শ্বেতী রোগ কি বংশগত - বাচ্চাদের শ্বেতী রোগ কেন হয়
প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়ে শ্বেতী রোগ কি বংশগত? আপনি যদি জানতে চান শ্বেতী রোগ কি বংশগত? তাহলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমরা আজকে শ্বেতী রোগ কি বংশগত এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সাথে বাচ্চাদের শ্বেতী রোগ কেন হয় তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
শ্বেতী রোগ হলে শরীরে সাদা সাদা ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। কিন্তু সব সাদা দাগ শ্বেতী রোগ নয়। চলুন শ্বেতী রোগ কি বংশগত এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
ভূমিকা
শ্বেতী রোগের সঙ্গে আমরা অনেকে পরিচিত। শ্বেতী রোগে কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়, এটা কোন ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগও নয়। সাধারণত অনেকেই এই রোগের বিষয়ে ধারণা না থাকার কারণে এটি নিয়ে অনেক আতঙ্কে থাকেন। এ বিষয়ে ধারণা রাখা উচিত শ্বেতী রোগ কি বংশগত? শ্বেতী রোগীদের মধ্যে ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জনের বংশগত ধারায় হয়ে থাকে।
নিজের বাবা-মায়ের বংশীয় প্রভাব পড়তে পারে। আর ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে শ্বেতী রোগ হয়ে থাকে মেলানিনের সমস্যার কারণে। এই রোগটি বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি মানুষের মধ্যে রয়েছে। ত্বকের মধ্যে থাকা মেলানোসাইট কোষের মেলানিন অংশটির ভারসাম্য নষ্ট হলে ক্রিয়া কলাপে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও এই রোগটি বংশগত ভাবেও হয়ে থাকে।
শ্বেতী রোগ কি বংশগত? বর্তমানে শতকরা ৩০ জনের শ্বেতী রোগটি বংশগত ভাবে হয়ে থাকে। অনেকেই এটি নিয়ে আতঙ্ক থাকেন। শ্বেতী রোগ কি বংশগত, বাচ্চাদের শ্বেতী রোগ কেন হয়, শ্বেতী রোগ চেনার উপায়, রোদে পানি গরম করে গোসল করলে কি শ্বেতী রোগ হয়, শ্বেতী রোগ কিভাবে হয়, শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সে সকল বিষয়গুলো নিয়ে আজকের আর্টিকেল আমরা জানবো। শ্বেতী রোগ কি বংশগত তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
শ্বেতী রোগ কি বংশগত
আমাদের শরীরে বা ত্বকের যে কালার বা রং নিয়ন্ত্রণকারী কোষ সেটাকে আমরা বলি মেলানো সাইট। আমার বডি যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সে এমন সিস্টেম ভুলবশত মেলানো সাইটকে ডিসট্রয় করে নিন। যখন এটা ডিসট্রয় করে সেই জায়গায় তখন আর কোন কালার তৈরি হয় না। তখন সে স্বাভাবিকভাবে রং টা হারিয়ে ফেলে। চামড়ার কালার টা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
মূলত এটাই হলো শ্বেতী রোগ। শ্বেতী রোগের কারণ নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যত গবেষণা ফলাফল পাওয়া গিয়েছে এরমধ্যে দুটো জিনিসকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রধান হলো অটোমেটিক বডির এমন সিস্টেম যা একে নষ্ট করে ফেলে। দ্বিতীয়টা হল জেনেটিক। দেখা যায় যে ৯৯% অথবা ৩০% পেয়ে থাকে।
