ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি - বিশ্বের প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম কি
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এগুলো নিয়ে জানব। আমরা অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখতে চাই কিন্তু ব্যাংক সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। যাদের ব্যাংক সম্পর্কে কোন ধারণা নেই তাদের কথা চিন্তা করে ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি বিষয়টি নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি।
ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে আমরা কেউ ব্যাংকে কোনো প্রকার লেনদেন করতে চায়না। আশা করছি, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি ব্যাংক সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন। তাহলে চলুন ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি জেনে নেওয়া যাক।
ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
ব্যাংক কাকে বলে? ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা কিনা জনগণের থেকে জনগণের অব্যবহিত টাকা আমানত হিসেবে জমা রাখে, ঋণ দান করে, নোটের প্রচলন করে এবং অর্থের নিরাপদ সংরক্ষণ করে, লোন প্রদান এবং অন্যান্য কার্যাবলীর মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে থাকে। ব্যাংকের সংজ্ঞা আমরা এভাবে দিতে পারি-
"ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা জনগণের কাছ থেকে সুদ বা লাভের বিনিময়ে আমানত সংগ্রহ করে এবং লাভের নিমিত্তে বিনিয়োগ করে এবং সঞ্চয়কারী চাওয়ার সাথে সাথে ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।"
এবারে জেনে নেওয়া যাক ব্যাংক কত প্রকার ও কি কি? কারণ আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় হচ্ছে ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি।
বিভিন্ন রকম দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাংকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন মালিকানা, কাঠামো, গঠন, নিবন্ধ,ন অঞ্চল এবং নিয়ন্ত্রণ, কার্যকলাপ এগুলোর ভিত্তিতে ব্যাংকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে ব্যাংকের শ্রেণীবিভাগ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কাঠামোভিত্তিক প্রকারভেদ
কাঠামো ভিত্তিতে ব্যাংক কে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো।
একক ব্যাংকঃ যেখানে শুধুমাত্র একটি ব্যাংকের কার্যাবলী শুধুমাত্র একটি স্থানে সম্পাদিত হয় তাকে একক ব্যাংক বলে। একক ব্যাংকের কোন প্রকার শাখা-প্রশাখা থাকে না এবং এই ব্যাংকের কার্যক্রম শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশে কোন প্রকার একক ব্যাংক ব্যবস্থার প্রচলন নাই।
শাখা ব্যাংকিংঃ কোন একটি ব্যাংক যখন তার প্রধান কার্যালয়ের অধিনে দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন রকম শাখা স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যাবলী সম্পাদন করে তখন তাকে শাখা ব্যাংকিং বলে। আর শাখা ব্যাংকের কোন প্রকার আলাদা সত্ত্বা থাকে না। এটি শুধুমাত্র প্রধান অফিসের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। যেমন- জনতা ব্যাংক লিমিটেড, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ইত্যাদি।
চেইন ব্যাংকিংঃ যে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যৌথ মালিকানা থাকে এবং তার পরেও নিজ নিজ সত্তা বজায় রেখে সহজ ভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে এমন ব্যাংক ব্যবস্থা কে চেইন ব্যাংকিং বলা হয়। চেইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে একে অপরের উন্নতি সাধন করা যায়।
গ্রুপ ব্যাংকঃ যখন একটি হোল্ডিং কোম্পানির আন্ডারে ২ বা ততোধিক ব্যাংক একত্রিত হয়ে পরিচালিত হয় এবং ব্যাংকিং কার্যাবলী পরিচালনা করে তখন তাকে গ্রুপ ব্যাংকিং বলে। এটি একটি বৃহদাকার ব্যাংক যা অন্য একটি বা কয়েকটি দুর্বল ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ার কিনে ফেলে।
কার্যভিত্তিক প্রকারভেদ
কার্যভিত্তিতে ব্যাংক ১১টি ভাগে বিভক্ত। বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র। সম্পূর্ণ মুদ্রা বাজারকে সুসংগঠিত ভাবে পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হল মুদ্রার প্রচলন, অর্থ সরবরাহ অর্থাৎ ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ক্ষমতা এবং দায়িত্ব থাকে। বাংলাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলা হয়। ইংল্যান্ডের ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড, জাপানে ব্যাঙ্ক অফ জাপান কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলা হয়।
