ঘুমালে শরীর ঘামে কেন - কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে
ঘুমালে শরীর ঘামে কেন এ বিষয়টি অনেকেই জানতে চান। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় হলো ঘুমালে শরীর ঘামে কেন। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় ঘাম হওয়া খুবই অসুবিধা জনক। ঘুমানোর সময় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াতে শরীর ঘামতে থাকে। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।
বিভিন্ন কারণে শরীর ঘুমানোর সময় ঘামতে পারে। সেগুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আজকে আমরা ঘামের কারণ সবগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
ভূমিকা
গরমকালের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীর ঘামতে থাকে। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেরই ঘুমানোর সময় শরীর ঘামে। আমরা সবাই খুব অস্থির হয়ে পড়ি যে ঘুমালে শরীর ঘামে কেন। বিভিন্ন কারণে রাতে শরীর ঘামতে পারে। যেমন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে, রজস্রাব চললে, বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করলে, রক্তের চাপ বেশি থাকলে, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে ঘুমানোর সময় শরীর ঘামতে পারে।
আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা ঘুমালে শরীর কেন ঘামে, কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে, অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ কি না এ সকল বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি একদম শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। আশা করছি আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। চলুন শুরু করা যাক।
ঘুমালে শরীর ঘামে কেন
রাতের ঘুমানোর সময় ঘাম আপনার বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটাতে সক্ষম। এ কারণে আপনি অস্বস্তি বোধ করবেন। রাতের ঘাম আপনার কিছু শারীরিক অসুস্থতার সূত্রপাত হতে পারে। ঘুমের সাথে সাথে আপনার জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, নির্দিষ্ট স্থান অস্বস্তি, কাশি অথবা ডায়রিয়া এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নেই কি কি কারনে শরীর ঘামে।
বিভিন্ন প্রকার সংক্রমণ: ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে ঘুমের মধ্যে শরীর ঘামতে পারে। আপনার শরীরে যদি যক্ষা কিংবা এইচআইভি রোগ থেকে থাকে তাহলে ঘুমানোর সময় শরীর ঘামতে পারে।
ক্যান্সার চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: ক্যান্সার হলে সাধারণত বিভিন্ন প্রকার থেরাপি প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন রেডিয়েশন কিংবা কেমোথেরাপি। এ ধরনের থেরাপির কারণেও ঘুমের মধ্যে শরীর ঘামতে পারে।
হরমোন: বিভিন্ন প্রকার ও হরমোনের অস্বাভাবিক নিঃসরণের ফলে শরীর ঘামতে পারে। অর্থাৎ আপনার যদি হরমোন জনিত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে রাতের বেলা অত্যধিক পরিমাণে ঘাম হতে পারে।
মেন্স বন্ধ হয়ে যাওয়া: সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে মহিলাদের মনো পোজ দেখা দেয়। হঠাৎ করে দেখা দেওয়ার কারণে রাতের বেলা শরীর প্রচন্ড ঘামতে পারে। তবে এই সমস্যা সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে। তারপরে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এটা একটা প্রাকৃতিক বিষয়। রাতের ঘাম কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার মদ্যপান, মসলাযুক্ত খাবার এবং ক্যাফেইন খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
ঔষধ: এনটি ডিপ্রেশন, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা অন্যান্য ধরনের ওষুধ খাওয়ার ফলেও মাঝে মাঝে রাতের শরীরের ঘাম অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। ঘাম গ্রন্থী যেহেতু শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই ওষুধগুলো মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে। তাই রাতের বেলা শরীর ঘামতে থাকে।
