কানাডা ভিজিট ভিসায় গিয়ে কাজ করা যায় কিনা জেনে নিন

আমাদের মধ্যে অনেকেই কানাডা ভিজিট ভিসায় গিয়ে কাজ করা যায় কিনা এ বিষয়টি লিখে সার্চ করে থাকেন। কানাডায় যাওয়া প্রত্যেকটি মানুষেরই এক নম্বর পছন্দের মধ্যে পড়ে। আজকে আমরা কানাডা ভিজিট ভিসায় গিয়ে কাজ করা যায় কিনা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কানাডা ভিজিট ভিসা
আজকের এই লেখাটি আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে কানাডা যাওয়ার পরে এ টু জেড বিস্তারিত আলোচনা পাবেন। কানাডা ভিজিট ভিসায় গিয়ে কাজ করা যায় কিনা। এ বিষয়টি সম্পর্কে একটি খুব ভালো ধারণা পাবেন।

ভূমিকা

উন্নত জীবনযাপন, চাকরি কিংবা পড়াশোনা জন্য কানাডা ভিসার অন্যতম জনপ্রিয় একটি দেশ। ভিজিট ভিসায় কানাডায় এসে আমি থেকে যাতে পারব কিনা? কানাডা ভিজিট ভিসায় গিয়ে কাজ করা যায় কিনা? এই সকল প্রশ্ন করে থাকেন। ভিজিট ভিসায় কানাডা গিয়ে স্থায়ী লিগ্যাল হতে পারবেন কিনা? 

পরিবারকে নিয়ে যেতে পারবেন কিনা? এসব করতে কতদিন লাগে? যারা গেছেন কিংবা ভবিষ্যতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

কানাডা ভিজিট ভিসা প্রসেসিং টাইম

অনেকে ভিজিট ভিসা নিয়ে কানাডা যেতে চান। কানাডা ঘুরে দেখার জন্য। কিন্তু আপনারা জানেন না কানাডা ভিজিট ভিসা প্রসেসিং টাইম কত। কানাডা ভিজিট ভিসা প্রসেসিং টাইম ১/২ মাস মত। অর্থাৎ আবেদন করার দুই মাসের মধ্যে ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে বেশি সময় লাগে। 
আপনার ভিসা আবেদন করার প্রক্রিয়া যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে ভিসা পেয়ে যাবেন। কিন্তু আপনার আবেদন করার প্রক্রিয়াটি যদি সঠিক না হয় তাহলে আপনাকে পুনরায় আবার আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগতে পারে।

কানাডা ভিজিট ভিসা পাওয়ার নিয়ম

আপনি যদি ভিজিট ভিসায় কানাডা যেতে চান তাহলে সর্ব প্রথমে আপনাকে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে নিতে হবে। অথবা আপনার যদি আগের পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে সর্বনিম্ন ছয় মাসের মেয়াদ অবশ্যই থাকতে হবে। এরপর আপনার সকল বৈধ কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থিত কানাডিয়ান এম্বাসিতে যোগাযোগ করতে হবে। সেখানে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হতে ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কানাডা ভিজিট ভিসা করতে যে যে ডকুমেন্টস গুলো লাগে সেগুলো হল।
  • কানাডা ভিসার জন্য বায়োমেট্রিক জমা দেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ ছবি এবং আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে।
  • কানাডা ভিজিট ভিসা আবেদন ফরম।
  • ৬ মাস মেয়াদী বৈধ পাসপোর্ট।
  • ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।
  • মেডিকেল সার্টিফিকেট।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • বিবাহিতদের জন্য ম্যারেজ সার্টিফিকেট।
  • করোনা ভ্যাকসিনের টিকা।
আপনার এই সকল ডকুমেন্ট ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার পর আপনার ভিসা আবেদন গ্রহণ করবে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে আপনি কানাডা ভিজিট ভিসা পেয়ে যাবেন।

