গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানুন
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো জানব। দুধ আমাদের প্রায় সকলের প্রিয়। কিন্তু আমরা কি গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানি?
চলুন আজকে আমরা গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে নেই। যাতে করে গরুর দুধ খাওয়ার ফলে আমরা কোন সমস্যাই না পড়ি।
ভূমিকা
নিঃসন্দেহে দুধ একটি পুষ্টিতে ভরপুর খাবার। কিন্তু গরুর দুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দুধ খাওয়ার পর পানি খেলে কি হয়, পাউডার দুধে এলার্জি আছে কিনা, গরুর দুধ জাল দেওয়ার নিয়ম, দুধে পানি দিলে কি হয়। এ সকল বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি এ সকল বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গরুর দুধে নানা রকমের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফ্যাট, এছাড়াও রয়েছে আইরন, ভিটামিন ই এবং কে। দুধের প্রধান উপাদান হলো ল্যাকটোস সুগার। সবাই সহ্য করতে পারেনা। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কিছু মানুষের শরীরে গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই কারণে শরীরে এলার্জি হতে পারে, পেট ব্যথা, বমি বা গ্যাসের সমস্যাও হয়।
আমরা জানি যে গরুর দুধ আমাদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে। কিন্তু সেই দুধ যদি আমরা বেশি পরিমাণে খাই তাহলে হাড় ভেঙে যেতে পারে। গরুর দুধে ডি গ্যালাক্টজ সুগার রয়েছে। এই সুগার বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে হার ভঙ্গুর হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন বেশি পরিমাণে দুধ খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার হতে পারে, ব্রণের সমস্যাও হতে পারে।
বিশেষ করে লো ফ্যাট স্কিন মিল্ক এই সমস্যা হয়। দুধ খেলে শরীরের চুলকানিও হয়। এটি গবেষণায় উঠে এসেছে। গরুর দুধের অন্যতম উপাদান ল্যাকটোজ অনেকে হজম করতে পারে না। কারণ তাদের ল্যাপটোজ হজম করার মত প্রয়োজনীয় ল্যাকটোজ এনজাইমের কমতি রয়েছে। যার ফলে দুধ খেলে ডায়রিয়া, বমি, তলপেটে ব্যথা এই সমস্যাগুলো হয়।
এসব লক্ষণ গুলো অস্বস্তিকর, কিন্তু ক্ষতিকর নয়। এ সকল ব্যক্তিরা সামান্য পরিমাণ দুধ খাবার খেতে পারেন। এদের ক্ষেত্রে প্রি টেস্ট ও রক্ত পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হয়। অর্থাৎ এটি এলার্জি না। দুধ জাতীয় খাবার পরিহার করলে কিংবা ল্যাকটোজবিহীন খাবার খেলে এসব অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। গরুর দুধ ফুড এলার্জির একটি অন্যতম কারণ।
এ কারণে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের প্রতি 50 জন শিশুর মধ্যে দুজন এনার্জি তে আক্রান্ত হয়। বেশির ভাগ শিশু চার বছরের মধ্যে এলার্জি মুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু কেউ কেউ সারা জীবন এলার্জি সমস্যা নিয়ে থাকে। আশা করছি গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
দুধ খাওয়ার পর পানি খেলে কি হয়
অনেকেই সকালের নাস্তা কিংবা রাতে ঘুমাতে হওয়ার আগে দুধ পান করে থাকে। দুধ পানের পর পর পানি খেয়ে নেওয়া সম্ভবত আমাদের অভ্যাস। কিন্তু অভ্যাসটি খুবই ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞ রা বলেন শিশুরা কিংবা বড়দের দুধের পর পানি খাওয়া একদমই উচিত নয়। এর ফলে নানা রকম সমস্যা হতে পারে। অনেকেই এ বিষয়ে জানেন না।
চিকিৎসকদের মতে শিশুরা এক গ্লাস হালকা গরম দুধ খাওয়ার পরে পানি পান করলে তাদের পেট খারাপ এমনকি হজমেও প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া আরো কিছু সমস্যার কথা চিকিৎসকরা জানান। দুধ নিজেই ভিটামিনের ভরপুর একটি খাবার। এটি আমাদের হাড়কে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আমাদের শক্তি ও দেয়।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই দুধ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। দুধ আমাদের দেহের খনিজ ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। শিশুরা যদি দুধ খাওয়ার সাথে সাথে পানি খায় তাহলে দুধের শক্তি বা কার্যকারিতা কমে যায়। সে ক্ষেত্রে দুধ খাওয়ার অন্ততপক্ষে এক বা দুই ঘন্টা পর পানি খাওয়ার জন্য বলেন চিকিৎসকরা। এমনকি কোন খাবার খাওয়ার পর পরই দুধ খাওয়া উচিত নয়। এতে করে বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা এগুলো হতে পারে।