অতিরিক্ত উদ্বেগ: অতিরিক্ত উদ্বেগ বোধ করলেও রাতের বেলা শরীর ঘামে। উদ্বেগ, প্যানিক-এটাক, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, হার্টবিট দ্রুত হওয়া এগুলোর প্রাথমিক লক্ষণ। রাতের ঘাম কমাতে হলে অবশ্যই উদ্বেগ কমাতে হবে। আর উদ্বেগ কমাতে হলে উদ্বেগের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যায়াম, গান শোনা কিংবা স্থিরতা অনুভব করাই এরকম কাজ বেশি করতে হবে। এরপরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হাইপার হাইড্রোসিস: রাতের ঘাম অনেক সময় হাইপার হাইড্রোসিসের কারণেও হতে পারে। হাইড্রোসিস শব্দের অর্থ হলো শরীর স্বাভাবিকভাবেই নিজের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ঘামে। এই অতিরিক্ত ঘাম শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ হয় যেমন হাতের তালু, পা, মাথা ইত্যাদি।
এতে বোঝার একমাত্র উপায় হল আপনি শুয়ে আছেন কোন পরিশ্রম না করার পরেও আপনার শরীর ক্রমাগত ঘামতেই আছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
হাইপার থাইরয়েডিজম: আমরা জানি থাইরয়েড একটি গ্রন্থী যা হরমোন তৈরি করে এবং শরীরের সম্পূর্ণ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই থাইরয়েড গ্রন্থীতে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ হলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এর ফলে ঘাম হয়। যদি এমন কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই হরমোন টেস্ট করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। প্রয়োজনে রেডিও থেরাপি গ্রহণ করতে হবে।
কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে
গা ঘামার কারণে আমরা অস্বস্তিতে ভুগি। কিন্তু আমরা জানিই না যে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনের অভাবেও গা ঘামতে পারে। আপনি কি জানেন কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে? চলুন আপনাদের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করি যে কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে। সাধারণত ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে গা ঘামে। আপনার শরীরে যদি ভিটামিন বি ১২ এর অভাব দেখা দেয় তাহলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
শরীরে বেশি ঘাম হলে শরীর খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের রোগ আমাদের শরীরের বাসা বাঁধতে পারে। তাই যে সকল খাবারে ভিটামিন বি ১২ রয়েছে সে ধরনের খাবার আমাদের খাওয়া উচিত। যেমন দুধ, ডিম, সবুজ শাক-সবজি, ছোট মাছ, কলা, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে হবে। তাছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফলমূল যেমন তরমুজ, পেপে, আম, কামরাঙ্গা খেতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন মাছ, মাংস, ব্রকলি, পেঁয়াজ ইত্যাদি খেতে পারেন। অতিরিক্ত ঘাম হলে যেহেতু শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায় তাই সারাদিনের অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে। শরীরে, হাতে, পায়ে পাউডার দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে শরীরে পাউডার দিলে শরীর আরো বেশি ঘামতে থাকে।
যদি অতিরিক্ত ঘাম হয়ে থাকে তাহলে দিনে দুইবার করে গোসলের অভ্যাস করুন। যখনই সময় পাবেন মুখে হাতে ঠান্ডা পানি দেন। এরপরেও যদি ঘাম থেকে পরিত্রান না পান তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসরিকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ
ঘুমালে শরীর ঘামে কেন এটা জানা যেমনই জরুরী ঠিক ততটা জরুরী অতিরিক্ত ঘাম কোন কোন রোগের লক্ষণ। রোগ লক্ষণ গুলি যদি আপনার জানা থাকে তাহলে ঘাম হলেও আপনি কতটা গুরুত্ব দিবেন। না হলে আস্তে আস্তে আপনি গুরুতর রোগে অসুস্থ হয়ে পরতে পারেন। অতিরিক্ত ঘামের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন-
