুই করার দরকার নাই। 

তবে কথার সাথে যেন অঙ্গভঙ্গি ঠিক থাকে সেদিকে নজর রাখুন। এমন কিছু অভ্যাস মানুষের রয়েছে যেমন, কাঁধে হাত দেয়া, বারবার গায়ে খোঁচা দিয়ে নিজের দিকে মনোযোগ ফেরানোর চেষ্টা করা। এ সকল অভ্যাস থেকে থাকলে সেগুলো এখন থেকে ত্যাগ করুন।

আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন: মনে করুন আপনি আপনার ক্লাসে কিংবা অফিসে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করছেন, সে বিষয়ে আপনার সঠিক ধারণা রয়েছে। কিন্তু তারপরেও শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাসের অভাবে আপনি প্রতিযোগিতাতে পিছিয়ে পড়েন। 

ভয়েস টোন বাড়ান। যেখানে যেভাবে কথা বলার দরকার সেভাবে কথা বলুন। যাতে শ্রোতার মনে এমন ধারণা তৈরি হয় যে আপনি যেটা বলছেন সেটাই সঠিক। এমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বললে আপনি অনেক মিথ্যা বলে পার পেয়ে যেতে পারেন।

কথা শুনুন এবং বুঝুন: আপনি যার সঙ্গে কথা বলছেন তার প্রত্যেকটা কথা শোনার এবং বোঝার চেষ্টা করুন। এটিও স্মার্টনেসের একটি অংশ। কেউ আপনার দিকে লক্ষ্য করে কথা বলার সময় তার দিকে সরাসরি তাকান। কোন কথা বুঝতে সমস্যা হলে তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। তার কথায় সহমত পোষণ করুন। 

অথবা হাত নেরে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে আপনি তার কথা মনোযোগ সহকারে শুনছেন। কারো কথা শোনার সময় মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং তার প্রশ্নগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। কেননা প্রশ্নগুলো বোঝার পরে কেবলমাত্র আপনি সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।

অনুসরণ করুন: আপনি নিজস্বতা অবশ্যই বজায় রাখবেন। আপনি যেভাবে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেভাবেই কথা বলবেন। অন্যকে অনুসরণ করতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন না। তবে শিক্ষক ছাড়া একজন মানুষ কোন ভাবেই পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জন করতে পারে না। 

তাই কথা বলার স্টাইল শেখার জন্য আপনি আপনার যে কোন প্রিয় মানুষ বা অভিনেতাকে বেছে নিতে পারেন। তিনি কিভাবে কথা বলছেন তা বোঝার চেষ্টা করুন। তার কথা বলার সময় বডি ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো খেয়াল করুন। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে সেগুলো প্রয়োগ করুন।

অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল

মানুষ সামাজিক জীব। আমাদেরকে সবার সাথেই বসবাস করতে হয়। কেউ একা সমাজে চলতে পারে না। সমাজে চলতে গেলে আমাদের প্রতিদিন অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে হয়। এমন অনেকেই আছেন যারা অপরিচিত মানুষের সাথে কথা শুরু করতে পারেন না। 

আর যদি শুরু করেন ও তবে কি বলবেন তা খুঁজে পান।না। তাদের জন্য আমাদের এবারের আয়োজন। চলুন জেনে নেই অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল এবং প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল।

মন স্থির করে কথা বলুন: নানা রকম দুশ্চিন্তা এবং অস্থিরতা থেকে বের হয়ে আসুন। ঠিকঠাকভাবে অপরিচিত লোকের সঙ্গে আচরণ করুন। তাহলে আপনি খুব সহজে অপরিচিত কারো সাথে সময় কাটাতে পারবেন।

কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকান: অপর পাশের মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করার জন্য আপনার তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক রাখুন। বারবার চোখের পলক না ফেলে তাদের দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকান। কথা বলার সময় মুখে একটা মিষ্টি হাসি রাখুন।

