বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কতদিন বাঁচে - বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কত দিন বাঁচে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি একটি বিড়ালের মালিক হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার এ বিষয়টি জানা উচিত যে বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কতদিন বাঁচে। সেইসঙ্গে বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
জলাতঙ্ক
বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কতদিন বাঁচে এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চলুন শুরু করা যাক।

ভূমিকা

বিড়াল আমাদের কমবেশি সকলেরই পছন্দ। আমরা অনেকেই শখ করে বাসায় বিড়াল পুষে থাকি। বিড়ালের নানা রকমের রোগ হয়ে থাকে। তার মধ্যে জলাতঙ্ক একটি। অনেকেই google এ সার্চ করে থাকেন যে বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কতদিন বাঁচে। আজকে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

সেই সাথে বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার, বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি, বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয়, বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা থাকছে। সবগুলো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার

কুকুরের যেমন জলাতঙ্ক হয় তেমনি বিড়ালের জলাতঙ্ক হয় এবং এটি একটি খুবই ভয়ঙ্কর রোগ । এটি একটি প্রাণঘাতী রোগ। একটি বিড়াল জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে ৮-১০ দিনের বেশি বাঁচে না। জলাতঙ্কের ভাইরাস সাধারণত শিয়াল, রেকোন, বাদুড় এবং ইদুর বহন করে থাকে। এই প্রাণীগুলো কামড় দিলে কিংবা আঁচড় দিলে বিড়াল আক্রান্ত হয়। 

আবার জলাতঙ্ক আক্রান্ত বিড়ালের কামড়ে বা আঁচড়ে মানুষের এবং অন্যান্য প্রাণীরও এই রোগটি হতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পর মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। বিড়ালের ক্ষেত্রে এটি দুই থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে এবং আস্তে আস্তে এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকে। এই লক্ষণ গুলো যদি দেখা দেয় তাহলে বিড়ালকে অবশ্যই পশু চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করাতে হবে। 

বিড়াল যদি জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয় তার কোন চিকিৎসা নেই। কিন্তু এর প্রতিষেধক রয়েছে। বিড়াল কে ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ থেকে বাঁচানো যায়। অর্থাৎ সচেতনতার মাধ্যমেই জলাতঙ্কের হাত থেকে বিড়াল বাঁচতে পারে।

শুধুমাত্র জলাতঙ্কের টিকার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ বা প্রতিকার করা সম্ভব। বর্তমানের সকল পশু চিকিৎসকের কাছেই এই টিকা পাওয়া যায়।

বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কতদিন বাঁচে

বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কতদিন বাঁচে? বিড়াল যদি জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয় তাহলে তারা স্বাভাবিক আচরণ করে না। তার আচরণে কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন উত্তেজনা, ভারসাম্যহীনতা, ভয়ংকর আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, চোখ ফুলতে থাকে, মুখে ফেনা তোলে, লালা ঝরে, বিভিন্ন প্রকার অস্বাভাবিক কাজ করে, এমনকি তাদের নিজের শরীরও কামড়াতে থাকে। 

যদি এই লক্ষণগুলো বিড়ালের মধ্যে দেখা দেয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে বিড়ালটি জলাতঙ্কে আক্রান্ত। একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে যদি ক্লিনিক্যাল লক্ষণ গুলো স্পষ্ট হয়ে যায় তাহলে একটি বিড়াল সর্বোচ্চ ১০ দিন বাঁচতে পারে। ক্লিনিকাল বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে রয়েছে জলাতঙ্কের ভাইরাস স্নায়ুকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় অর্থাৎ মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ। 

মস্তিষ্কের যত কাছাকাছি যায় তত দ্রুত জলাতঙ্কের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় এবং বিড়ালটি মারা যায়। অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ গুলো দেখে যদি বিড়ালের যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে বিড়ালটি খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যুবরণ করে। জলাতঙ্কে আক্রান্ত বিড়াল বেশি দিন বাঁচে না। যদি বিড়ালটি ৮-১০ দিনে সুস্থ থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে বিড়ালটি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত ছিল না।

বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি

বিড়াল জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে কিছু লক্ষণ প্রাথমিকভাবে প্রকাশ পায়। আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

জ্বর আসাঃ বিড়াল যদি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে বিড়ালের গায়ে প্রচন্ড জ্বর আসতে পারে।

প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়াঃ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে বিড়াল প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

আচরণে পরিবর্তনঃ হঠাৎ করে বিড়ালের আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয় কিংবা অস্বাভাবিক পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে।

হিংস্র হয়ে যায়ঃ বিড়াল জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে অনেক হিংস্র প্রকৃতির হয়ে ওঠে। সবসময় কামড় বা আঁচড় দিতে চাই।

অন্যরকম ভাবে ডাকেঃ বিড়ালের স্বাভাবিক ডাকের একটা টোন রয়েছে। জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে অন্যরকম ভাবে ডাক দেয়।

মুখ দিয়ে লালা ঝরাঃ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মুখ দিয়ে প্রতিনিয়ত লালা ঝরতে থাকে।

ঘন ঘন শ্বাস নেয়ঃ বিড়াল জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়। ফলে ও খুব ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে।

সবসময় ভয় পেয়ে থাকেঃ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে বিড়াল সবসময়ই ভয়ের মধ্যে থাকে। যেন কোন কিছু দেখে ভীষণ রকম ভয় পেয়েছে এরকম মনে হয়।

