গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় কেন
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আমরা অনেকেই জানিনা গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় কেন। আজকে আর্টিকেলের মধ্যে আমরা গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় কেন এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা এবং পিঠের মাঝে ব্যাথা নারীদের পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু গর্ভকালীন এক এক সময়ে এক একটি কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় কেন এ বিষয়টি জানার চেষ্টা করব।
ভূমিকা
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারীর শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা যেমন গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যথা, গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা, গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমরে ব্যথা, শেষের দিকে কোমরে ব্যথা আরো বেড়ে যায়। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা গর্ভাবস্থায় এই ব্যথা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আপনি যদি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চান যেমন গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যাথার কারণ, গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথার কারণ, গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথা হলে করণীয়, তলপেটে ব্যথা প্রেগনেন্সির লক্ষণ কি না, গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় কেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করা যায় সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়া শেষ হলে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি পেয়ে যাবেন।
গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যথার কারণ
গর্ভাবস্থায় একেকটি দিন একেকটি অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে থাকে। আর এই সকল অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পেরে মহিলারা আনন্দ আত্মহারা হয়ে যায়। তবে দুর্ভোগের বিষয় এটা যেমন সুখের সময় তেমন বিপদ হিসেবে সামনে চলে আসতে পারে পায়ের ব্যথা। আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যথার কারণ নিয়ে আলোচনা করব। গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যথা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়।
কোন ওষুধ এই কাজ হয় না। গর্ভাবস্থায় সব রকমের ওষুধ খাওয়াও যায় না। বিশেষজ্ঞরা জানান গর্ভাবস্থায় হঠাৎ করে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। পায়ের উপর চাপ পড়ে বেশি। এ কারণে হঠাৎ করে পায়ের ব্যথা বাড়তে থাকে। একবার যদি এই ধরনের সমস্যা আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথার কারণ
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথার নানা রকম কারণ রয়েছে। তাদের লিগামেন্ট ও পেলভিস মেরুদন্ড সেক্রালিয়াক জয়েন্ট যোগ দেয়। গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে পেটে ব্যথা খুবই সাধারণ একটি ঘটনা।
- শরীরের লিগামেন্ট গুলো স্বাভাবিকভাবে প্রসবের জন্য প্রস্তুতি নেয়। এই সময় লিগামেন্ট গুলো নরম, প্রসারিত হয়। যার নিচের পিঠ এবং জয়েন্ট গুলোতে ব্যথা হয়।
- গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরের ওজন অনেক বেড়ে যায়।মেরুদন্ড এই ভার সহ্য করতে পারে না। ফলে পিঠে নিচের দিকে ব্যথা হয়। পেটের মধ্যে বাচ্চা যত বড় হয়ে থাকে জরায়ুর ওজন ফেলাবিয়ান এবং পিঠের রক্তনালী এবং স্নায়ুর উপরে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে পিঠে ব্যথা হয়।
- প্রথম তিন মাসে প্রজেস্টেরন এর মাত্রা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। হরমোনের অতিরিক্ত পরিমাণ চারপাশে পেশী এবং লিগামেন্টগুলিকে শিথিল করে দেয়।
