শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম - ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি শিশুদের ভিটামিন এই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। সাথে সাথে ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা থাকছে।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল
শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো খুবই জরুরী। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। বিস্তারিত জানতে সঙ্গেই থাকুন।

ভূমিকা

৬ মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী সকল শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। কিন্তু বিভিন্ন বয়সের শিশুদের জন্য আলাদা আলাদা ভিটামিন এ ক্যাপসুল রয়েছে। কোন বয়সের শিশুকে কোন ধরনের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে, সেজন্য আপনাকে শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। 

আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম, ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপকারিতা, ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ভিটামিন এ ক্যাপসুল বেশি খেলে কি হয়, বড়দের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম। এই সবগুলো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সবগুলো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম

আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সের সকল শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। ১২ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী সকল শিশুকে একটি করে লাল ভিটামিন এ ক্যাপসুল এবং ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি করে নীল ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। 

শিশুদের জন্য ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। অভিভাবকদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা যেন অবশ্যই ভিটামিন এ ক্যাপসুল খায়। কারণ ভিটামিন এ ক্যাপসুল হাওয়ার কিছু উপকারিতা রয়েছে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে পারে, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখে, জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাচ্চার শরীরকে রক্ষা করে। 

এছাড়াও অনেক উপকারিতা রয়েছে। যার জন্য সঠিক নিয়ম মেনে শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন। শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর আগে কিছু খাইয়ে নিতে হবে। কারণ খালি পেটে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো উচিত নয়। 

অবশ্যই এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর আগে বাচ্চাকে ভরা পেটে নিয়ে আসতে হবে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর এক মাথা কেটে ভিতরের তরল পদার্থ শিশুকে খাওয়ানো হয় ।জোর করে বা বাচ্চা কান্নারত অবস্থায় থাকলে খাওয়ানো যাবে না। কারণ ওই সময় বাচ্চাকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ালে তরল মুখের লালার সঙ্গে বের হয়ে আসতে পারে। 

৬ মাসের কম বয়সী শিশু এবং ৫ বছর বয়সের বেশি শিশুদের এবং অসুস্থ শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না। ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মী এবং অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।

ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপকারিতা

৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী সকল শিশুকে সঠিক নিয়ম মেনে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো উচিত। কারণ ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর কিছু উপকারিতা রয়েছে। যেগুলো অন্য কিছু দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়। শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম মেনে তাদেরকে ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপকারিতা গুলো।
  • ভিটামিন এ ক্যাপসুল শিশুর রাতকানা রোগ এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে পারে।
  • শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  • ভিটামিন এ এর অভাবে কর্নিয়ার রোগ এবং কর্নিয়ার ক্ষত হয়ে যেতে পারে। যাতে আপনার বাচ্চার রাতকানা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং চিরদিনের মতো অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • ভিটামিন এ ক্যাপসুল স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখে।
  • ভিটামিন এ বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ থেকে শিশুর দেহকে রক্ষা করে।
  • শিশুর দেহের বৃদ্ধি বিশেষ করে। দেহের অস্থির কাঠামো বৃদ্ধিতে ভিটামিন এ ভূমিকা রাখে।
  • ভিটামিন এ ক্যাপসুল রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য রোগে প্রতিরোধ করে।
আশা করছি ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে পেরেছেন। আপনার বাচ্চা যদি ৬ মাসের বেশি এবং ৫ বছরের কম বয়সী হয় তাহলে অবশ্যই তাকে সময় মত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ান।

ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। যদি শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম মেনে খাওয়ানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন ভিটামিন এ এর মাত্রা যদি ২৫০০০ আইইউ কিংবা তার উপরে হয় তাহলে তার থেকে বিষক্রিয়া হতে পারে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল যদি মানসম্মত না হয় তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 

ভিটামিন এ ক্যাপসুল সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে কিংবা অনেক লম্বা সময় ধরে খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সরকারিভাবে ৬ মাস থেকে ১১ মাস শিশুদের ১০০০০০ আইইউ এবং ১২ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুদের ২০০০০০ আইইউ করে খাওয়ানো হয়। যা একজন বাচ্চার একদিনে যতটুকু ভিটামিন এ দরকার তার থেকে অনেক গুণ বেশি। 

