কুকুর কামড়ানোর কতদিন পর জলাতঙ্ক হয় - জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুরের লক্ষণ

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা কুকুর কামড়ানোর কতদিন পর জলাতঙ্ক হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি জানতে চান কুকুর কামড়ানোর কতদিন পর জলাতঙ্ক হয় তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। সেই সাথে আমরা জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুরের লক্ষণ নিয়েও আলোচনা করব।
জলাতঙ্ক রোগ
তাহলে চলুন আপনাদের সাথে কুকুর কামড়ানোর কতদিন পর জলাতঙ্ক হয় সে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। চলুন শুরু করা যাক।

ভূমিকা

জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী রোগ। যদি কেউ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয় তাহলে তার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা কুকুর কামড়ানোর কতদিন পর জলাতঙ্ক হয় সে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সেই সাথে কুকুরের জলাতঙ্ক রোগের টিকা, সব কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক হয় কিনা এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

আপনি যদি এই সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি জুড়ে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। কেননা আমরা এখন এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।

কুকুর কামড়ানোর কতদিন পর জলাতঙ্ক হয়

ভালোবেসে আমরা অনেকেই বাড়িতে কুকুর পুষে থাকি। আবার নিত্যদিনে চলার পথে আমাদের হর হামেশাই কুকুরের সাথে দেখা হয়। কিন্তু এই প্রভুভক্ত কুকুরের শরীরে বিষাক্ত রেবিশ ভাইরাস বিদ্যমান। আক্রান্ত কুকুর কামড় দিলে বা আঁচড় দিলে জলাতঙ্ক হয়। বিড়াল, শিয়াল, বন্যপ্রাণী, বাদুর সবই রেবিট এনিমেল। কামড় দিলে জলাতঙ্ক হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। 

বিশেষ করে যদি রেবিশ আক্রান্ত কুকুর কামড় দেয় তাহলে 99 ক্ষেত্রেই জলাতঙ্ক রোগ হয়। কিন্তু সব কুকুর কামড় দিলে জলাতঙ্ক হয় না। শুধুমাত্র রেবিশ আক্রান্ত কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক হয়। কুকুরের লালা যদি শরীরের ক্ষতস্থান স্পর্শ করে এবং লালার মধ্যে যদি রেবিশ ভাইরাস থাকে তাহলে জলাতঙ্ক আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কুকুর একটি র‍্যাবিট প্রাণী। 

তাই র‍্যাবিশ ভাইরাস থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। তাই কুকুরের কামড় দিলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব জলাতঙ্কের টিকা নিতে হয়। রেবিশ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর লক্ষণ প্রকাশ পেতে এক বছরও সময় লেগে যেতে পারে। তবে সাধারণভাবে এটি তিন মাস ধরা হয়ে থাকে। অনেক সময় তার উপরে নির্ভর করে কুকুরের কামড় বা আঁচর যদি ঘাড়ে অথবা মাথায় হয় তাহলে ইন্ডিকেশন পিরিয়ড অনেকটাই কমে আসে। 

সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের যত কাছাকাছি কামড় বা আঁচর দিবে তত ইনবিকিউবেসন পিরিয়ড কমতে থাকবে। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে যে লক্ষণটি সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় তা হল হাইড্রোফোবিয়া। যার অর্থ হল পানি দেখে ভয় পাওয়া। রোগী পানি একদমই খেতে পারে না। এর পরে অন্যান্য লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। 

যেমন বাতাস সহ্য করতে পারেনা, আলো সহ্য করতে পারে না, অস্বাভাবিক আচরণ করে, মস্তিষ্কে ব্যথা হয়, রোগী অজ্ঞান হয়ে যাই, রোগীর মধ্যে এই লক্ষণ গুলো যদি দেখা দেয় তাহলে তাকে জলাতঙ্ক বলা হয়। আর একজন রোগী জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যেই মারা যায়। তাই কুকুরে কামড় দিলে দেরি না করে দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে অবশ্যই টীকা গ্রহণ করা উচিত।

জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুরের লক্ষণ

কুকুর একটি রেবিট প্রাণী। তাই কুকুরের শরীরে রেবিশ এর ভাইরাস থাকতে পারে। জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুরের মাঝে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন মুখ দিয়ে প্রতিনিয়ত লালা ঝরতে থাকে, উগ্র আচরণ করে, পানি খায় না, চোখ লাল হয়ে ফুলে যায়, এক কথায় পাগল হয়ে যায়। যে কারনে যাকে তাকে যখন তখন আঁচড় দিতে বা কামড়াতে চাই। এই সকল লক্ষণগুলো জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুরের লক্ষণ হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়াও জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুর যদি মানুষকে কামড় দেয় তাহলে তার কিছুদিনের মধ্যেই কুকুরটি মারা যেতে পারে।

সব কুকুর কামড়ালে কি জলাতঙ্ক হয়

অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন যে সব কুকুর কামড়ালে কি জলাতঙ্ক হয়। কুকুর কামড়ানোর কতদিন পর জলাতঙ্ক হয়। আসলে সব কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক হয় না। কেবলমাত্র যে সকল কুকুর ভাইরাস বহন করে তাদের কামড়েই জলাতঙ্ক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে রেবিস ভাইরাস বহনকারী কুকুর কামড়ালেও জলাতঙ্কের তেমন ভয় থাকে না। 