বাণিজ্যিক ব্যাংকঃ মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে জনগণের কাছে থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আমানত হিসেবে রাখে এবং সেই আমানতের টাকা হতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে যে ব্যাংক পরিচালিত হয় তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলা হয়। যেমন- ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।
কৃষি ব্যাংকঃ কৃষি ব্যাংক কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন লক্ষ্যে কৃষকের বিভিন্ন মেয়াদের ঋণ দান সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে। এটি একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ যেহেতু কৃষি নির্ভর দেশ। আমাদের কৃষি উন্নয়ন অনেকটাই নির্ভর করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপরে।
শিল্প ব্যাংকঃ দেশের শিল্প খাত উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে শিল্প ব্যাংক বলে। যন্ত্রপাতি, ভূমি ক্রয়, কারখানা নির্মাণ ইত্যাদির জন্য শিল্প ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, ডিবিবিএল, একটি শিল্প ব্যাংক।
বিনিময় ব্যাংকঃ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে বিনিময়ে ব্যাংক বলে। বিনিময়ে ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, রপ্তানি ইত্যাদি কাজ করা হয়।
বিনিয়োগ ব্যাংকঃ বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে শিল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান, ব্রিজ ফিনান্স, ডিবেঞ্চার ফিনান্স সহ বিভিন্ন পরামর্শমূলক কার্যকলাপ সম্পাদন করা হয় তাকে বিনিয়োগ ব্যাংক বলে।
সঞ্চয়ী ব্যাংকঃ যে সকল ব্যাংক জনগণের অলস অর্থ সঞ্চয় হিসেবে গ্রহণ করে এবং মুনাফা বা সুদ প্রদানের মাধ্যমে জনগণকে অধিক উৎসাহিত করে তোলে সেগুলোকে সঞ্চয় ব্যাংক বলা হয়। এ সকল ব্যাংকের যেকোনো সময় টাকা জমা এবং উঠানো সুযোগ রয়েছে।
বন্ধকি ব্যাংকঃ যেকোনো ধরনের জমি বন্ধক রেখে কৃষি বা শিল্প উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী যে ব্যাংক ঋণ প্রদান করে তাকে বন্ধকি ব্যাংক বলা হয়।
পরিবহন ব্যাংকঃ যে ব্যাংক পরিবহন শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত তাকে পরিবহন ব্যাংক বলে। আধুনিকীকরণ, খুচরা যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ঋণ প্রদান করে থাকে।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংকঃ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে, শিল্পায়ন করার জন্য আর্থিক সহায়তা করে এবং পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
আমদানি-রপ্তানি ব্যাংকঃ আমদানি রপ্তানি ব্যাংকের প্রধান কাজ হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সহায়তা করা। মূলত আমদানির জন্য ঋণ দেওয়া, প্রত্যয়-পত্র সুবিধা, আমদানি তদারকি, এইরকম উপদেশমূলক কাজ করে থাকে।
ব্যবসায়ী গঠন ভিত্তিক প্রকারভেদ
ব্যবসায় গঠন ভিত্তিক ব্যাংক পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। চলুন প্রকারভেদ গুলো জেনে নেওয়া যাক।
এক মালিকানা ব্যাংকঃ যে ব্যাংক একক উদ্যোগে এবং এবং পুঁজিতে এক ব্যক্তি বা মালিক দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে এক মালিকানা ব্যাংক বলা হয়।
অংশীদারী ব্যাংকঃ যে ব্যাংক অংশীদারি ব্যবসার মতো অংশীদারি আইনের ভিত্তিতে গঠিত হয় এবং পরিচালিত হয় তাকে অংশীদারী ব্যাংক বলে।
যৌথ মূলধনি কোম্পানি ব্যাংকঃ যে ব্যাংকের মূলধন কোম্পানি আইনের আওতায় গঠিত হয় এবং পরিচালিত হয় তাকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ব্যাংক বলা হয়।
সমবায় ব্যাংকঃ সমবায় নীতি এবং আইন অনুযায়ী গঠিত এবং পরিচালিত হলে সেই ব্যাংক কে সমবায় ব্যাংক বলে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাঃ রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ব্যাংক সম্পন্নভাবে সরকারি মালিকানায় এবং পরিচালনায় গঠিত। যেমন- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড।
মালিকানা ভিত্তিক প্রকারভেদ
মালিকানা ভিত্তিক ব্যাংক ছয় রকমের। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