হৃদ রোগ: হার্টের যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে শরীর প্রচন্ড ঘেমে যাওয়া। ঘামের সাথে সাথে হৃদরোগের আরো কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন-বুক ধরফর করা, বুকে ব্যথা হওয়ার, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বুকে চাপ অনুভব করা এবং শ্বাসকষ্ট হওয়া। হার্টের গতি উঠানামা করলে কিংবা হার্ট ব্লক হয়ে গেলে শরীর মাত্রাতিরিক্ত ঘামতে থাকে।
ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগের সাথে ঘামের একটি সম্পর্ক রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগার হঠাৎ করে কমে গেলে শরীরে অস্বস্তি বোধ হয় এবং প্রচুর ঘাম হতে থাকে।
থাইরয়েড: হাইপার থাইরয়েড হলে মানুষের শরীরে থাইরয়েড হরমোন বেশি ক্ষরিত হয়। ফলে রোগীর খিদা বেড়ে যায় এবং ওজন কমে যায়। সেই সাথে সাথে অতিরিক্ত ঘাম হতে থাকে।
ব্রেন স্ট্রোক: প্রচুর পরিমাণে ঘাম হওয়া ব্রেন স্ট্রোকের একটি প্রাথমিক লক্ষণ। মাথা যন্ত্রণা, শরীরে প্যারালাইসিস এর মত অনুভূতি হওয়া এবং স্ট্রোকের আগে কয়েকদিন শরীরের প্রচন্ড ঘাম হয়।
নিউরোলজিক্যাল সমস্যা: বিভিন্ন ধরনের নিউরোলজিক্যাল সমস্যা যেমন মাথায় টিউমার, খিচুনি এগুলার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
ভয় ও টেনশন: কোন কারনে ভয় পেলে বা টেনশন হলে শরীরে এন্ট্রি নালীর ও নন এন্ট্রিনালির হরমোনের ক্ষরণ অতিরিক্ত হারে বেড়ে যায়। ফলে অটোনমিক নার্ভ সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত ঘাম হয়।
রক্তে ইনফেকশন: রক্তে যদি ইনফেকশন থাকে তাহলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং ব্লাড প্রেসার অনেকটাই কমে যায় এর ফলে হার্ট চাহিদা অনুযায়ী পরিণত পরিমাণ রক্ত পাম্প করে শরীরকে সাপ্লাই দিতে পারেনা। ফলে রোগীর দেহ ঠান্ডা হয়ে যায় এবং শীতল ঘাম হতে থাকে যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
শীতে ঘাম হওয়া কোন রোগের লক্ষণ
গরমে ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। কিন্তু শীতের ঘাম হওয়াটা মোটেই স্বাভাবিক বিষয় নয়। আপনার যদি শীতকালে ঘাম হয় তাহলে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। বিভিন্ন কারণেই শীতে ঘাম হতে পারে। যেমন আপনার যদি হার্টের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে ঘাম হবে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলেও শীতে ঘাম হতে পারে।
আপনার হার্টে যদি ব্লক থেকে থাকে সে ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ঘাম হবে। যারা স্নায়ু রোগে আক্রান্ত তাদের অতিরিক্ত ঘাম হয় শীতকালে। শীতে ঘাম হওয়ার আরও কিছু কারণ হলো অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া, ভিটামিনের অভাব। এ সকল কারনেও শীতকালে ঘাম হয়ে থাকে। থাইরয়েড সমস্যা থাকলেও শীতকালে ঘাম হতে পারে।
এছাড়াও ক্যান্সার হলে ক্যান্সার গ্রন্থি থেকে একপ্রকার তরল রস বেরুতে থাকে যা আমরা ঘাম হিসেবে বিবেচনা করে নেই। তাই শীতকালে ঘাম হলে অবশ্যই বিষয়টি আমাদেরকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। যাতে এই সমস্যাটি বড় কোন রোগে রূপান্তরিত হতে না পারে।
অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়
ঘাম মানব শরীরের একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। ঘামের মাধ্যমে মূলত শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা বের হয়ে আসে এবং শরীর শীতল হয়। সে দিক থেকে দেখলে ঘাম অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কিংবা সামান্য পরিমাণ পরিশ্রম করলেও অতিরিক্ত ঘাম হতে দেখা যায়। বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘাম হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিরাতে যদি ঘুমের মধ্যে ঘেমে বিছানা ভিজে যায়, জ্বর জ্বর ভাব হয়, গা ম্যাচ ম্যাচ করে তাহলে সাবধান হওয়া উচিত। কারণ এটা যক্ষা বা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। মানসিক চাপ, রাগ, ভয় এবং উদ্বেগের কারণে ঘাম বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করা কমে গেলে বিন্দু বিন্দু শীতল ঘাম হতে থাকে।