পাউডার দুধে কি এলার্জি আছে
পাউডার দুধ যদি গরুর দুধ থেকে তৈরি করা হয় তাহলে কিছু পরিমাণ এনার্জি থাকতে পারে। তবে পাউডার দুধের ল্যাকটোজ এর পরিমাণ গরুর দুধের তুলনায় অনেক কম থাকে। সেজন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয় এবং এলার্জি সমস্যা যদিও হয়ে থাকে তাহলেও অনেকটাই কম হয়। আপনি যদি বেশি এনার্জি সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে বিকল্প হিসেবে পাউডার দুধ খেতে পারেন।
গরুর দুধ জ্বাল দেওয়ার নিয়ম
দুধে একাধিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য এটি উপকারী। কিন্তু খাওয়ার আগে দুধ জাল দেওয়ার ভুলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে অনেকেই জানেন না। বিশেষজ্ঞরা বলেন ফোটানো দুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। প্যাকেট দুধে অনেক সময় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা পেটে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। রাতে দুধ ফুটিয়ে নেওয়া ভালো।
তবে যেকোনো ধরনের দুধ হোক না কেন এক দুইবার জাল দেওয়া যথেষ্ট। থেকে বেশি জাল দিলে দুধে থাকা ভালো ব্যাটারিগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে পুষ্টিগুণ অনেকটাই কমে যায়। একাধিকবার দুধ জ্বাল দিলে এ তে উপস্থিত প্রোটিন, ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। দুধে উপস্থিত থাকা ভিটামিন ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে।
কিন্তু বারবার তো জাল দিলে ভিটামিনের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে ক্যালসিয়াম শোষণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে হাড় এবং দাঁতের ক্ষতি হয়। দুধের পুষ্টিগুণ যদি বজায় রাখতে চান ভালো এভাবে জাল দিতে হবে। অনেকেই মনে করেন সম্পূর্ণ দুধ একবার ফুটিয়ে ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়। তারপর যতটুকু দরকার সেটুকু বের করার প্রয়োজন মনে করলে জাল দিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এতেও পুষ্টিগুণ কমে যায়। তাহলে জাল দেওয়ার সঠিক নিয়ম কি? যতক্ষণ দুধ গরম করবেন ততক্ষণ একটি কাঠের চামচ দিয়ে দুধ মাঝেমধ্যে নাড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে দুধের সর পড়ে না এবং দুধের উপাদান গুলো ঠিক থাকে। বেশি আঁচে যে কোন খাবার রান্না করলে সেটি পুষ্টি হারিয়ে ফেলে। দুধের ক্ষেত্রেও এটা ঠিক।
প্রথমে একটি পাত্রে দুধ ঢেলে বেশী আছে কিছুক্ষণ রেখে আঁচ কমিয়ে দিতে হবে। অল্প আছে দুধ ফুটানো ভালো। এরপর কিছুক্ষন পর পর দুধ চামচ দিয়ে নাড়তে হবে। ফুটতে শুরু করলে চুলা বন্ধ করে দিয়ে তারপর ঠান্ডা করে পান করতে হবে।
দুধে পানি দিলে কি হয়
গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এ বিষয়ে তো আমরা অবগত রয়েছি। কিন্তু দুধে পানি দিলে কি হয় তা কি আপনি জানেন। আপনি হয়তো মনে করেন দুধে পানি দিলে দুধের ফ্যাট কমে সেজন্য দুধের সাথে পানি মিশানো। কিন্তু দুধের সাথে পানি মিশালে দুধের ফ্যাট তো কমেই না বরং উপকারিতা নষ্ট হয়। দুধ জাল দেওয়ার পরে বরং দুধের সর বাদ দিয়ে খাওয়া উচিত।
কারণ দুধের স্বরে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো নয় এবং সর বাদ দিয়ে বাকি দুধে ফ্যাটের পরিমাণ অনেকটাই কম থাকে। যা খেলে কোন সমস্যা হবে না। আশা করছি, দুধে পানি দিলে কি হয় এ বিষয়টি আপনি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানো হয়েছে গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। এছাড়াও আরো জানানো হয়ছে দুধে পানি দিলে কি হয়, পাউডার দুধে এলার্জি আছে কিনা, দুধ খাওয়ার পর পানি খেলে কি হয়। আশা করছি আমাদের ওয়েবসাইটের এই আর্টিকেলটি পড়ে উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
এছাড়াও আপনাদেরকে অনুরোধ করবো যদি এ বিষয়ে আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url