জলাতঙ্ক কতদিন পর প্রকাশ পায় - জলাতঙ্ক রোগ কি ছোঁয়াচে
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা জলাতঙ্ক কতদিন পর প্রকাশ পায় এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি জানতে চান জলাতঙ্ক কতদিন পর প্রকাশ পায় তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। সেই সাথে জলাতঙ্ক রোগ ছোঁয়াচে কিনা সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করা হবে।
তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক জলাতঙ্ক কতদিন পর প্রকাশ পাই এবং জলাতঙ্ক ছোঁয়াচে কিনা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে।
ভূমিকা
জলাতঙ্ক হলো এক ধরনের ভাইরাস জনিত রোগ। প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। রেবিস ভাইরাস নামক এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা এই রোগের প্রসার। এই রোগ সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী এবং বন্যপ্রাণীদের প্রচুর সংক্রমিত করে। এর পরে মানুষ যদি এ প্রাণীগুলো লালার সংস্পর্শে আসে বা প্রাণীগুলো মানুষকে কামড় দেয় আঁচড় দেয় তাহলে জলাতঙ্ক মানুষের মধ্যে ছড়ায়।
জলাতঙ্ক রোগের কারণে প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২৪ থেকে ৬০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা জলাতঙ্ক কতদিন পর প্রকাশ পায়, জলাতঙ্ক রোগ ছোঁয়াচে কিনা, কোন প্রাণী কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগ হয়, জলাতঙ্ক রোগ হলে কি হয়, জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার এবং জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কোন প্রাণী কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগ হয়
যে সকল প্রাণী শরীরে রেবিস ভাইরাস বহন করে তাদের কামড়ে সাধারণত জলাতঙ্ক হয়। তার মধ্যে কুকুরের কামড়ে প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। অন্যান্য প্রাণীর যেমন বাদুর, বিড়াল, গবাদি পশু, ঘোড়া, শেয়াল এগুলো অন্যতম। আবার খরগোশ, ইঁদুর, মসিক, কাঠবিড়ালি এগুলোর মাধ্যমে রেবিস ভাইরাস ছড়ায় না।রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত প্রাণী মানুষকে কামড় দিলে, আঁচড় দিলে বা তাদের লালা যদি চোখ, মুখ বা নাকের সংস্পর্শে আসে তাহলে জলাতঙ্ক হয়। যেসব দেশে কুকুরের জলাতঙ্ক হয় সেখানে 99% এরও বেশি জলাতঙ্কের ঘটনা সাধারণত কুকুরের কামড়ানোর কারণে ঘটে থাকে।
জলাতঙ্ক কতদিন পর প্রকাশ পায়
আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেনা যে জলাতঙ্ক কত দিন পর প্রকাশ পায়। সে কারণে রেবিশ ভাইরাস আক্রান্ত প্রাণী কামড় দেওয়ার পরও তারা সচেতন হয় না। ফলে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। জলাতঙ্কে একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে তার আর চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। জলাতঙ্কে আক্রান্ত প্রাণী কামড় দিলে তিন মাস থেকে এক বছরের মধ্যে তার লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়।
আক্রান্ত প্রাণীর মুখের লালা তে জলাতঙ্কের ভাইরাস থাকে। রেবিশ ভাইরাস সমৃদ্ধ এই লালা যদি মানুষের শরীরে পুরনো ক্ষত বা দাঁত কামড়ের ক্ষত কিংবা আঁচড়ের মাধ্যমে রক্ত সংস্পর্শে তাহলে জলাতঙ্ক রোগ হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লালা থেকে সৃষ্টি বাতাসের মাধ্যমে রাবিশ ভাইরাস ধীরে ধীরে স্নায়ু দিয়ে মস্তিষ্কের প্রবেশ করে।
ফলে গলবিল এবং খাদ্যনালীর যে মাংসপশির কাজ হয়েছে তা নিয়ন্ত্রণকারীর স্থানীয় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। আক্রান্ত প্রাণী যদি একজন সুস্থ মানুষকে কামড় দেয় তাহলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রকাশ করে। অনেক ক্ষেত্রে জলাতঙ্ক কত দিন পর প্রকাশ পাবে তা কামড়ের স্থানের উপর ও নির্ভর করে। পায়ের তুলনায় যদি মাথার দিকে কামড় দেয় তাহলে সুপ্তকাল অনেক কমে যায়। কারণ ভাইরাসের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছাতে সময় কম লাগে। আশা করছি জলাতঙ্ক কতদিন পর প্রকাশ পায় এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।
জলাতঙ্ক রোগ কি ছোঁয়াচে
