ফলিক এসিড কেন খায়? ফলিক এসিডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা জেনে নিন

ফলিক এসিড কেন খায়? ভিটামিন ও খনিজের অভাবে নানা রকম রোগ হতে পারে। ফলিক এসিড হল পানি দ্রবণীয় ভিটামিন বি ৯ যা রক্তস্বল্পতায় আয়রনের সঙ্গে প্রদান করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ভিটামিনের মধ্যে এটি একটি। আজকে আমরা জানবো ফলিক এসিড কেন খায়। চলুন জেনে নেই ফলিক এসিড কেন খায় এই সম্পর্কে।
ফলিক এসিড
ফলিক এসিড মানবদেহে অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে ফলিক এসিডের অভাব পূরণ হয়। এইসব জিনিস খাবার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলিক এসিড কেন খায় চলুন এই ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেই।

ভূমিকা

ফলিক এসিড হল ভিটামিন বি৯ যা রক্তস্বল্পতায় আয়রনের অভাব পূরণ করে। কোন কোন সময় গর্ভঅবস্থায় শুধু ফলিক এসিড চিকিৎসকরা খেতে বলে। যা গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। ফলিক এসিড বা ফলেট ভিটামিন বি৯ পরিবারের সদস্য। এটি শরীরে সঞ্চিত থাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা ফলে ফলিক এসিড প্রসবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। 

রক্তকণিকা মাত্র ৪ মাস বেঁচে থাকে। তবে পুনরায় লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টিতে শরীরের প্রয়োজন হয় আয়রন ভিটামিন বি ১২ এবং ফলিক এসিড। দেখা যাচ্ছে লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টিতে ফলিক এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলিক এসিড কেন খায়? যার অভাবে শরীরের দুর্বলতা ক্লান্তি ভাব, অলসতা, মুখের আলসার, ধূসর বর্ণের চুল উঠে যাওয়া, জিব্বায় ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। 

আমাদের দেশে মুখে বা জিব্বায় আলসার হলে ট্যাবলেট খেতে দেওয়া হয়। এ কথা সত্য যে রাইবোফ্লিভিন বা ভিটামিন বি২ মুখের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। দৈনিক খাদ্য তালিকায় ফলিক এসিড থাকা উচিত। যা আমাদের শরীরের ফলিক এসিডের অভাব পূরণ করে। ফলিক এসিড বা ভিটামিন বি৯ এর কোন ঘাটতি যেন না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সবসময় সচেতন হওয়া প্রয়োজন। 

ফলিক এসিড কেন খায়, ফলিক এসিডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ফলিক এসিড কি আয়রন, আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর কাজ কি, ফলিক এসিড ট্যাবলেট কখন খেতে হয়, ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, ফলিক এসিডের সমৃদ্ধ খাবার এর সঙ্গে সঙ্গে অন্য প্রসঙ্গে গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব। সুতরাং বিস্তারিত জানতে হলে লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ফলিক এসিড কেন খায়

ফলিক এসিড হল ভিটামিন বি ৯ রক্তস্বল্পতা আয়রনের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। কোন কোন সময় গভর্অবস্থায় শুধু ফলিক এসিড প্রদান করা হয়। ফলিক এসিড ফলেট নামেও পরিচিত। ফলিক এসিডে আছে ভিটামিন বি ৯ ও প্রচুর পরিমান আয়রন। গর্ভাবস্থা থাকাকালীন ফলিক এসিড আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে। 

ফলিক এসিড কেন খায়, লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টিতে শরীরে প্রয়োজন আয়রন ও ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক এসিড। ফলিক এসিড লোহিত রক্ত কণিকাকে সৃষ্টি করে থাকে। অতএব ফলিক এসিড না খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে যায়, শরীর ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়, জিব্বা ফুলে যায়, মুখে আলসার হয়, চুল ধুসর বর্ণের হয়ে যায়। এছাড়াও ফলিক এসিড কেন খায়। 

আমাদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ ভালোভাবে কাজ করার জন্য ভিটামিন ও বিভিন্ন খনিজের ভূমিকা অনেক। এসব ভিটামিন ও খনিজের অভাবে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলিক এসিড বা ভিটামিন বি ৯ দ্রবণীয় রূপ এটি মানবদেহে প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

