কত বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো যায়

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকে আর্টিকেলে আমরা কত বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো যায় এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সাথে থাকুন।
দুধ
কত বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো যায় এ বিষয়টি সম্পর্কে সবার ধারণা থাকা উচিত এবং কি পরিমাণ খাওয়াতে হবে সেটাও জানা দরকার।

ভূমিকা

গরুর দুধ অনেকদিন যাবৎ ডায়েটের একটি প্রধান অংশ। তবে এটি বাচ্চাদের জন্য কি উপযুক্ত? চিকিৎসকরা শিশুর জন্য কখনো গরুর দুধ সুপারিশ করে না। কারণ বাচ্চার বয়স যদি এক বছর না হয় তাহলে গরুর দুধ তার জন্য ক্ষতিকর। এই সকল বিষয়গুলো বিস্তারিত জানার জন্য বিশেষ করে কত বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো যায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা থাকছে আজকের আর্টিকেলে। 

সেই সঙ্গে দুই বছর পর থেকে শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ানোর নিয়ম, বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি, শিশুদের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা, গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, এ সকল বিষয় থাকছে। তাহলে চলুন দেরি না করে মূল কথাই যাওয়া যাক।

কত বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো যায়

অনেক বাচ্চার মায়েরা জানে না কত বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো যায়। কিন্তু আপনি যদি একটি বাচ্চার মা হয়ে থাকে তাহলে আপনার অবশ্যই জানা প্রয়োজন কত বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো যায়। বাচ্চাদের এক বছরের আগে গরুর দুধ বা অন্যান্য দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন ছোট শিশু বা বাচ্চাদের এক বছরের পূর্বে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ভালো। গরুর দুধে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যেমন- প্রোটিন, ভিটামিন, পনির, মিনারেল এগুলো বাচ্চার হজম শক্তিতে সমস্যা করে এবং কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সম্ভাবনা থাকে। তাই একটি বাচ্চাকে গরুর দুধ দেওয়ার মিনিমাম বয়স হলো এক বছর। 

তবে যদি বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস করে তুলতে চান তাহলে প্রথম অবস্থায় গরুর দুধের সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে দিতে হবে এবং অল্প অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। বাচ্চাদেরকে গরুর দুধ খাওয়ানো অবস্থায় যদি কোন স্বাস্থ্য ও সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দুই বছর পর থেকে শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ানোর নিয়ম

শিশুর বয়স যখন ছয় মাস তারপর থেকে বাচ্চাকে তার মায়ের দুধ ছাড়াও অন্য সব খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এক বছর পর থেকে বাচ্চা কে ঘরের তৈরি বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দিতে বলা হয়। বাচ্চা যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন প্রোটিন, ভিটামিন, ফাইবার জাতীয় খাবার পরিমান মত দেওয়া উচিত। ছোট বাচ্চাদের জন্য দুধ অনেক উপকারি। 

নির্দিষ্ট একটি বয়সের পর তাদের পরিমাণ মতো দুধ দিতে হবে। বাচ্চার বয়স যখন এক থেকে তিন বছরের মধ্যে তখন প্রতিদিন ৫০০ মিলির বেশি দুধ খাওয়ানো ঠিক না। ৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৪ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য দিনে 700 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার। প্রতি এক কাপ অর্থাৎ ২৫০ মিলির ফুল ফ্যাট দুধে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ২৫৫ মিলিগ্রাম। 

অর্থাৎ এবার আপনি আপনার শিশুর বয়স অনুযায়ী হিসেব করে আপনার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবেন। কেননা বাচ্চার পেট যদি সারাক্ষণ দুধেই ভরা থাকে তাহলে অন্যান্য খাবার খাবে না। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় দুধ খাওয়ার ফলে বাচ্চার ক্ষুধা পাবে না। এতে করে অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় খাবার কম করে খাবে। ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো অপরিপূর্ণ থেকে যাবে।

বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি

বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর জন্য অবশ্যই কিছু পদ্ধতি এবং সতর্কতা মেনে চলা উচিত। আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমরা বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
  • বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার বয়স এক বছরের বেশি কিনা।
  • শুরুর দিকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খুব অল্প পরিমানে দিতে হবে। যদি তাতে বাচ্চার কোন স্বাস্থ্য সমস্যা না হয় তাহলে ধীরে ধীরে গরুর দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
  • প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গরুর দুধ খুবই অল্প পরিমাণ দিন।
  • খাঁটি দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করুন অথবা শুরুতে সামান্য পরিমাণ পানি মেশাতে পারেন। এতে করে বাচ্চার হজম শক্তি বৃদ্ধি হবে।
  • ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখুন।
  • বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পাত্র গুলো ভালোভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • গরুর দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য সুষম খাবার দেয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে বাচ্চার সকল ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে।
  • বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ানোর ফলে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয়, যেমন- হজম, এলার্জি, পেটের সমস্যা তাহলে অবশ্যই দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা

  • গরুর দুধ খেলে বাচ্চার সঠিকভাবে বিকাশ ঘটে।
  • বাচ্চার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি সঞ্চালিত হয়।
  • শিশুর শারীরিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখে।
  • গরুর দুধের বিদ্যমান ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে।
  • রাতের বেলা বাচ্চাদের দুধ খেতে দিলে ঘুম ভালো হয়।
বাচ্চাদের ঠিকঠাক শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য একটু বেশি চর্বিযুক্ত খাবারের প্রয়োজন ।গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সি, ডি আর ভিটামিন ই থাকে। যা শিশুর শারীরিকভাবে বিকশিত হতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনি যেই বাচ্চাকে গরুর দুধ দিচ্ছেন তার বয়স যেন এক বছরের উপরে হয়। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ দিতে হবে তা না হলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।

গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

আপনি যদি গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জানা উচিত গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খেলে কতটুকু উপকারিতা রয়েছে। গরুর দুধের মূল পুষ্টি উপাদান হলো ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।
  • গরুর দুধের সাথে পানি মিশিয়ে খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • গরুর দুধের সাথে পানি মিশিয়ে খেলে শরীর শক্তির মূল উৎস হিসেবে কাজ করে। যা দ্রুত দেহে শক্তি যোগায়।
  • হার শক্ত ও মজবুত করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পেটের সমস্যা দূর হয়।
  • দুধের সাথে পানি মেশালে দুধের ঘনত্ব এবং চিনির পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাবার হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।
  • দুধের সাথে পানি মিশিয়ে খেলে গলা পরিষ্কার থাকে।
  • গরুর দুধ এবং পানি একসাথে মিশালে অতিরিক্ত গরমে ডিহাইড্রেশন এর সমাধান করে। এতে করে পানি শূন্যতা দূর হয়।
  • প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং দুধের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
  • শর্করার মান নিয়ন্ত্রণ করে দেহের মাংসপেশী গঠন করে এবং মেটাবলিজমের জন্য উপকারী।

লেখক এর মন্তব্য

আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা কত বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। সেই সঙ্গে বাচ্চার দুধ খাওয়ার উপকারিতা, গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি, দুই বছর পর থেকে শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ানোর নিয়ম এ সকল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। 

আশা করছি, আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমাদের লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করুন। আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কোথাও ত্রুটি মনে হলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url