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন জলাতঙ্ক রোগ কি ছোঁয়াচে। রেবিস ভাইরাস সাধারণত আক্রান্ত প্রাণীর কামড়, আঁচড় এবং লালার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত প্রাণী এবং অল্পতেই কামড়ে দেয় এ ধরনের প্রাণী কে রেবিট প্রাণী বলা হয়। রেবিস ভাইরাস প্রায় সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীকে আঁচড় করতে পারে। তবে সব স্তন্যপায়ী প্রাণী মানুষের সংক্রমণের উৎস নয়।
মানুষ সাধারণত কুকুরের কামড়ে বেশি আক্রান্ত হয় এবং অন্যান্য প্রাণী গুলোর মধ্যে বাদুর, বিড়াল, গবাদি পশু, ভোদর শিয়াল এগুলো উল্লেখযোগ্য। খরগোশ, ইঁদুর, কাঠবিড়ালী এগুলো ভাইরাস ছড়ায় না। বেবিস ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়। সাধারণত মানুষ থেকে মানুষের যদি অঙ্গ ট্রানসপ্লান্ট করা হয় তাহলে জলাতঙ্ক রোগ ছড়াতে পারে।
আবার যেহেতু বীর্য বা স্ত্রী জনির তরলে ভাইরাস থাকতে পারে তাই যৌন মিলনের মাধ্যমে ও ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ জলাতঙ্ক রোগ ছোঁয়াচে নয়। কেবলমাত্র রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত প্রাণীর লালা কামড় বা আঁচড় থেকে জলাতঙ্ক রোগ ছড়াতে পারে।
জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার
জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকারের একমাত্র উপায় হল টিকা। জলাতঙ্কের অনেক রকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হচ্ছে হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন। অন্যান্য কিছু টিকা রয়েছে যেমন পিউরিফাইড চিকেন সেল ভ্যাকসিন, ডাক এমব্রিউ সেল ভ্যাকসিন, নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন ইত্যাদি।
যদি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে টিকা নেওয়া হয় তাকে প্রি এক্সপোজার প্রোফাইল এক্সেস বলে এবং আক্রান্ত হওয়ার পরে টিকা হলে তাকে পোস্ট একপোজার প্রোফাইলে অ্যাক্সেস বলে। এছাড়াও জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের জন্য পোষা এবং অপোষা সকল বিড়াল এবং কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই জলাতঙ্ক নামক মৃত্যু দূত কে দূর করা সম্ভব।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি
জলাতঙ্ককে হাইড্রোপোবিয়া বা পাগল রোগ বলা হয়ে থাকে। কারণ আক্রান্ত রোগী পানি দেখে বা পানির কথা মনে পড়লে প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সেজন্য এ রোগের নাম জলআতঙ্ক। রোগের লক্ষণ যদি একবার প্রকাশ পায় তাহলে আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। চলুন জেনে নেওয়া যাক জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি
- পানি খেতে ভয় পায় এমনকি পানি দেখলেও ভয় পায়
- অস্বাভাবিক কথাবার্তা বলে
- উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ায়
- ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়
- অরুচি হয়
- বিকৃত আওয়াজ করতে থাকে
- কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়ে যায়
- মেজাজ খিটখিটে হয়
- বিনা প্ররোচনায় অন্যকে আক্রমণ বা কামড় দিতে চাই
- আলো বাতাসের সংস্পর্শে এলে ভয় আরো বেড়ে যায়
- খিচুনি হয় এবং মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা ঝরে
- শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে যেমনি হয়
- শরীরের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু এবং মাংসপেশিয় দুর্বল হয়ে পড়লে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
- শেষ পর্যন্ত অবধারিতভাবে মৃত্যুবরণ করে
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা জলাতঙ্ক কতদিন পর প্রকাশ পায় এই বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপকারী হবে। সেই সঙ্গে আমরা জলাতঙ্ক রোগ ছোঁয়াচে কিনা, জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি এবং এর প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকার পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো তথ্যবহুল পোস্ট পড়ার জন্য আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url