সাধারণ বিষয় নিয়ে কথা বলুন: সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা শুরু করুন। যেমন, মনে করুন আপনারা দুইজনেই একই জায়গায় একই জিনিস কিনতে গেছেন। তাহলে আপনারা সেই পণ্যটি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আর এভাবেই কথা চালিয়ে যান।

আবার আপনি যদি কোন অনুষ্ঠানে যান তাহলে কিভাবে দাওয়াত পেলেন এবং অনুষ্ঠান কিভাবে উপভোগ করছেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু করুন। যদি অপর পাশের লোকটি অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করে। তবে আপনি সেই বিষয় নিয়ে কথা শুরু করুন। এতে আলাপচারিতাকে অনেক সুন্দর হবে।

পছন্দ-অপছন্দের প্রতি নজর দিন: অনেকের মধ্যে গিয়ে অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে চাইলে আপনাকে এমন কিছু বিষয় নির্বাচন দিতে হবে যেটা সবার পছন্দ। ফ্যাশনের কথা জানতে চাইলে ইন্টারনেটে খুঁজতে পারেন। রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিষয়গুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। যদি অপর পক্ষের কথা আপনার কাছে সুবিধাজনক মনে না হয় তাহলে আলাপ চালিয়ে না যাওয়াই ভালো।

বই পড়ুন: অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল শিখতে হলে আপনি এ বিষয়ে লেখা যেকোন ভালো বই পড়তে পারেন। এতে করে আপনি খুব সহজেই কৌশলগুলো জেনে যাবেন। অপরিচিত কারো সাথে কয়েক মিনিটের কথা আপনাকে সারা জীবনের বন্ধুত্ব বানাতে সাহায্য করতে পারে।

অভ্যাসের ব্যাপারে কথা বলুন: আপনি আপনার অভ্যাস নিয়েও কথা বলতে পারেন। তাছাড়া ও আপনার পছন্দের সিনেমা কিংবা অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা শুরু করতে পারেন। এছাড়াও অনেক বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে আপনি আপনার কথা চালিয়ে যেতে পারেন।

অন্যকে বলার সুযোগ দিন: অপরপক্ষের মানুষকেউ বলার সুযোগ দিন। নিজে বলার চেয়ে শোনার মাধ্যমে আপনি অন্যের ব্যক্তিত্ব, পছন্দ, অপছন্দ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং অপর পাশের ব্যক্তিটির এটি পছন্দ হবে। এভাবেই আপনি আপনার কথা চালিয়ে যেতে পারবেন।

মানুষের সাথে সুন্দর করে কথা বলার কৌশল

আপনি ভাবতে পারেন, কথা বলা এমন কি কাজ। কিন্তু এটা জেনে রাখুন যে মানুষের সাথে সুন্দর করে কথা বলার কৌশল যদি আপনার জানা থাকে তাহলে তা আপনার ক্যারিয়ারকে অনেক উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে। শিক্ষকের সঙ্গে, ব্যবসায় কোন কথা কিংবা কোন উদ্ভাবনী ভাবনা উপস্থাপনের সময় সুন্দর কথা বলা আপনার লক্ষ্য অর্জনকে অনেক সহজ করে দেয়। 

যারা পেশা জীবনে প্রাঞ্জল ভাবে কথা বলতে পারে তাদের জীবনে সাফল্য দ্রুত আসে। কথা বলা এমন একটি শিল্প যা নিয়মিত সাবলীল ভাবে কথা বলার মাধ্যমেই আয়ত্ত করা যায়।

শরীর ও মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশ করুন: হাসিমুখে কথা বলুন এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গির দিকে নজর রাখুন। কথা বলার সময় হাত কোথায় রাখছেন, ঘাড় কতটুকু বাঁকাচ্ছেন, ভ্রু কতটুকু ব্যবহার করছেন সবগুলো বিষয়ে খেয়াল রাখুন। চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। যার সাথে কথা বলছেন তার দিকে না তাকিয়ে কথা বলা এক ধরনের অভদ্রতা। আয়নায় নিজে নিজে তাকিয়ে কথা বলে শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ঠিক করুন।

আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করুন: অফিস কিংবা ক্লাসরুম যেকোনো জায়গায় বাংলা ভাষায় সুন্দরভাবে কথা বলতে হলে আঞ্চলিক ভাষা ত্যাগ করতে হবে। সেটা প্রথম দিকে হয়তো একটা সমস্যা হবে। কিন্তু তার পরেও ত্যাগ করতে হবে। ইংলিশে কথা বলার সময় আমেরিকান বা ব্রিটিশদের মতো শুদ্ধ উচ্চারণ করুন। কথার মধ্যে কখন, কিভাবে, কতটুকু বিরতি নিতে হবে তা নিজে নিজে উপলব্ধি করুন।

বুঝে কথা বলুন এবং শ্রোতাকে বুঝান: কথা বলার সময় আপনার মুখ এবং মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখুন। কথা শুরুর আগে কি বলবেন তা আগে থেকে গুছিয়ে নিন। প্রয়োজন হলে লিখে রাখুন। আপনি যার সঙ্গে কথা বলছেন তার কথা বোঝার চেষ্টা করবেন। আপনি যা বলছেন তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার শ্রোতা কি শুনছেন এবং কি বুঝাতে পারছেন। আপনার কথাতেই আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন। শ্রোতার মুখ দেখে শ্রোতাকে বোঝার চেষ্টা করুন।

বক্তৃতার ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করুন: অনেক মানুষের সামনে আপনি যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলবেন তখন আপনাকে কৌশলী হতে হবে। শ্রোতাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন। তাদের প্রতিক্রিয়া বুঝে প্রয়োজন হলে স্ক্রিপ্ট পরিবর্তন করুন। কথা বলার সময় বক্তব্য আগে থেকে গুছিয়ে নেবেন। প্রথম মিনিটে কি বলবেন, দ্বিতীয় মিনিটে কি বলবেন এবং বক্তব্য কি বলে শেষ করবেন তা আগে থেকে সাজিয়ে রাখুন।

জটিল ও নেতিবাচক কথা পরিহার করুন: সুন্দর করে কথা বলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কম কথায় বেশি কাজের কথা বলা। কথা বলার সময় কোন রকম জটিল শব্দ ব্যবহার করবেন না। সরল এবং সাধারণ শব্দ দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখতে হবে কথা বলার সময় যেন অন্য কারো নামে নেতিবাচক কথা না বলি। সমালোচনা করতে হলে যুক্তি দিয়ে করুন ।নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন।

অন্যকে অনুসরণ করে শিখুন: সুন্দর করে কথা বলার জন্য বিভিন্ন ভিডিও সহ বিজনেস রিভিউ কিংবা বিজনেস ম্যাগাজিনের বিভিন্ন ভিডিও দেখতে পারেন। হারভার্ট বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারাররা লাইভ লেকচার দিয়ে থাকেন। সেগুলো দেখতে পারেন। ভিডিও দেখে তাদের মত করে কথা বলার চেষ্টা করুন। আপনি পেশা জীবনে যার মত হতে চান তাকে অনুসরণ করুন।

বই পড়ুন: সুন্দর করে কথা বলার জন্য পড়ার কোন বিকল্প নেই। ফিকশন - ননফিকশন সব ধরনের বই পড়ুন। নানা বিষয়ে বই পড়লে আপনার মধ্যে বিভিন্ন রকমের জ্ঞান ও তথ্য জমা হবে। কথা বলার সময় বুঝে কথা বলতে এগুলো সাহায্য করবে। যে কোন মিটিং এ কথা শুরুর আগে যার সঙ্গে কথা বলছেন তাদের অনুমতি নিয়ে কথা বলা শুরু করুন। আকর্ষণের জন্য সঠিক তথ্য দিন। খেয়াল রাখতে হবে শ্রোতা যা জানেন তার পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়।