- অনেকে গর্ভাবস্থা কে জীবন পরিবর্তনকারী অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখে। কিন্তু এর সাথে নতুন করে নিয়ে আসে জোর। এই জোরটি একজন ব্যক্তির মেজাজ মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। তাই মানসিক চাপের চাপের সময় আপনি ব্যথা অনুভব করতে পারে।
- জরায়ু প্রসারিত হওয়ার সাথে পাঁজরের খাঁচা থেকে পিউবিক হাড় পর্যন্ত দুটি সমান্তরাল বেশি কেন্দ্রের সিম বরাবর আলাদা হতে পারে। আলাদা হয়ে যাওয়ার ফলে পিঠের ব্যথা আরো বাড়তে পারে।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হলে করণীয়
আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমরা গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হলে করণীয় কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় সেরকম পিঠেও ব্যথা হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যাথা হলে করণীয় গুলো কি।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়ামের মাধ্যমে পেশি শক্তিশালী হয় এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। পিঠ এবং পেটকে শক্তিশালী করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করুন।
- বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে জরায়ু বড় হতে থাকে এবং সামনের দিকে সরে আসে। যা গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা দেয়। এই সময় ভালো ভঙ্গিতে বসুন এবং চলাফেরা করুন।
- পিঠের অস্বস্তি ব্যায়াম করা এবং কাজকর্ম করার মাধ্যমে কমিয়ে আনা যায়।
- স্বাস্থ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে ওজন বৃদ্ধি ও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
- যদি স্তনের ওজন বৃদ্ধির কারণে গর্ভ অবস্থায় পিঠের উপর ব্যাথা হয় তাহলে তা সঠিক জুতা এবং ভালো ব্রা ব্যবহার করলে ব্যথা কমে।
- কিছু কিছু বিশেষজ্ঞরা ব্যথা কমানোর জন্য প্রসব পূর্বক কিছু ম্যাসাজ করার পরামর্শ দেন।
- এছাড়াও ঠান্ডা বা গরম সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
- ব্যথা যদি না কমে তাহলে শেষে পেনকিলার ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।
- নিয়মিত স্ট্রেচিং, শারীরিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং ভারী বস্তু তোলা থেকে বিরত থাকুন।
- মাথা উঁচু করে এবং পিঠ পিছন দিকে হেলানো রেখে বসলে মানসিক চাপ কমে।
উপরে উক্ত ঘরোয়া টোটকা গুলো যদি আপনি মেনে চলতে পারেন তাহলে গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা অনেকটাই উপশম হবে। আশা করছি বিষয়টি আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় কেন
প্রিয় পাঠক, আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় হলো গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় কেন। একজন গর্ভবতী নারীর কোমরে ব্যথা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। ৮০% মহিলারা গর্ভাবস্থায় এই সমস্যাটির সম্মুখীন হয়ে থাকে। সাধারণত গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাস থেকে বেশি দেখা যায়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে প্রথম দিক থেকেই দেখা যায়। এরপর আস্তে আস্তে ব্যথা উরু, পা এবং নিতম্বের দিকে কে ছড়িয়ে যায়।
সন্তান প্রসবের সময় যত ঘনিয়ে আসে এ ব্যথা তত বাড়তে থাকে। এর ফলে অনেকের রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারে না। গর্ভাবস্থায় শরীরের ওজন বাড়তে থাকে। শরীর আস্তে আস্তে ভারী হয়। তাই পেশির ও সন্ধির উপরে চাপ বাড়তে থাকে। সেজন্য কোমর ব্যথা আস্তে আস্তে বাড়ে। প্রসবের আগে থেকে স্বাভাবিক প্রসবের প্রস্তুতি হিসেবে হরমোনের প্রভাবে কোমরে স্যাক্রিলিয়া জয়েন্ট এর লিগামেন্ট গুলো শিথিল হয়ে যায়।