এরকম সমস্যা হলে দ্রুত চিনির শরবত খেয়ে নিলে সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। ঘামের সাথে সাথে যদি মাঝে মাঝে বুকে ব্যথা, বুকে চাপ অনুভব করা এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হার্টের কোন সমস্যা হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া জরুরী। যদি থাইরয়েডের সমস্যা থাকে তাহলেও বেশি ঘাম হয়। ঘাম হওয়ার পাশাপাশি ওজন কমে যাওয়ার, ডায়রিয়া, বুক ধরফর করা ইত্যাদি আরো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
একে সাধারণত হটফ্লাস বলা হয়। কিছু কিছু ঔষধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিরিক্ত ঘাম হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে চা বা কফি খাওয়ার পরেও ঘাম হতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম হলে মাথা ঘুরে, শরীর দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। ঘামের ফলে শরীর থেকে লবন পানি বের হয়ে যায় সেজন্য শরীর এমন দুর্বল লাগে।
ঘাম যদি বেশি হয় তাহলে অবশ্যই পানি, স্যালাইন পানি, ডাবের পানি ইত্যাদি পান করতে হবে। উদ্বেগ জনিত কারণ থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। যারা বেশি ঘেমে যান তারা চা কফি কম খাওয়ার অভ্যাস করুন। কোন ওষুধের কারণে এমনটা হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। জ্বর আছে কিনা দেখুন। শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি ঘামে।
তাই তাদের গরমের দিনে খুব বেশি কাপড় পড়াবেন না। বিশেষ করে মনে রাখা উচিত থাইরয়েডের সমস্যায় একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। থাইরয়েডের হরমোন পরীক্ষা করে থাইরয়েডের সমস্যা আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।
অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়
অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়, ঘুমালে শরীর ঘামে কেন এ বিষয়গুলো নিয়ে তো আমরা আলোচনা করেছি। এখন চলুন জেনে নেই অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায় কি। যাদের অতিরিক্ত ঘাম হয় তাদের উচিত নিজেকে সবসময় সতেজ রাখা। অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে কোন ধরনের পোশাক পড়ে তারা স্বস্তি বোধ করেনা।
শুধু পোশাক ভিজে যাওয়ায় নয় সাথে সাথে একটা উৎকট গন্ধ পাওয়া যায়। এমন কিছু ঘরোয়া টোটকা রয়েছে যেগুলো করলে অতিরিক্ত ঘামের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন জেনে নিই কি সেই ঘরোয়া টোটকা।
অ্যাপোল সাইডার ভিনেগার: অ্যাপোল সাইডার ভিনেগার ত্বকে ব্যবহার করলে ঘাম কম হয়। সাথে সাথে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার নিয়মিত খেলেও ত্বকের পিএইচ স্তর ঠিক থাকে এবং ঘাম কম হয়।
মেথি ভেজানো পানি: এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে সেই পানি থেকে খালি পেটে খেতে হবে। এতে করে অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং সাথে সাথে অনেক রকমের সমস্যা দূর হয়।
বেকিং সোডা: বেকিং সোডা সাধারণত শরীরের ঘাম শোষণ করে এবং দুর্গন্ধ মুক্ত রাখে। শরীরের যেই স্তরে ঘাম বেশি হয় সেখানেই পিএইচ তাপমাত্রা ঠিক রাখে। এক চামচ বেকিং সোডা নিয়ে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে তার সাথে নিজের পছন্দমত একটি সুগন্ধি তেল মিশিয়ে বগলের নিচে এবং শরীরে যে সকল জায়গা বেশি ঘামে সেসব জায়গায় লাগিয়ে 15-20 মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