এর ফলে হাইপার ভিটামিনোসিস অর্থাৎ ভিটামিন এ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অতিরিক্ত ভিটামিন এ শরীরের জন্য অনেকটাই ক্ষতিকর। এটি আস্তে আস্তে ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। সকল ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন এ এবং ডি এ দুইটির বিষক্রিয়া খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে। 

যে সকল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো- বমি, মাথায় প্রেসার বেড়ে যাওয়া, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা, ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, বাচ্চাদের মাথার নরম অংশ ফুলে যায়, রক্তস্বল্পতা, বাচ্চার বৃদ্ধি কমে যায়, ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, এ ধরনের আরো নানারকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 

এ সকল আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে ভিটামিন এ ক্যাপসুলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত।

ভিটামিন এ ক্যাপসুল বেশি খেলে কি হয়

বাচ্চাদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে বাচ্চাদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো উচিত। কারণ ভিটামিন এ ক্যাপসুল বেশি মাত্রায় খেলে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেক সময় বড়রাও ভিটামিন এ বেশি মাত্রায় খেয়ে ফেলেন। এর ফলে নানা রকম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। এবারের আলোচনার বিষয় ভিটামিন এ ক্যাপসুল বেশি খেলে কি হয়। 

ক্যাপসুল বেশি মাত্রায় খেলে বমি হতে পারে, মাথায় প্রেসার বেড়ে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে, পাতলা পায়খানা, অরুচি, পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা, শরীরে মাংসের মধ্যে ব্যথা এগুলো হতে পারে। তাছাড়া ও অস্থির লাগতে পারে, দুর্বল ভাব, শরীর ঝিমাতে পারে, ঠোঁট শুকিয়ে যায়, অতিরিক্ত ঘাম হয়, মাড়ির সমস্যা হতে পারে, চুল পড়া ওজন কমে যায় বাচ্চাদের মাথার নরম অংশ ফুলে যায়, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, লিভারের ক্ষতি হতে পারে, জ্বর, রক্তস্বল্পতা, বাচ্চা বৃদ্ধির হার কমে যায় এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা অনেক হারে বেড়ে যেতে পারে। 

এই সকল সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ডোজ ঠিক করে নিতে হবে। যাদের শারীরিক লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে ভিটামিন এ এর অভাব রয়েছে তাদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়া উচিত। খালি পেটের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়া যাবেনা। ক্যাপসুল এর মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

বড়দের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম

শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। বড়দেরও তেমন ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি ভিটামিন এ ক্যাপসুল নিয়মিত খান তাহলে প্রতিদিন একবার অথবা দুবার খেতে পারেন। অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। সবসময় আমাদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। 

যদি একান্তই খেতে হয় তাহলে ভরা পেটে খেতে হবে এতে করে অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। যেমন গ্যাস্টিকের সমস্যা, বমি ভাব ইত্যাদি। ভিটামিন এ এর মাত্রা ঠিক রেখে খান। কারণ সঠিক মাত্রায় ভিটামিন এ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি প্রয়োজনের চেয়ে কম খান তাহলে কোন রকম কার্যকারিতা সম্পন্ন হবে না। আবার যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন তাহলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। 

এছাড়া আপনার যদি ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়া নিয়ে কোন সন্দেহ বা প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সরাসরি একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ চিকিৎসকের দেওয়া মাত্রা অনুযায়ী ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেলে আপনি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ হবে। অর্থাৎ মূল কথা হলো নির্দিষ্ট মাত্রায় ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেই সাথে সাথে ভিটামিন এ ক্যাপসুলের উপকারিতা, ভিটামিন এ ক্যাপসুলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, বড়দের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম এগুলো নিয়েও আলোচনা রয়েছে। আপনি হয়তো বা এতক্ষণে পোস্টটি পড়ে সবগুলো বিষয়ে একটা ধারণা পেয়েছেন। 

লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম আরো পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয়ে পোস্ট লিখে থাকি। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url