বিভিন্ন ভিটামিনের মধ্যে একটি হচ্ছে ফলিক এসিড। শরীরে ফলিক এসিডের ঘাটতি মেটাতে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বিকল্প নেই। ফলিক এসিডের অভাব হলে বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে ফলিক এসিডের অভাব পূরণ করতে হয়।

ফলিক এসিডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ফলিক এসিড বা ভিটামিন বি৯ হল পানিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন। যা শরীরে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে না। আবার পানিতে দ্রবণীয় বলেই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করার ফলে তা প্রসাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলিক এসিড suplement গ্রহণের ফলে সাধারণত তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। 

তবে বমি বমি ভাব, মুখের স্বাদ পরিবর্তন হওয়া, খিটখিটে মেজাজ, ক্ষুধার অনুভূতি কমে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি। ফলিক এসিডের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে কিছু কিছু ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়। যেমন খিচুনির ওষুধ, ক্যান্সারের ওষুধ, ম্যালেরিয়া ওষুধ ইত্যাদি। 

অতএব ফলিক এসিডের সাপ্লিমেন্ট এবং ওষুধ খাওয়ার মাঝে কিছু সময় বিরতি দেওয়া উচিত। অথবা এর থেকে মুক্তি পেতে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ফলিক এসিড কি আয়রন

অনেকে আমরা গুগলে সার্চ করে থাকি যে ফলিক এসিড কি আয়রন? ফলিক এসিড কেন খায়? ফলিক এসিড খেলে কি হয় এরকম নানা ধরনের প্রশ্ন আমাদের মনে থাকে। ফলিক এসিড এবং আয়রন এক কথা নয়। ফলিক অ্যাসিড হলো পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বি নাইন যা রক্তস্বল্পতা হলে আয়রনের সাথে খেতে বলা হয়। ফলিক এসিড নামেও পরিচিত এবং আয়রন সম্পূর্ণ আলাদা। 

একটি পুষ্টি উপাদান ফলিকের দুটি সরাসরি আয়রন নয়। কিন্তু ফলিক অ্যাসিড এবং আইরন একসাথে কাজ করে। ফলিক এসিড এক ধরনের খাদ্য উপাদান থেকে পাওয়া যায় এবং আয়রন অন্য আরেক ধরনের খাদ্য উপাদান থেকে পাওয়া যায়। সুতরাং দুইটাকে একসঙ্গে মিলিয়ে ফেলার কোন মানেই হয় না।

আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর কাজ কি

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেক বেড়ে যাই। এই চাহিদা সঠিকভাবে যদি পূরণ করতে না পারা যায় তাহলে শিশুর দেহে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। যেমন-

১। গর্ভবতী মায়ের আয়রন অভাবজনিত রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা হলে বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখা দেয়।
  • ক্লান্তি অনুভব করে
  • শরীরের শক্তি কমে যায়
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হয়
  • বুক ধরফর করে
  • ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়
২। আয়রনের অভাব জনিত রক্তশূন্যতা থেকে পিকা নামক একটি সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা দেখা দিলে খাবার নয় এমন কিছু খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হয়। যেমন মাটি, কাগজ ইত্যাদি।

৩। গর্ভকালীন রক্তশূন্যতা মা ও শিশু মৃত্যু শুকিয়ে বাড়িয়ে দেয়।

৪। পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রনের অভাব হলে গর্ভে শিশুর মানসিক গঠন এবং বিকাশ বাধা গ্রস্থ হয়। ফলে আপনার গর্ভে শিশুর জন্মের সময়ে কিংবা জন্মের পরে নানারকম জটিলতায় ভুগতে পারে। যেমন
  • নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম হয়
  • জন্মের সময়ে স্বাভাবিক তুলনায় ওজন কম হয়
  • শিশুর স্বাভাবিক বা ব্যবহারগত আচরণগত বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়
  • শিশুর শরীরে আয়রনের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম থাকে
আয়রন ফলিক এসিড সেবনের মাধ্যমে এই সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। অতএব একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই আয়রন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়া ভীষণ জরুরি।