কুকুরের লালা গায়ে লাগলে, আঁচর বা কামড় দিলে ভয়ের কিছু নেই। কারণ সব কুকুরের শরীরে জলাতঙ্কের ভাইরাস থাকে না। কুকুর কামড়ালে প্রথমে যে কাজটি করতে হয় তা হলো সাথে সাথে ক্ষারযুক্ত সাবান পানি দিয়ে 15 মিনিট যাবত ক্ষতস্থান ধুতে হবে। সাথে সাথে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ৯০% জীবাণু মারা যায় এবং সংক্রমণের আশঙ্কা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কমে আসে। 

এরপরে নিকটস্থ কোন হাসপাতালে গিয়ে সময় মত জলাতঙ্ক প্রতিরোধের টিকা নিতে হবে। কামড়ের পর পরই যদি টিকা নেওয়া যায় তাহলে জলাতঙ্ক এবং মৃত্যু রোধ করা যায়। এখন কুকুরকে প্রায় রেবিশ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। যার ফলে রেবিশ আক্রান্ত কুকুরের সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে। 

আমাদের দেশে কোন কারণ ছাড়াই রাস্তার প্রাণীদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করা হয়। যে কোন অজুহাতে হোক রাস্তার কুকুর বিড়ালকে মেরে ফেলা হয়। এমন অবস্থায় আমরা যদি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভুল তথ্য প্রচার না করি সেটাই সবার জন্য ভালো হবে। জলাতঙ্ক একটি ভয়াবহ রোগ। তাই এই রোগ সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়ানোর চেয়ে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানো উচিত।

জলাতঙ্ক রোগ কিভাবে ছড়ায়

জলাতঙ্ক হলো রেবিশ ভাইরাস ঘটিত একটি মারাত্মক রোগ। আমাদের দেশে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর প্রায় 20000 মানুষ মারা যায়। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু অবধারিত। অর্থাৎ লক্ষণ যদি একবার প্রকাশ পায় তাহলে আর রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। জলাতঙ্ক রোগ কিভাবে ছড়ায় সে বিষয়টি আমাদের ভালোভাবে জেনে রাখা উচিত। 

যে সকল রেবিট প্রাণী যেমন কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বানর, বেজি, বাদুড় এরা যদি জার্ভিস জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এই প্রাণীগুলো যদি মানুষকে কামড় দেয় তাহলে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। এই সকল প্রাণীগুলোর মুখের লালাতে রেবিশ ভাইরাস থাকে। এই লালা পুরনো ক্ষত কিংবা দাঁত বসিয়ে দেওয়া ক্ষতস্থান সামান্য আচরের মাধ্যমে ও যদি রক্তের সংস্পর্শে আসে তাহলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগের সৃষ্টি করে। 

তবে আমাদের দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ জলাতঙ্ক হয় কুকুরের কামড়ে। সন্দেহ প্রবন প্রাণী যদি কামড় দেয় তাহলে 9 থেকে 90 দিনের মধ্যে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিলে মানুষ দুই রকমের আর আচরণ করে। একটি পাগলামো আচরণ এবং একটি মৌন আচরণ। পাগলামো আচরণের ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির কথাবার্তা এবং ভাগভঙ্গি অস্বাভাবিক হয়। উদ্দেশ্য ছাড়াই ছুটে বেড়ায়, ক্ষুধামন্দায, বিকৃত আওয়াজ করে এবং বিনা প্ররোচনায় অন্যকে কামড়াতে যায়। 

মৌন আচরণের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান অবস লাগে, শরীর নিস্তেজ হয়, ঝিমানি আসে। এই সকল লক্ষণ দেখা দেয়।

কুকুরের জলাতঙ্ক রোগের টিকা

বিড়ালের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অনেকগুলো টিকা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কুকুরের জন্য পোর ভ্যাকসিন নামক একটি টীকায় যথেষ্ট। এ টীকার সময়কাল সর্বনিম্ন হলেও একটি কুকুরের জীবনকালের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ আপনি আপনার কুকুরকে জীবনে একবার টিকা দিলেই যথেষ্ট। যদি কুকুরের বয়স ১৬ সপ্তাহ বা তার বেশি হয় এবং মাঝে মাঝে কর ভ্যাকসিন দেওয়া হয় তবে তার আর টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। 

কিন্তু বাড়তি সচেতনতা থাকলে সে ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি কিছু ভ্যাকসিন রয়েছে যেগুলো ভেট এর সাথে আলোচনা করে দিতে পারেন। সঠিক এবং পর্যাপ্ত টিকার মাধ্যমে আপনার পোষা প্রাণীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন। এতে করে আপনি এবং আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং পোষ্য প্রাণীর সবাই সুন্দর এবং ঝামেলা বিহীন সময় কাটাতে পারবেন।

মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা কুকুর কামড়ানোর কতদিন পর জলাতঙ্ক হয় এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করছি আপনি আর্টিকেলটি পড়ে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url