নিয়মিত চর্চা করুন: আপনি হুট করে সুন্দর করে কথা বলা আয়ত্ত করে ফেলতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে নিয়মিত চর্চা করতে হবে। শেখার সময় ভুল হবে কিন্তু তারপরেও শিখতে থাকুন। মানুষের খারাপ কথায় মন খারাপ না করে ভুল সংশোধন করার দিকে মনোযোগ দিন। স্পষ্ট করে কথা বলার অভ্যাস করুন।

অনলাইন কোর্স করুন: বিভিন্ন রকম ওয়েবসাইট থেকে এখন অনলাইনে সুন্দর করে বাংলা বলার কোর্স করানো হয়। আপনি সুন্দর করে কথা বলার জন্য এই কোর্স গুলো করতে পারেন। তাহলে খুব সহজেই কিভাবে সুন্দর করে কথা বলা যায় তা শিখে নিতে পারবেন।

বুদ্ধি দিয়ে কথা বলা

যারা কম কথা বলেন তারা অনেক বেশি বুদ্ধিমান। এর অর্থ যারা বেশি কথা বলেন তারা নিজের কথা দিয়ে মানুষকে বিরক্ত করে। তারা নিজেকে কম বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করে। নিজেকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করতে হলে আপনাকে বুদ্ধি দিয়ে কথা বলা জানতে হবে। প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশলের মধ্যে বুদ্ধি দিয়ে কথা বলাও অন্যতম। চলুন জেনে নেই মানুষের সাথে বুদ্ধি দিয়ে কথা বলার উপায়।
  • যারা কম কথা বলেন তারা চিন্তা করেন অনেক বেশি। একটি আলোচনার মধ্যে যখন সবাই কথা বলে তখন একজন কম কথা বলা মানুষের কথা বলতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু তার কথা বলা শুরু কিংবা কিছু বলার প্রধান কারণ হচ্ছে তিনি সকলের কথা শোনেন এবং চিন্তা করতে বেশি পছন্দ করেন। আর এই চিন্তা করার ক্ষমতাটির কারণেই একজন মানুষ বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে।
  • কথা বলতে হলে প্রচুর পরিমাণে লিখতে ও পড়তে হবে। কারণ যারা বুদ্ধিমান তারা চুপচাপ থাকেন বেশি এবং কথাও কম বলেন। তাদের এনার্জীর বেশিরভাগ অংশ গঠনমূলক কাজে ব্যয় করেন। এতে তাদের বুদ্ধি আস্তে আস্তে ধারালো হয়।
  • কম কথা বলা বিষয়টি মস্তিষ্কের জন্য ভালো। এতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সঠিক থাকে এবং কথা বলার আগে চিন্তা করে নেওয়ার সুযোগ হয়। যারা কম কথা বলেন তাদের মস্তিষ্ক অনেক শান্ত থাকে এবং দ্রুত কাজ করে। অতএব চিন্তা করে কথা বলার বিষয়টি বুদ্ধিমান মানুষের পরিচয়।
  • বুঝে শুনে স্থান ও কাল চিন্তা করে কথা বলা একজন জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমানের কাজ। তাই অবশ্যই এই বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখতে হবে। তাহলে আপনি বুদ্ধি দিয়ে কথা বলতে পারবেন।

মন্তব্য

আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার জন্য মোটামুটি একটা আইডিয়া পেয়েছেন। সাথে সাথে আমরা আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি সবগুলো আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। 

আমাদের লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি আপনার পরিচিত জনদের সাথে এটি শেয়ার করে দিতে পারেন। আমাদের লেখা সম্পর্কে কোন মতামত জানানোর থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনি নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। কারণ আমরা এখানে নতুন নতুন বিষয়ে আর্টিকেল লিখে প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url