বাচ্চাদের কে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা বাচ্চাদের কে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আপনি যদি বাচ্চার মা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বাচ্চাদের কে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে।
দুধ
আপনাদের কথা মাথায় রেখে আমরা আজকে বাচ্চাদেরকে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

ভূমিকা

একটি নবজাতক শিশুর জন্য বিশেষজ্ঞরা কখনোই গরুর দুধের সুপারিশ করে না। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর শিশুদের গরুর দিতে হয়। গরুর দুধ শিশুর শারীরিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। শিশুর পক্ষে গরুর দুধ হজম করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। তাই বাচ্চাদের কে গরুর দুধ খাওয়ানোর একটি পদ্ধতি রয়েছে। 

আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা বাচ্চাদের কে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি, নবজাতকের গরুর দুধ খাওয়ালে কি হয়, গরুর দুধের পানি মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, দুধ খাওয়ার পর পানি খেলে কি হয়, গরুর দুধের উপকারিতা এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক।

বাচ্চাদের কে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি

আমাদের মধ্যে অনেকেই গুগলে এসে সার্চ করে থাকেন যে বাচ্চাদের কে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি কি। বাচ্চার কত বছর বয়স থেকে গরুর দুধ খাওয়ানো যাবে। আরো নানা রকমের প্রশ্ন। আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা বাচ্চাদের কে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

একটি আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স অনুসারে নবজাতক শিশুদের কমপক্ষে ১২ মাস অর্থাৎ এক বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক পানীয় হিসেবে গরুর দুধ দেওয়া উচিত না। এক বছর বয়সের আগে গরুর দুধের প্রোটিন গুলো সঠিকভাবে হজম করার জন্য একটি বাচ্চার পাচনতন্ত্র বিকশিত হয় না। 

যে সকল বাচ্চারা এক বছর বয়স হওয়ার আগেই গরুর দুধ খায় তাদের আয়রন অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। বাচ্চার খাবারে গরুর দুধ অন্তর্ভুক্ত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল তা বুকের দুধ কিংবা ফর্মুলা দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো এবং আস্তে আস্তে গরুর দুধের পরিমাণটি বাড়িয়ে দেওয়া। 
এতে করে একটি শিশুর পাচনতন্ত্র সামঞ্জস্য বোধ করতে হবে এবং পেটের অস্বস্তি বা অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া গুলো ঝুঁকি ও হ্রাস করে। শিশুর বেড়ে ওঠা এবং মানসিক উন্নতির জন্য যে সকল পুষ্টিগুণের দরকার তা গরুর দুধে থাকে না। অন্যদিকে ফর্মুলা দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন এবং ফ্যাট যুক্ত করা থাকে। 

যা শিশুদের মূলত প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ফর্মুলা দুধ গরুর দুধের তুলনায় শিশুদের জন্য ভালো। অর্থাৎ গরুর দুধকে একটি ভালো খাবার হিসেবে এক বছর বা তার বেশি বয়সে শিশুদেরকে দিতে হবে। তবে গরুর দুধকে কখনোই বাচ্চা দেয়ার প্রাথমিক পুষ্টির উৎস হিসেবে দেওয়া যাবে না।

নবজাতককে গরুর দুধ খাওয়ালে কি হয়

নিঃসন্দেহে গরুর দুধ পুষ্টিগুণে ভরপুর। কিন্তু একটি নবজাতক শিশুর জন্য গরুর দুধ মোটেই ভালো না। সেজন্য নবজাতক শিশুকে গরুর দুধ না খাওয়ানই ভালো। গরুর দুধ মানুষের জন্য শক্তি যোগানের একটি বড় উৎস। এটি এমন একটি খাবার যাতে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এগুলোর মত খনিজ পদার্থ রয়েছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা শিশুর প্রথম বছরটিতে গরুর দুধ না দেওয়ারই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বাচ্চাদেরকে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি রয়েছে। সেই পদ্ধতি মেলে না খাওয়ালে নবজাতকের ক্ষতি হতে পারে। খাদ্য শক্তির দিক দিয়ে বিচার করতে গেলে গরুর দুধ ও মায়ের দুধের মধ্যে প্রায় একই রকম। কিন্তু পুষ্টিগুণের বিচারে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। গরুর দুধে ল্যাকটোজ এর পরিমাণ প্রতি ডেসিলিটার 4.7 গ্রাম এবং মায়ের দুধে ল্যাকটজের পরিমাণ ৭.১ গ্রাম। 

মায়ের দুধে বিদ্যমান এই ল্যাকটোজ অন্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করে নবজাতকের দেহ অস্থি মজবুত করতে সহায়তা করে। গ্যালাকটোলিপিড মস্তিষ্ক কোষের বৃদ্ধি এবং বিকাশ ঘটায়। এতে করে শিশু বুদ্ধিমান এবং স্বাস্থ্যবান হয়। গরুর দুধের প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি যা প্রতি ডেসিলিটারে ৩.১ গ্রাম। এছাড়াও গরুর দুধে রয়েছে ক্যাসিনো বিটা, lapto গ্লোবিন। 

ফলে গরুর দুধ যে শিশুরা খায় তাদের একজিমা, পেটের প্রদাহ এবং মলের রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দেয়। প্রোটিন রয়েছে 1.06 গ্রাম যা একটি শিশুর মত খুবই স্বাভাবিক। গরুর দুধে চর্বি আছে ৩. ৮ গ্রাম যা মায়ের দুধের তুলনায় অনেক কম। একটি শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বিকাশের জন্য জরুরী। গরুর দুধে তা নেই। 