ফলিক এসিড ট্যাবলেট কখন খেতে হয়

আমাদের মধ্যে অনেকের এমন ভুল ধারণা রয়েছে যে ফলিক এসিড কেন খায়। গর্ভধারণের প্রথম দুই তিন মাস ফলিক এসিড খাওয়ার কোন দরকার নেই। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। বরং গর্ভবতী মা এবং গর্ভের শিশুদের জন্য গর্ভধারণের একদম শুরু থেকে আড়রন ফলিক এসিড খাওয়া জরুরি। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাই গর্ব ধরণের পরে যত দ্রুত সম্ভব আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করে দিতে হবে। সম্পূর্ণ গর্ভকাল জুড়ে এবং সন্তান জন্মদানের তিন মাস পর্যন্ত এটি কন্টিনিউ করতে হবে। ফলিক এসিড গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়াও এটি শিশুর সঠিক সময়ে জন্ম নিশ্চিত করে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশু জন্মদানের মত জটিলতার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। 

গবেষণা থেকে জানা যায়, আয়রন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট সেবন করলে দুই বছর বয়সে শিশু তুলনামূলক বেশি লম্বা হয় এবং হাতের কাজে বেশি পারদর্শী হয়। অতএব গর্ব অবস্থায় শুরু থেকে পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত প্রতিদিন ৬০ মিলিগ্রাম আয়রনযুক্ত ট্যাবলেট খেতে হবে। 

এতে গর্ভাবস্থার সঠিক পরিমাণে আয়রন যোগ থাকে এবং সেই সাথে ফলিক এসিড থাকে যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সাহায্য করে এবং নানারকম জটিলতা প্রতিরোধ করে। তবে আয়রন জনিত রক্তস্বল্পতার সমস্যা যদি আপনার থেকে থাকে তবে ৬০ মিলিগ্রামের চেয়ে বেশি ডাক্তার আপনাকে আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেতে দিতে পারেন।

ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। চলুন সেগুলো জেনে নেই। ফলিক এসিড কেন কেন খাই এবং কিভাবে খাবেন এই বিষয়টি জানা খুব বেশি জরুরি।
  • ফলিক এসিড খালি পেটে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। তাই যে কোন খাবার খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে এক গ্লাস পানিতে এই ট্যাবলেট টি খান। পানির পরিবর্তে আপনি লেবুর শরবত বা কমলার রস দিয়ে এটি খেতে পারেন।
  • খালি পেটে ফলিক অ্যাসিড খেলে কারো কারো ক্ষেত্রে অস্বস্তি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে খাবারের সাথে অথবা খাওয়ার পর ভরা পেটে ট্যাবলেট খেয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
  • আইরন ফলিক এসি ট্যাবলেট এর সাথে এন্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এতে আয়রনের কার্যকারিতা অনেক কমে যায়। তাই এই দুই ধরনের ট্যাবলেট খাওয়ার মাঝে অন্তত এক থেকে দুই ঘন্টা বিরতি রাখুন।
  • কিছু কিছু খাবার শরীরে ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এই খাবার গুলো আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময় না খাওয়াই ভালো। যেমন চা ও কফি, ডিম, দুধ, দুধ জাতীয় খাবার, সয়াবিনযুক্ত খাবার।

লেখকের মন্তব্য

আমাদের আজকের আর্টিকেল এর মূল বিষয় ছিল ফলিক অ্যাসিড কেন খায়। আর্টিকেলের মধ্যে আমরা ফলিক এসিড কেন খায় এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেই সাথে সাথে ফলিক এসিডের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আমাদের লেখাটি পড়ে আপনি সামান্য হলেও উপকৃত হয়েছেন। 

তাতেই আমাদের সার্থকতা। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ করে ফলিক এসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তার গর্ভের সন্তানের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে যথেষ্ট পরিমাণ ভূমিকা রাখে। আপনার বাসায় যদি কোন গর্ভবতী মা থেকে থাকে তাহলে তাকে ফলিক এসিড খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন। এটি সকলের জন্যই উপকারী। 

আমাদের লেখা সম্পর্কে আপনার যদি কোন মতামত জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনি আপনার ব্যবহৃত স্যোশাল মাধ্যম গুলোতে লেখাটি শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে অন্যরাও এ বিষয়ে জানতে পারবে। 

আমাদের লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। কারণ এখানে আমরা নিত্য নতুন বিষয়ে প্রতিনিয়ত আর্টিকেল লিখে প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url