কানাডা ভিজিট ভিসা খরচ

স্বাভাবিকভাবে যে কোন দেশের ভিসার জন্য যদি সরকারিভাবে আবেদন করা হয় তাহলে খরচ অনেকটাই কম হয়। যেমন কানাডা ভিসার সরকারী খরচ ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী হয়ে থাকে। এটি থেকে সর্বোচ্চ 150CAD পর্যন্ত হয়ে থাকে যা বাংলাদেশী টাকায় কনভার্ট করলে ৪০০০ টাকা মত হয়। সরকারি ভিসা আবেদন খরচ ৯৮০০ টাকা। থেকে ১০৪০০ টাকা পর্যন্ত। 

ভিজিট ভিসার আবেদন খরচ ৬৫০০ টাকা। স্টুডেন্ট ভিসার খরচ ৯০০০ থেকে ১০ হাজার টাকা। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ১০১০০ থেকে ১৬৬০০ টাকা পর্যন্ত। কানাডায় স্টুডেন্ট, টুরিস্ট, ওয়ার্কারের ভিসার দাম সর্বনিম্ন ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৮ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

কানাডা ভিজিট ভিসা আবেদন ফরম

কানাডা ভিজিট ভিসা অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করার আগে আপনাকে একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। এটি অনলাইন কিংবা সরকারি এজেন্সি থেকে খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। আবেদন ফরমটি পূরণ করার পরে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আর এর পুরো প্রসেসটি ধাপে ধাপে এখন আপনাদেরকে জানাবো।
  • কানাডা ভিসা আবেদন ফরম আবেদনের জন্য আপনাকে প্রথমে সরকারি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
  • ইমিগ্রেশন এন্ড সিটিজেনশিপ এই অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
  • এরপর মাই অ্যাপ্লিকেশনে ক্লিক করতে হবে।
  • সাইন ইন এন্ড অ্যাকাউন্ট টু অ্যাপ্লাই অনলাইন অপশন এ ক্লিক দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
  • তারপর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন অপশনে ক্লিক করলে আপনার জিমেইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে। সেটা বসালেই রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে।
  • এরপর ফাইন্ড এন্ড অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম অপশনে ক্লিক দিয়ে কানাডা ভিসা ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হবে।
  • পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য ডকুমেন্টস দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এজন্য অভিজ্ঞ মানুষের সহযোগিতা নিলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়।
  • আবেদন ফরম পূরণ করা হয়ে গেলে আপনাকে ফি পরিশোধ করতে হবে। আবেদন ফি প্রদান করা হলে কানাডা ভিসা আবেদন সম্পন্ন হয়ে যাবে।

কানাডা ভিজিট ভিসায় গিয়ে কাজ করা যায়

কানাডা ভিজিট ভিসায় গিয়ে কাজ করা যায় কিনা এ বিষয়টি নিয়ে বলার আগে আপনাদেরকে কিছু কথা জানিয়ে রাখি। তা হলো তৃণমূল ভাবে ভিজিটর ভিসাধারী যেসব ভিজিটর রয়েছেন তাদের বেলায় প্রতিটি দেশে ভিজিট ভিসায় এসে এসাইলাম ক্লেমের সুযোগ রয়েছে। 

কানাডা গিয়ে টুরিস্ট ভিসায় আপনি কানাডার প্রবেশ করবেন। এই স্ট্যাটাসে কানাডা গিয়ে আপনি বসবাস করা কিংবা কাজ করার কোন অনুমতি পাবেন না। ভিজিট ভিসায় কানাডা গিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আপনি নিজের দেশে চলে আসবেন এটাই নিয়ম। এখন আপনি যদি কানাডায় স্থায়ীভাবে থাকতে চান তাহলে আপনাকে দুটি বিষয়ে মাথায় নিয়ে এগোতে হবে।
  • প্রথমটি হল ভিজিট ভিসাকে ওয়ার্ক পারমিটে ডাইভার্ট করতে হবে।
  • দ্বিতীয়টি হল ভিজিট ভিসায় কানাডা গিয়ে থেকে যাওয়া এবং কাজ করার জন্য এসাইলাম ক্লেম করা।