গরুর দুধে সোডিয়াম মায়ের দুধের তুলনায় চার গুণ বেশি থাকে। ক্যালসিয়াম ০.৪ গুন, পটাশিয়াম তিনগুণ এবং ফসফরাস প্রায় সাড়ে 6 গুষ বেশি রয়েছে। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিংক ছাড়া অন্যান্য পদার্থ যেমন ম্যাগনেসিয়াম প্রকৃতির মাত্রা অনেক বেশি। এক বছর বয়সের কম বয়সী বাচ্চাদের যদি গরুর দুধ খাওয়ানো হয় তাহলে এই অতিরিক্ত মাথার আমিষ এবং খনিজ পদার্থ নিষ্কাশন করতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
এছাড়াও এই বয়সে দুধ খাওয়ালে শিশুর রক্তস্বল্পতা হতে পারে। শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, ও ভিটামিন সি গরুর দুধে কম মাত্রায় রয়েছে। শিশুকে মায়ের দুধ না দিলে গরুর দুধে নির্ভরশীল শিশুরা ভিটামিনের রক্তস্বল্পতায় জনিত অসুখ যেমন রাতকানা, স্কার্ভি প্রভৃতির রোগ হতে পারে। মায়ের দুধ একটি শিশুর জন্য রোগ প্রতিরোধোক হিসেবে কাজ করে। যেমন ইমইউনো গ্লোবিউলিন ও লিউকোসাইট, ম্যাঙ্গানিজ, নিউট্রোফিল এগুলো গরুর দুধে নেই। তাই গরুর দুধ পান করালে নবজাতক শিশু খুব সহজেই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।

গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

আপনি যদি গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জানা উচিত গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খেলে কতটুকু উপকারিতা রয়েছে। গরু দুধের মূল পুষ্টি উপাদান হলো ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক গরুর দুধের পানি মিশিয়ে খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।
  • গরুর দুধের সাথে পানি মিশিয়ে খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • গরুর দুধের সাথে পানি মিশিয়ে খেলে শরীর শক্তির মূল হিসেবে কাজ করে ও দ্রুত দেহে শক্তি যোগায়।
  • হার শক্ত ও মজবুত করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পেটের সমস্যা দূর হ।য়
  • দুধের সাথে পানি মেশালে দুধের ঘনত্ব এবং চিনির পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাবার হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।
  • দুধের সাথে পানি মিশিয়ে খেলে গলা পরিষ্কার থাকে।
  • গরুর দুধ এবং পানি একসাথে মিশালে অতিরিক্ত গরমে ডিহাইড্রেশন এর সমাধান করে। এতে করে পানি শূন্যতা দূর হয়।
  • প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং দুধের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
  • শর্করার মান নিয়ন্ত্রণ করে। দেহের মাংসপেশী গঠন এবং মেটাবলিজমের জন্য উপকারী।

দুধ খাওয়ার পর পানি খেলে কি হয়

আমরা অনেকেই দুধ খাওয়ার পরে পানি পান করে ফেলি। যা একেবারে উচিত নয়। দুধ খাওয়ার পরে কখনই পানি খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে করে দুধের প্রোটিনের বিপাক প্রক্রিয়া গতি অনেকটাই কমে যায়। সেজন্য এসিডিটি এবং বদহজম হতে পারে। তাই দুধ খাওয়ার পর পানি খাওয়া একেবারে উচিত নয়। অনেক সময় বাচ্চারা এক গ্লাস হালকা গরম দুধ খাওয়ার পরে পানি খেয়ে ফেলে। 

তাদের পেট খারাপ যেমন হজমে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া আর কিছু সমস্যা হতে পারে। দুধ নিঃসন্দেহে পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাদ্য উপাদান। এটি আমাদের হাড়কে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আমাদের শক্তিরও যোগান দিয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ দুধ স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। দুধ আমাদের দেহের খনিজ এবং ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে। 
বাচ্চারা যদি দুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি খেয়ে ফেলে তাহলে দুধের শক্তি এবং কার্যকারিতা কমে যায়। তখন দুধ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যাবে না। দুধ খাওয়ার কোন সুফলই পাওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় দুধ খাওয়ার অন্ততপক্ষে এক বা দুই ঘন্টা পর পানি পান করা উচিত। কোন খাবার খাওয়ারর পরে দুধ খাওয়া উচিত না। এতে বদহজম, বমি বমি ভাব, পেটব্যথা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এর বিশেষ কারণ হলো লবণ ও তেলে তৈরি খাবার দুধের বিপরীত প্রকৃতির।

গরুর দুধের উপকারিতা

  • গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে। যা দেহের মাংস পেশী বৃদ্ধি এবং পেশী তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
  • দেহের হাড় গঠনের জন্য দুধের ক্যালসিয়াম খুব বেশি কার্যকরী।
  • গরুর দুধ ভিটামিন ডি তৈরির অন্যতম একটি উপাদান।
  • নিয়মিত গরুর দুধ খাওয়ার ফলে শরীরে খনিজ পদার্থের ঘাটতি কমে। শরীরে পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদির যোগান দেয় গরুর দুধ।
  • শরীরের ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ করে গরু দুধ।
  • অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
  • গরুর দুধ খেলে ঘুম ভালো হয়।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • মানসিক চাপ কমাতে এবং হার্ট সুস্থ রাখতে গরুর দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা বাচ্চাদের কে গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমাদের লেখাটি পড়ে আপনার যদি কোথাও ত্রুটি মনে হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাতে পারেন। এরকম আরো নতুন নতুন বিষয়ে পোস্ট করার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url