পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয়-পেঁয়াজের জন্য কোন সার ভালো জানুন

পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয় এ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই জানতে চান। তাই আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয় তা নিয়ে আলোচনা করব। সেই সাথে সাথে পেঁয়াজের জন্য কোন সার ভালো এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। আপনি যদি জানতে চান পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয় তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।


বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ু পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযুক্ত। শুধু আমাদের যদি ভালোভাবে জানা থাকে পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয় তাহলেই আমরা এর ভালো ফলন পেতে পারি। চলুন পেঁয়াজ চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

ভূমিকা

পেঁয়াজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থকারী একটি ফসল। পেয়াজ সাধারণত মসলা এবং সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের প্রায়ই২৮৫.৬৬ হাজার একর জমিতে প্রায় ই ৭ লক্ষ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় প্রতি বছরে। শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর নানা দেশে পেঁয়াজ চাষ করা হয়। পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।

পেঁয়াজ সাধারণত তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন রকম মুখরোচক সালাদ বানাতে পেঁয়াজের ব্যবহার হয়। আজকে আমরা পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয় এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক।

পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয়

আমাদের যদি সঠিকভাবে জানা না থাকে যে পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয় তাহলে আমরা পেঁয়াজের ভালো ফলন আশা করতে পারি না। কারণ মাটির উপরে পেঁয়াজের ফলন নির্ভর করে। পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি হল উর্বর বেলে দোআঁশ মাটি। জমিতে অবশ্যই সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে।

সূর্যের আলো সহনশীল তাপমাত্রা এবং মাটিতে প্রয়োজনীয় রস থাকলে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়। রবি পেঁয়াজ চাষের ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ২৫০ সেন্টিমিটার তাপমাত্রা দরকার। পেঁয়াজ চাষের জন্য মাটির পিএইচ ৫.৮ থেকে ৬.৫ হলে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ ফলন আশা করা যায়।

পেঁয়াজের সার প্রয়োগ পদ্ধতি

জমি তৈরির সময় সাধারণত গোবর সার বা কম্পোস্ট সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। এছাড়াও লাগানোর সময় নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাস, সালফার এগুলো দিতে হয়। নিম্নে একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো শতক প্রতি সারের পরিমাণ:

সারের নাম

শতক প্রতি সার

ইউরিয়া

৯৭০ গ্রাম

পটাশ

৬১০ গ্রাম

জিপসাম

৪৪০ গ্রাম

টিএসপি

৮৯০ গ্রাম

গোবর

৩০-৩২ কেজি

এই সবগুলো স্যার পেঁয়াজ লাগানোর শুরুতে অর্ধেক পরিমাণে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকি অর্ধেকটা পেঁয়াজ লাগানোর 25 থেকে 50 দিনের মধ্যে দিতে হবে। তাহলে ভালো ফল পাওয়া যায়। জিংক সালফেট ২.৫ গ্রাম ও বোরাক 1.5 গ্রাম ১ লিটার জলে মিশিয়ে ৩০ তম দিন এবং ৬০ তম দিনে স্প্রে করতে হবে। তাহলে পেঁয়াজের ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার

পেঁয়াজ চাষ করতে গেলে পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয় তা নির্বাচন করার পরও অনেক রকম রোগ বালায় দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। চলুন জেনে নেই পেঁয়াজের প্রধান প্রধান রোগ গুলো কি এবং তার দমনের উপায় গুলো।

পার্পল ব্লচঃ পার্পল ব্লচ সাধারণত অলটারনারীয়া নামক ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে। এটি একটি বাহিত ছত্রাক এবং একটি রোগাক্রান্ত বীজের সাহায্যে এক মৌসুম থেকে অন্য মৌসুমে ছড়াতে পারে।