ভিজিট ভিসা কে ওয়ার্ক পারমিট এ ডাইভার্ট

ভিজিট ভিসাকে যদি আপনি ওয়ার্ক পারমিটে ডাইভার্ট করতে পারেন তাহলে কানাডায় গিয়ে কাজ করা এবং থাকার অনুমোদন পেয়ে যাবেন। এরপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আপনি এই ওয়ার্ক পারমিটের স্ট্যাটাস দিয়ে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের পিআরপি কার্ড পেয়ে যাবেন। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে আপনি কয়েক বছর পরে আপনার পরিবারকে কানাডা নিয়ে আসতে পারবেন। 
ভিজিট ভিসা কে ওয়ার্ক পারমিটে ডাইভার্ট করতে হলে আপনাকে কোন কোম্পানি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আপনার নামে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করতে হবে। এজন্য কোম্পানিগুলোর কর্মীর নিয়োগ সংক্রান্ত যে আইনের তথ্যগুলো রয়েছে সে প্রক্রিয়া গুলো অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। যেসব কোম্পানির কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রেকর্ড খুবই ভালো শুধুমাত্র তারাই এই কাজটি করে। 

তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া খুবই কঠিন একটি প্রক্রিয়া। ভিজিট ভিসায় কানাডা গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া খুবই কঠিন। তবে আপনি যদি ভালো কোন কাজ জেনে থাকেন অথবা ভালো কোন চাকরি করে থাকে তাহলে সেটি আলাদা কথা। এজন্য আপনাকে অভিজ্ঞতা এবং সার্টিফিকেট দুটিরই দরকার পড়বে।

এসাইলাম ক্লেম

আপনি কানাডায় গিয়ে একজন ভালো আইনজীবী ধরে দেশে ফিরলে আপনার জীবননাশের ঝুঁকি আছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে আপনি কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন রিফিউজি অ্যান্ড সিটিজেনশিপ বোর্ডের একটি এসাইলাম ক্লেম করতে পারেন। এরপর এই এসাইলাম ক্লেইম প্রক্রিয়া ইমিগ্রেশন এন্ড রিফিউজি বোর্ডের মাধ্যমে বিচার সমাধানের জন্য নথিযুক্ত করা হবে। 

এসাইলাম ক্লেমের এক মাসের মধ্যে আপনি ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরপর চাইলে আপনি কাজকর্ম করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। এসাইলাম ক্লেম এর পর একটি ফাইল আকারে রিফিউজ বোর্ডের কাছ থেকে আপনার কানাডা থাকার জন্য শুধুমাত্র একটি দরখাস্ত দাখিল ও করা হয়। 

এরপর রিফিউজি বোর্ড আপনার বিষয়টি একজন ইমিগ্রেশন অফিসারের হাতে দেয়। এই ইমিগ্রেশন অফিসার তিন চার বছরের মধ্যে আপনার এই এসাইলাম ক্লেমটি সঠিক কি না যাচাই করবে। কোট হিয়ারিং এ অবশ্যই আপনি আপনার আইনজীবী নিয়ে উপস্থিত হবেন। 

কোর্ট হেয়ারিং এ জজ যদি মনে করে আপনার দেশে ফিরলে আপনার জীবন সংকটের সম্ভাবনা আছে তাহলে আপনার এসাইলাম টি গ্র্যান্ড হয়ে গেল। অর্থাৎ আপনি কানাডা স্থায়ীভাবে থাকার অনুমোদন পেয়ে যাবেন। এরপর আপনি ভিআইপি কার্ডের জন্য এপ্লাই করবেন। দুই চার বছরের মধ্যে আপনার অনুমোদন চলে আসবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা কানাডা ভিজিট ভিসায় গিয়ে কাজ করা যায় কিনা এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি কানাডা গিয়ে ভিজিট ভিসায় কাজ করতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, আর্টিকেলটি পরে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যটি পেয়ে গেছেন। 

আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যত উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পরিচিত জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন যাতে উপকৃত হতে পারে। আপনার যদি কোন মতামত জানানোর থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো নতুন নতুন বিষয়ে পোস্ট পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url