ফলে বহন ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় এবং ব্যথা বাড়ে। জড়ায়ু বড় হওয়ার কারণে মায়ের শরীরের ভরকেন্দ্র অপরিবর্তিত হয়ে যায়। এই কারণে গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হতে পারে। মাতৃত্বকালীন স্ট্রেস ও গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হওয়ার একটি কারণ। তবে প্রেগনেন্সির শুরু থেকে যদি আপনি ব্যায়াম করতে থাকেন তাহলে আপনি এই কোমর ব্যথা থেকে নিজেকে বাচাতে পারবেন। সেই সাথে আপনার চলাফেরায় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
শোয়ার সময় পায়ের নিচে এবং পেটে পিঠে সাপোর্ট দিয়ে ঘুমাতে হবে। এটা জেনে রাখা ভালো যে হাটা, ব্যায়াম, সাঁতার, সাইকেলিং এগুলো গর্ভাবস্থায় মেরুদন্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ কমায়। তাই আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এগুলো করতে পারেন।
তলপেটে ব্যথা কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে নানা রকম পরিবর্তন হয়। কিন্তু কিছু কিছু পরিবর্তন খুবই কষ্টদায়ক হয়ে যায়। এই পরিবর্তন চলাকালীন সময়ে ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে ইউটেরিয়াসের হাড়ের প্রসারণ ঘটে। তখন তলপেটে প্রচুর যন্ত্রণা হয়। এই হারগুলোর দুটি আস্তরণ যা ইউটেরিয়াসকে স্থিত থাকতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে পেটের একদিকে ব্যথা হয়।
আবার অনেক সময় দুদিকে ব্যাথা হতে পারে। এজন্য নানা রকম ইচ্ছা হতে পারে। যেমন- কাশি পাওয়া, হাঁচি পাওয়া, হাসতে ইচ্ছা হয় ,হঠাৎ করে দাঁড়াতে ইচ্ছা হয়। প্রথমবার ব্যথা শুরু হলে একটু অসুবিধা হয়। কিন্তু এটা খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। এ বিষয়ে চিন্তার কোন কারন নেই। যদি কয়েক সেকেন্ডের বেশি থাকে তাহলে ডাক্তার দেখাতে হবে।
বাচ্চা যত বড় হতে থাকে তত ইউটেরাসের হাড় চাপ খেতে থাকে। দ্বিতীয় তিন মাস থেকে পেটে দুই পাশে ব্যথা হয়। আপনার যদি বামদিকে অল্প কিছু ব্যথা হয় তাহলে এটা বুঝতে হবে যে ইউটেরাসের ডানদিকে পরিবর্তন হচ্ছে। কখনো কখনো ডান দিকের হাড় শিথিল করার জন্য বাঁ দিকের হাড়গুলোর মধ্যে একটি টান অনুভূত হয়। এই ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পেলবিক এর কিছু ব্যায়াম করা যায়। অনেক সময় পেটে ব্যথা থেকে যায়।ভ্রুন বাম দিকের ডিম্বাশয়ে থাকলে তাকে একটপিক প্রেগনেন্সি বলা হয়ে থাকে। এর কারণে অনেক সময় বাদ দিকে ব্যথা হয়। আবার অনেক মহিলাদের প্রেগনেন্সিতে প্রথম সপ্তাহে কোন লক্ষনই প্রকাশ পায় না।
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের কোমর ব্যথা হয়। একটপিক প্রেগনেন্সিতে ভ্রুন ইউটেরাসে বড় না হয়ে অনেক সময় ফ্যালোপিয়ান টিউবের ভিতরে বড় হয়। যা মা ও শিশুর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া যদি সিরিয়াস কিছু হয় তাহলে বাম পাশে পেট ব্যথা করে। অকাল প্রসব, স্মৃতিশক্তি হারানো, পেটে পাথর এবং আরো কিছু সংক্রামক হতে পারে।
তবে গর্ভাবস্থায় একজন নারীর হালকা ব্যথা থাকা ভালো। কারন তাতে বোঝা যায় যে ভ্রুনের সাধারণ বৃদ্ধি ঘটছে। কিন্তু ব্যথার সাথে সাথে যদি জ্বর, রক্তপাত অনুভূত হয় তাহলে শীঘ্রই ডাক্তার দেখানো উচিত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সির লক্ষণ ছাড়াও তলপেটে ব্যথা হতে পারে। যেমন গ্যাস, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির কারণে ব্যথা হয়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় কেন এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে কোমর ব্যথা হয় কেন এ বিষয়টি আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। সেই সাথে গর্ভকালীন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করে রয়েছে।
যা আপনি ইতিমধ্যে আর্টিকেলটি পড়ে জেনেছেন। আমাদের লেখা সম্পর্কে যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে অথবা আপনি কোন বিষয়ে বুঝতে না পারেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো নতুন নতুন বিষয়ে পোস্ট করা জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আল্লাহ হাফেজ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url