জেনেটিক্স ডিজিজ গুলো আমরা অনেকেই পেয়ে থাকি। এই রোগের যে এক্টিভিটি সেটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ থাকবে ফ্যামিলির কারো যদি শ্বেতী রোগ থাকে তাহলে অবশ্যই তা অন্যান্য পরিবারের যদি সন্দেহ হয় কোথাও একটু সাদা দাগ হয়েছে দেরি না করে সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এটাকে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা যায় এটা খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আমাদের ত্বকে সাদা হলে এটা সবসময় শ্বেতী রোগ মনে করার কোন কারণ নেই। বিভিন্ন কারণে কিন্তু আমাদের শরীরে বা ত্বকে সাদা দাগ দেখা যাই। এর মধ্যে একটি ফাঙ্গাস জনিত স্কিন প্রবলেম। যেটাকে সাধারণ মানুষ এটাকে ছোদ বা ছুলি বলে।
দেখা যায় শ্বেতী রোগের মত এরকম অসংখ্য কারণ আছে। এরকম কোন সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। শ্বেতী রোগ কি বংশগত কিনা বুঝার উপায় হল নিজের মা বাবা, ভাই, চাচা যদি শ্বেতী রোগ থাকে তাহলে আপনার হতে পারে। শ্বেতী রোগ ভালো করতে হলে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নরমাল অথবা আল্ট্রাভায়োলেট থেরাপি দিতে হবে।
শিশু ও বয়স্ক সবাই এই থেরাপি নিতে পারে। এই থেরাপি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার দিতে হয়। আশা করছি শ্বেতী রোগকে বংশগত এ বিষয়ে আপনি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
বাচ্চাদের শ্বেতী রোগ কেন হয়
আমাদের দেশের শিশুরা শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বড়দের চেয়ে শিশুরা শ্বেতী রোগে বেশি ভোগেন। কারণ শিশুদের ত্বকের অসম্পূর্ণ শিশুদের ত্বকের স্তর গুলো পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হতে পারে না। হলেও কোষের গঠনে দুর্বল হয়। সেবাম নিঃসরণ ক্ষমতা কম থাকে। অনেকেই জিজ্ঞেস করে থাকেন শ্বেতী কি বংশগত? হ্যাঁ, বেশিরভাগ বাচ্চাদের বংশগত কারণে শ্বেতী রোগ হয়ে থাকে।
এছাড়াও পেটের রোগ, জন্ডিস, কৃমি অন্যান্য পরজীবী সংক্রমণ, টাইফয়েড, অতিরিক্ত ক্ষত এগুলো থেকেও শ্বেতী রোগ হতে পারে। শ্বেতী রোগ সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন অনেকেই মনে করেন মাছ ও দুধ একসাথে একি সময়ে খেলে শ্বেতী রোগ হয় এবং আমড়া ও দুধ অথবা পেঁয়াজ ও দুধ একসাথে খেলে শ্বেতী রোগ হয়। আসলে এই কথাগুলো একদমই ভিত্তিহীন।
এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। গ্রামের মানুষেরা আরো অনেক রকম ভুল ধারণা নিয়ে থাকে। যেমন এই রোগটি ছোঁয়াচে এবং রক্ত দূষণের ফলে হয়। এ কথাগুলো ঠিক নয়। বড়দের ক্ষেত্রে শ্বেতী রোগ দুশ্চিন্তাও কারণেও হতে পারে। তবে বাচ্চারা তাদের ত্বকের কোষের গঠনের জন্য আক্রান্ত হয়ে থাকে। আশা করছি বাচ্চাদের শ্বেতী রোগ কেন হয় বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
শ্বেতী রোগ চেনার উপায়
অনেকেই ত্বকে যেকোনো ধরনের সাদা দাগ দেখলেই মনে করেন শ্বেতী রোগ। আসলে তা নয়। শ্বেতী রোগের বিশেষ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেগুলো প্রকাশ পেলে আপনাকে বুঝতে হবে যে এটি শ্বেতী রোগ। এ পর্যায়ে আমরা শ্বেতী রোগ চেনার উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
- শ্বেতী রোগের ক্ষেত্রে প্রথমে মুখ, হাত, বাহু, শরীরের যেকোনো খোলা জায়গা, যৌনাঙ্গের চারপাশে এবং নিতম্ব সহ শরীরের যেকোনো জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট সাদা দাগ হিসেবে দেখা দেয়। যা শ্বেতীর প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
- দু চোখের মাঝখানে, মাথার চামড়ায়, পুরুষের দাঁড়িতে, ভ্র এগুলোতে লক্ষণ দেখা দিতে পারে। দাড়ি এবং চুলের রং ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে।
- মুখ এবং নাকের মিউকাসে যে রংয়ের প্রলেপ থাকে তা উঠে যেতে পারে।
শ্বেতী রোগ কিভাবে হয়?