লক্ষণঃ প্রথমে পানি ভেজার মত দাগ পড়ে। যেগুলো পাতার বয়স বেশি সেগুলো থেকে দাগ পড়া শুরু হয়। দাগ গুলো আস্তে আস্তে লম্বা এবং বড় হতে থাকে। লম্বা এবং বড় দাগের মাঝখানে বেগুনি রঙের দাগ পরে। আস্তে আস্তে আক্রান্ত পাতাটি হলুদ হয়ে ঝুলে পড়ে। এতে করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং পেঁয়াজের ফলন কমে যায়। পাতা থেকে আস্তে আস্তে পুষ্পদণ্ড আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে বীজ উৎপাদনও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। রোগ লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরে যদি বৃষ্টি হয় এবং বাতাস বইতে থাকে তাহলে এই রোগ খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
রোগ প্রতিকারঃ
  • বীজ বপণের আগে ছত্রাকনাশক প্রভাব 200 অথবা রোভরাল ৫০ wp প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম করে ব্যবহার করে বীজ ছত্রাকনাশক করে নিতে হবে। সুস্থ এবং রোগ মুক্ত বীজ বাছাই করে বপন করতে হবে।
  • বীজ বপনের 15 থেকে 20 দিনের মধ্যে রগ্রাল ৫০ wp 2 গ্রাম এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করতে হবে। যদি ঘন কুয়াশা থাকে তাহলে ঘন ঘন অর্থাৎ সাত দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
  • আক্রান্ত পাতা এবং পুষ্পদন্ড কেটে ধ্বংস করে দিতে হবে।
  • সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • খুব বেশি আর্দ্র এবং উষ্ণ আবহাওয়া হলে ছত্রাক নাশক খুব ঘন ঘন স্প্রে করতে হবে।
  • বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক যেমন রোগরাল, ডাইফেন এম ৪৫, রিডোমিল গোল্ড, এমজেড ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
  • একই জমিতে পরপর দুই বছরের বেশি পেঁয়াজ লাগানো উচিত নয়।
বোট্রাইটিস লিফ ব্লাইটঃ সাধারণত Botrytid squamosa এবং Botrytis cinera নামক ছত্রাক এর কারণে হয়ে থাকে। বাতাসের আদ্রতা সাধারণত ৯৫ পার্সেন্ট বা বেশি হলে ছত্রাক আক্রমণ করতে পারে।

লক্ষণঃ ছত্রাক সাধারণত প্রথমে পাতায় আক্রমণ করে। ফলে পাতায় ছোট ছোট সাদা সাদা দাঁগ পড়ে। এক পর্যায়ে পাতা মরে যায় এবং পেঁয়াজের ক্ষেত দেখতে মনে হয় যেন পুড়ে গেছে।
রোগ প্রতিকারঃ
  • রোগাক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ তুলে ফেলতে হবে।
  • মাটি গভীরভাবে চাষ দিয়ে উল্টাপাল্টা করে দিতে হবে।
  • অবশ্যই সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
  • প্রতি কেজি ভিজিয়ে ২.৫ গ্রাম করে প্রভেক্স মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
  • রোগ লক্ষণ দেখা দিলে এক লিটার পানিতে এক গ্রাম করে ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর তিন চার বার স্প্রে করতে হবে।
কান্ড পচাঃ কাণ্ড পচা রোগ সাধারণত একপ্রকার কৃমি থেকে বিস্তার লাভ করে। যার নাম ডিটাইলেন ডিপসেছি। এই রোগ সাধারণত মাটি, পানি এবং অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।

লক্ষণঃ পাতা হালকা হলুদ বাদামি রঙের হয়। কান্ড মোটা হয়ে যায় এবং পাতা খাটো এবং পুরুত্ব বেশি হয়। কচি চারা বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফ্যাকাসে রংয়ের হয়ে যায়। বীজপত্র ফুলে ওঠে। পেঁয়াজের চামড়া নরম, হালকা ধূসর রং এবং পেঁয়াজের বাল্বের ওজন অনেকটা কমে যায়। কৃমি আক্রমণের পরে আবার যখন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন পেঁয়াজ থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হয়।
রোগ প্রতিকারঃ
  • পেঁয়াজ লাগানোর পূর্বে জমিতে মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করতে হবে।
  • সাথে সাথে প্রতি বিঘায় চার থেকে সাড়ে চার কেজি পুরাডন 5 গ্রাম মাটির সাথে মিশাতে হবে।
গুদামজাত রোগঃ গুদামজাত রোগ সাধারণত এসপারজেলাস, আরউইনিয়া এবং ফিউজ আরিয়ান নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে।

লক্ষণঃ গুদামজাত অবস্থায় পেঁয়াজ পচে যেতে থাকে। এক্ষেত্রে কালো পঁচা নরম, পচা এবং শুকনা পচা রোগ হয়ে থাকে।
রোগ প্রতিকারঃ
  • সুস্থ পেঁয়াজ গুদামজাত করতে হবে।
  • সংরক্ষণাগারে অবশ্যই বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • কিছুদিন পর পর পচা পেঁয়াজ বেছে ফেলে দিতে হবে। 
  • মাঝে মাঝে পেয়াজ উলটপালট করে দিতে হবে।

শেষ কথা

আমরা এতক্ষণ ধরে আর্টিকেলের মধ্যে পেঁয়াজ চাষের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। পেঁয়াজ কোন মাটিতে ভালো হয়, পেঁয়াজের জন্য কোন সার ভালো, পেঁয়াজের রোগ এবং প্রতিকার সকল বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনি আপনার মূল্যবান তথ্যটি আমাদের আর্টিকেল থেকে জানতে পেরেছেন।

আমাদের লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এই সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। অন্যান্য সফল বিষয়ে তথ্য জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ এখানে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন বিষয়ে আর্টিকেল লিখে প্রকাশ করা হয়। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url