পানি খাওয়া বন্ধ করে দেয়ঃ বিড়াল জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে পানি পান করা একেবারেই বন্ধ করে দেয়।

আশা করছি বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি সেই বিষয়ে আপনি অবহিত হয়েছেন। আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলির প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ আমরা আগেই আলোচনা করলাম বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কতদিন বাঁচে সে বিষয়টি নিয়ে। বিড়াল যদি একবার জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আর বেশিদিন বাঁচে না। সুতরাং সময় থাকতেই সচেতন হতে হবে।

বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয়

বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা অনেক গুণ বেড়েছে। কিন্তু বিড়াল পালার ঝুঁকিও কিন্তু কম নয়। বিড়ালটি যদি আপনাকে কামড়ে দেয় তাহলে আপনি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কামড়ানোর ধরন বুঝে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিড়াল যদি আঁচড় কিংবা কামড় দেয় তাহলে অবশ্যই ক্ষতস্থানের গভীরতা ভালোভাবে দেখতে হবে। 

আঁচড় দেয়ার ফলে যদি রক্তপাত হয় তাহলে রক্তের সঙ্গে জীবাণুর সংস্পর্শ ঘটে। তখন অবশ্যই টিকা এবং যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বিড়াল কামড়ালে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নানারকম মতামত দিয়েছেন। সেগুলো নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
  • বিড়াল যদি আঁচড় দেয় এবং রক্ত না বের হয় তাহলে ভয়ের তেমন কোনো কারণ নেই। বিড়াল আঁচড় দিলে ক্ষতস্থানটি ভালোভাবে জীবাণু নাশক দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে যদি ক্ষত হয়ে যায় এবং রক্তপাত হয় তাহলে কোন ভাবেই অবহেলা করা উচিত হবে না।
  • জলাতঙ্ক ভাইরাসের সবচেয়ে কার্যকারী হল সাবান পানি। অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক এ জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না। সেজন্য ক্ষত হওয়ার সাথে সাথে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে জীবাণু সংক্রমণ করতে পারেনা। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে না গেলেও চলে।
  • বিড়াল কামড় দিলে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে তরল এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে স্যাভলন বা ডেটল বেশি কার্যকরী। এন্টিবায়োটিক দিয়ে পরিষ্কার করার পরে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ব্যান্ড এইট বা গজ ব্যবহার করতে পারেন।
  • বিড়াল কামড় দিলে যদি রক্তপাত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এই ব্র্যান্ডেড লাগে নিতে হবে। কারণ বাতাস চলাচল যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ক্ষতস্থানে ধনুষ্টংকার এর জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোনরকম ক্রিম বা মলম ব্যবহার না করাই উত্তম।
  • ক্ষত যদি গভীর না হয় তাহলেও অনেক সময় জীবাণুর সংক্রমণ হয়। তাই হালকা ক্ষত দেখলেও অবহেলা করা উচিত নয়। খেয়াল রাখতে হবে ক্ষতস্থান ফুলে গেছে কিনা, লাল হয়ে গেছে কিনা, রক্তপাত বন্ধ হলো কিনা, এবং তীব্র ব্যথা হচ্ছে কিনা, যদি এই লক্ষণ গুলো দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে ধীরে ধীরে সংক্রমিত হচ্ছে। তখন দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • বিড়ালের কামড় দেওয়ার পরে যদি জ্বর আসে তাহলে এটি বিপদের চিহ্ন। অনেক সময় আঁচড় দেওয়ার ফলে বয়স্কদের জ্বর আসে না কিন্তু ছোটদের জ্বর আসে। এটাকে ক্যাট ডিজিজ বলে। জ্বর আসলে, ফোসকা পড়লে, পিঠ বা পেট ব্যথা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
  • আবার যে বিড়ালটি আপনাকে কামড় দিয়েছে সেটি রাবিশ ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা বোঝার জন্য কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন বিড়ালের আচরণে পরিবর্তন আসে, হিংস্র প্রকৃতির হয়ে যায়, ঘন ঘন শ্বাস নেয়, মুখ দিয়ে লালা ঝরে, গলার স্বর পরিবর্তন হয়। এইসব লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝবেন বিড়ালটি জলাতঙ্কে আক্রান্ত। আর আর জলাতঙ্কে আক্রান্ত বিড়াল বেশি দিন বাঁচে না। যদি বিড়ালটি ৮-১০ দিন সুস্থ থাকে তাহলে বুঝতে হবে বিড়ালটি জলাতঙ্কে আক্রান্ত ছিল না।

বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন

বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কতদিন বাঁচে তা তো আপনারা জানেনই। তাই বিড়াল যাতে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত না হয় সেজন্য জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দিতে হয়। বিড়ালের ভ্যাকসিন 6 মাস, এক বছর, তিন বছর বিভিন্ন মেয়াদি হয়ে থাকে। প্রায় সবগুলো ভেট ই ভ্যাকসিন দিয়ে থাকে। সব ধরনের ভ্যাকসিনের দাম একরকম নয়। 

ভ্যাকসিন এর দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। বিড়ালকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তবে অনেক বিড়ালের দুই এক দিনের জন্য চুলকানি, ঝিমানি হয়, অরুচি ইত্যাদি হতে পারে। এই লক্ষণ গুলি যদি বেশিদিন থাকে তাহলে অবশ্যই ভেটের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কতদিন বাঁচে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করছি বিড়ালের জলাতঙ্ক সম্পর্কিত সকল বিষয় আপনি ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। আপনি যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

এরকম আরও তথ্য বহুল আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url