মানুষের শরীরের ত্বক এবং চুলের রং মেলানির নামক উপাদান দ্বারা নির্ধারিত হয়। যখন মেলানিন উৎপাদনকারী কোষগুলো মারা যায় বা তাদের কাজ বন্ধ করে দেয় তখন চামড়ার উপর শ্বেতী রোগ দেখা দেয়। এছাড়াও নানা কারণে শ্বেতী রোগ হতে পারে। অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকেন শ্বেতী রোগ কি বংশগত? হ্যাঁ, এটি বংশগত হয়ে থাকে। তবে শতকরা ৩০% বংশগত হয়।
বাকিগুলো অন্যান্য সকল কারণে হয়ে থাকে। যেমন বিভিন্ন রকম প্রসাধনীর ব্যবহার, অনেকদিন যাবৎ প্লাস্টিকের চটি ব্যবহার করা, বেল্ট এর মত কোন কিছু শরীরের এক জায়গায় চেপে বসে থাকা। শ্বেতী সব ধরনের ত্বকের মানুষকেই আক্রান্ত করতে পারে। তবে বাদামি বা কালো ত্বকের লোকদের মধ্যে এটি বেশি স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। এটি কোন জীব বা সংক্রামক নয়।
শ্বেতী রোগের সাথে জড়িত কিছু কুসংস্কার রয়েছে। যার সামাজিক প্রভাব আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই চাপে ফেলে দিবে। মেলানিন এর কাজ বন্ধ হয়ে গেলে শ্বেতী রোগ দেখা দেয়। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে মেলানিন এর অভাব কেন হয়। মেলানিনের অভাব কেন হয় তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সম্ভাব্য কিছু কারণ চিকিৎসকরা বলে থাকেন।
যেমন যদি আপনার নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম মেলানিন কোষ কে বহিরাগত আক্রমণকারী হিসেবে ভুল করে থাকে। ফলে আপনার শরীরে প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী কিছু কোষ মেলানো সাইটকে শত্রু ভেবে ধ্বংস করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করে থাকে। যা আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন হলে মেলানো সাইটের কাজ প্রভাবিত হয়।
প্রায় ৩০ টিরও বেশি জ্বীন শ্বেতী রোগের সাথে যুক্ত আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। শারীরিক এবং মানসিক চাপের ফলে মেলানো সাইট কোষগুলো তাদের কাজ বন্ধ করে দেয়। শারীরিক আঘাত পেলে এর চাপ আরো অনেকটা বেড়ে যায়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের কারণে দেহের মেলানো সাইটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে শ্বেতী আক্রান্ত হতে পারেন।
শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
শ্বেতী রোগে অনেকেই ভুলে থাকেন। শ্বেতী রোগকে ধবল রোগ ও বলা হয়ে থাকে। ত্বকের বিভিন্ন স্থানে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে। শ্বেতী এক ধরনের অটো ইমিউন ডিজিজ। এটি মূলত মেলানিনের ক্রিয়া-কলাপের বাধা সৃষ্টির ফলে, ভারসাম্য নষ্ট হলে দেখা দেয়। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জন বংশগত শ্বেতী রোগে আক্রান্ত। শ্বেতী রোগ ছোঁয়াচে নয়। ত্বকের একটি অদ্ভুত রোগের নাম হলো শ্বেতী। ঘরোয়া কিছু উপায়ে প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ অনেকটাই সারিয়ে তোলা সম্ভব। জেনে নিন শ্বেতী থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়।
পেঁপে ব্যবহার করুনঃ পেঁপে ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনি শ্বেতী রোগ সারিয়ে তুলতে পারেন। শরীরের যে অংশে শ্বেতী আক্রান্ত হয়েছে সেখানে পেঁপে টুকরো ঘষূণ। শুকিয়ে যাওয়ার পরে ধুয়ে ফেলুন। পেঁপে শ্বেতীর কারণে হওয়া মেলানিন পুনর্গঠন করতে পারে। তাই নিয়মিত পেঁপের জুস খেতে পারেন।
লাল মাটিঃ শ্বেতী চিকিৎসায় লাল মাটি অত্যন্ত কার্যকরী। লাল মাটিতে তামা থাকে। দুই টেবিল চামচ লাল মাটির সাথে এক টেবিল চামচ আদার রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে মিশ্রণটি ভালোভাবে লাগান। আদার রস শ্বেতী আক্রান্ত জায়গায় রক্ত প্রবাহ করতে সহায়তা করে।
তামার পাত্রে পানি পান করুনঃ শ্বেতীর সমস্যা থেকে বাঁচতে আপনি তামার পাত্রে পানি পান করতে পারেন। তামার পাত্রে থাকা পানি শরীরে মেলামিন উৎপন্ন করতে পারে।
তুলসী পাতাঃ তুলসী পাতা এনটিএজিং এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এবং তুলসী পাতার মিশ্রণ ত্বকে মেলানিন উৎপাদন করতে পারে। ত্বকের আক্রান্ত স্থানে তুলসী এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
নিয়মিত আখরোট খানঃ প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচটি করে আখরোট খান। আখরোটে ভিটামিন এ, সি, বি১২, ফলিক অ্যাসিড, তামা, ক্যালসিয়াম, জিংক, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি থাকে। যা পুনরায় ত্বকের বর্ণ ফিরিয়ে আনে।
হলুদ ব্যবহার করুনঃ সেটির চিকিৎসায় আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো হলুদ সরিষার তেলের সাথে হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে বিশ মিনিটের জন্য সেটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। ভালো ফল এর জন্য মিশ্রণটি দিনে দুইবার ব্যবহার করুন।
মন্তব্য
আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা শ্বেতী রোগ কি বংশগত এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সাথে সাথে বাচ্চাদের শ্বেতী রোগ কেন হয় তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে ইতোমধ্যেই এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।
যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন। যাতে সবাই শ্বেতী রোগ সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। এরকম আরো বিষয়ে পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url