টমেটো রস: টমেটোতে এন্ট্রিনজেন্ট রয়েছে যা ঘাম গ্রন্থি কে সংকুচিত করে দেয়। এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে অতিরিক্ত ঘামের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই এক সপ্তাহ টানা প্রতিদিন এক কাপ করে তাজা টমেটোর রস খাওয়া জরুরি।
চন্দন ও গোলাপজলের মিশ্রণ: চন্দন, গোলাপজল, আমলকির গুড়া এবং সারিভা একসাথে নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। ঘাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটি ভালোভাবে গায়ে লাগিয়ে রাখুন। প্রায় ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে করে খুব ভালো ভালো ফল পাওয়া যাবে।
খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন: অতিরিক্ত তেল, মসলা এবং ঝাল জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এর পরিবর্তে অল্প তেল মসলায় বানানো খাবার খেতে হবে। খুব বেশি গরম খাবার খাওয়া যাবেনা। স্বাভাবিক তাপমাত্রার খাবার খেতে হবে। রাতের বেলায় কয়েকটা কিসমিস ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা সে কিসমিস ভেজানো পানি খেতে হবে।
তেতো এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার যত বেশি খাবেন ঘাম তত কম হবে। অতিরিক্ত ঘাম হলে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। ফলের শরবত, গ্লুকোজ, স্যালাইন ইত্যাদি খেতে পারেন। ধূমপান অ্যালকোহল ও ক্যাফিন জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। তাহলেই আপনার শরীরের অতিরিক্ত ঘামের হাত থেকে আপনি মুক্তি পেতে পারেন।
ঘাম না হওয়ার কারণ কি
মানব শরীরে ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঘামের অনেক রকমের উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত ঘাম হলে তা বিভিন্ন রোগ লক্ষণও হতে পারে। ঘুমালে শরীর কেন ঘামে, অতিরিক্ত শরীর ঘামার কারন কি সকল বিষয়গুলো নিয়ে তো আমরা জানলাম। কিন্তু শরীরে যদি ঘাম না হয় তাহলেও বিভিন্ন প্রকার ক্ষতি হতে পারে। শরীরে ঘাম না হওয়া একটি বড় ধরনের রোগের লক্ষণ।
- শরীর যদি না ঘামে তাহলে হিটস্ট্রোক হতে
- ঘাম না হলে শরীরের রোগ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
- ঘাম না হলে ত্বকে বিভিন্ন রকম সংক্রমণ হতে পারে। এ থেকে মুখে ব্রণ উঠতে পারে
- ঘাম না হলে কিডনিতে পাথর হতে পারে
- ঘাম না হলে শরীরের ক্ষত সারতে অনেক দেরি হয়
এ কারণেই ঘাম হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় শরীর একদম ঘামেই না। অতিরিক্ত গরমে থাকলে কিংবা পরিশ্রম করলেও শরীর ঘামে না। চলুন জেনে নেই শরীরে ঘাম না হওয়ার কারণ কি।
শরীরে প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি ঘাম গ্রন্থী বিদ্যমান। কোন কারণে যদি ঘাম গ্রন্থি গুলো বন্ধ হয়ে যায় তাহলে শরীর আর ঘামে না। চর্মরোগ হলে কিংবা শরীর পুড়ে গেলে সে অংশ থেকে আর ঘাম হয় না। শরীরে ঘাম না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পানি কম খাওয়া। নিয়মিত বেশি বেশি পানি পান করলে অবশ্যই শরীরে ঘাম হবে। ঘাম নিয়ন্ত্রণকারী গ্রন্থি আঘাতপ্রাপ্ত হলে শরীরে ঘাম হয় না।
একজন মানুষের শরীর থেকে দৈনিক হাফ লিটার থেকে ৪ লিটার পর্যন্ত ঘাম ঝরা স্বাভাবিক। এর বেশি কিংবা কম হলে সেটি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা আমাদের শরীরে ঘাম হওয়া না হওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আমরা আজকে জানলাম ঘুমালে শরীর কেন ঘামে, অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ কি, অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ কি না, ঘামলে কি হয় ইত্যাদি আরো অনেক বিষয়। আশা করছি আপনি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন।
যদি আপনি শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যটি জানতে পেরেছেন। আমাদের লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার ব্যবহৃত যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করতে পারেন। নিত্য নতুন বিষয়ে জানতে হলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url