সরকারি ব্যাংকঃ সরকারি ব্যাংক সরকারি উদ্যোগে গঠিত হয়। সরকারের অর্থে পুঁজি সংগ্রহ করে এবং পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। উদাহরণ- অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড।
বেসরকারি ব্যাংকঃ বেসরকারি ব্যাংক ব্যক্তি মালিকানায় গঠিত হয়। যৌথ মালিকানায় গঠিত পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। উদাহরণ- যমুনা ব্যাংক লিমিটেড।
বিশেষায়িত ব্যাংকঃ যে সকল ব্যাংক মাইক্রোক্রেডিট বা জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে তাদেরকে বিশেষায়িত ব্যাংক বলা যায়। যেমন- গ্রামীণ ব্যাংক একটি বিশেষায়িত ব্যাংক। গতানুগতিক ব্যাংকগুলো জামানত না নিয়ে ঋণ প্রদান করতে পারতোনা। সেজন্য বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগন ব্যাংক সেবা পেত না।
যৌথ মালিকানায় ব্যাংকঃ যে সকল ব্যাংক সরকারি এবং বেসরকারি উভয় মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে যৌথ মালিকানা ব্যাংক বলা হয়। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড একটি যৌথ মালিকানা ব্যাংকের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
স্বশাসিত ব্যাংকঃ স্ব-শাসিত ব্যাংকের মালিক সরকার নিজেই। কিন্তু সরকারি ব্যাংকে সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে এটি স্বশাসিত এবং স্বনিয়ন্ত্রিত। সরকার পরিচালক মন্ডলীর প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারে। কিন্তু সাধারণ কার্যক্রমে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করে না।
বিদেশি ব্যাংকঃ এক দেশের ব্যাংক যখন অন্য দেশে গিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে তখন ওই দেশের জন্য তারা বিদেশী ব্যাংক হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ বিদেশি মালিকানা যে সকল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সেগুলোকে বিদেশি ব্যাংক বলা হয়। যেমন- স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংক।
অঞ্চল ভিত্তিক প্রকারভেদ
অঞ্চলভিত্তিতে ব্যাংক তিনটি ভাগে বিভক্ত।
আঞ্চলিক ব্যাংকঃ কোন একটি বিশেষ অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে আঞ্চলিক ব্যাংক বলা হয়। যেমন- রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।
জাতীয় ব্যাংকঃ একটি দেশের মধ্যে যদি ব্যাংকিং ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তাকে জাতীয় ব্যাংক বলে।
আন্তর্জাতিক ব্যাংকঃ যখন একটি ব্যাংক দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে ব্যাংকের শাখা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত করে তাকে আন্তর্জাতিক ব্যাংক।
নিবন্ধন ভিত্তিক প্রকারভেদ
নিবন্ধন ভিত্তিতে ব্যাংক দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
দেশি ব্যাংকঃ দেশের ব্যাংকিং আইনের আওতায় যে ব্যাংক গঠিত এবং পরিচালিত হয় তাকে দেশি ব্যাংক বলে।
বিদেশি ব্যাংকঃ এক দেশে নিবন্ধিত ব্যাংক কিন্তু ব্যাংক ব্যবসার জন্য অন্য দেশে পরিচালিত হয় তাকে বিদেশি ব্যাংক বলে।
বিশেষ মক্কেল ভিত্তিক প্রকারভেদ
বিশেষ মক্কেল ভিত্তিতে ব্যাংক সাধারণত চার প্রকার।
শ্রমিক ব্যাংকঃ শ্রমিকদের উপার্জিত অর্থ সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে এবং জীবনধারণের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত তাকে শ্রমিক ব্যাংক বলা হয়। আমাদের দেশে স্বতন্ত্র ভাবে কোন শ্রমিক ব্যাংক নেই। তবে শিল্প কারখানা এলাকায় শাখা খুলে বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলো এই কাজ করে থাকে।
মহিলা ব্যাংকঃ মহিলাদের উৎসাহিত করার জন্য, ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে পরিচিত করার জন্য এবং মহিলাদের বিশেষভাবে ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানের জন্য যে সকল ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে মহিলা ব্যাংক বলে।
স্কুল ব্যাংকঃ ইউরোপ দেশগুলোতে স্কুল ব্যাংকের প্রচুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যাংক ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এ ব্যাংকের মাধ্যমে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের জন্য সঞ্চয় বাক্স বা ব্যাগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা এতে টাকা পয়সা জমা করে।
ভোক্তা ব্যাংকঃ ভোক্তা ব্যাংক সাধারণত ভোক্তাদের বাকিতে পণ্য কেনার সুবিধা প্রদান করে। ব্যাংক ভোক্তা কে একটি কার্ড প্রদান করে যার নাম ক্রেডিট কার্ড এবং এটি দ্বারা ভোক্তা বাজার থেকে যেকোনো পণ্য ক্রয় করতে পারে।
নিয়ন্ত্রণ ভিত্তিক প্রকারভেদ
নিয়ন্ত্রণ ভিত্তিতে ব্যাংক তিন প্রকার
পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকঃ যে ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক বলে।
আংশিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকঃ যে ব্যাংকের কার্যক্রম আংশিকভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে এবং আংশিক ব্যাংকে নিজস্ব নীতিতে চলে তাকে আংশিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক বলে।
বাজার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকঃ বাজার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক বাজার অর্থনীতিতে গড়ে ওঠে। এ ব্যাংকের উপর সরকার বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ভিত্তিক
বিভিন্ন ধর্ম তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সেগুলো প্রয়োগ কল্পে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাদের ধর্মীয় ব্যাংক বলে। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদানের জন্য ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে ইসলামিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও অন্যান্য ব্যাংকের সাথে সেবা প্রদানের সামঞ্জস্য রয়েছে তার পরেও আমানত গ্রহণ এবং ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সেবা গুলো দেখতে পাওয়া যায়।
মুদারাবাঃ মুদারাবা সেবার মাধ্যমে গ্রাহকে ব্যবসার মূলধন যোগানদার এবং ব্যবসার শরীক হিসেবে তার মূলধন ব্যবস্থাপনা করে দেয়।
মুশারাকাঃ মুশারাকার মাধ্যমে ব্যাংক এবং গ্রাহক ব্যবসা যৌথভাবে পরিচালনা করে এবং লাভ-লোকসান সমভাবে বন্টন করে নেয়।
মুরাবাহাঃ যদি ঋণগ্রহীতাকে কোন কিছু কেনার জন্য অর্ধ প্রদান করা হয় তখন তাকে মুরাবাহা বলা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক কিছু লাভ সহ ঋণের অর্থ ফেরত নেই।
ইজারাঃ ব্যাংক যখন নিজেই ক্রেতার পক্ষ হতে গ্রাহকের অনুরোধে বিভিন্ন রকম পণ্য কিনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্রেতার ব্যবহারের জন্য তার কাছে হস্তান্তর করে এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে গ্রাহক ব্যাংকের পণ্য ব্যাংকের নিকট ফেরত দেয় এবং যে সময়টুকু ব্যবহার করেছে তার জন্য ব্যাংকের নির্দিষ্ট পরিমাণে ভাড়া প্রদান করেন তখন তাকে ইজারা বলা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক কর্মরত রয়েছে। যেমন-
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড
- শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
আশা করছি আমাদের লেখাটি পড়ে ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি বিষয়টি আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
ব্যাংকের সম্পদ কি কি
ব্যাংকের সম্পদ কি? সম্পদ এমন একটা জিনিস যা একটি ব্যবসার বা একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন। ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্যে গাড়ি বাড়ি থাকতে পারে, ব্যবসায়িক সম্পদে যন্ত্রপাতি এবং জমি জমা থাকতে পারে। ব্যাংক সম্পদে কি কি রয়েছে? ব্যাংক সম্পদ বলতে ব্যাংকের মালিকানা জিনিসগুলোকে বোঝায়। ব্যাংকের সম্পদ গুলো ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক সম্পদের থেকে আলাদা।
কারণ তারা সাধারণত অর্থ সম্পর্কিত সম্পদ অন্তর্ভুক্ত করে। এই সম্পদ গুলো বিনিয়োগ থেকে শুরু করে ভৌত সম্পদ থেকে ঋণ পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের একটি পরিসীমা ও ব্যবহার করে। ব্যাংকের সম্পদ নগদ অন্তর্ভুক্ত, বিনিয়োগ, ঋণ এবং অগ্রিম সব ধরনের গ্রাহকদের দেওয়া। অবশেষে ব্যাংকের প্রাঙ্গণ, আসবাবপত্র এবং জিনিসপত্র সবকিছুই একটি ব্যাংকের সম্পদ।
ব্যাংকের সম্পদের মধ্যে এটা সম্পর্কে এবং ছোট ব্যবসার সাথে রয়েছে। সেজন্য ক্রেডিট কার্ড, স্বয়ংক্রিয় বন্ধকি, ব্যক্তিগত ঋণ সবগুলোই ব্যাংকের সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও বিভিন্ন অস্থায়ী হোল্ডিং একাউন্ট আর সাসপেন্স এন্টার অফিস টেইলার ট্রান্সজিট এবং ডেবিট ব্যালেন্স এগুলো একটি ব্যাংকের সম্পদ।
বিশ্বের প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম কি
বিশ্বের প্রথম আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬৯৪ সালের ২৭ শে জুলাই।
বিশ্বের প্রথম সরকারি ব্যাংক ব্যাংক অফ ভেনিস 1997 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে বিশ্বের প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড, ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (যুক্তরাষ্ট্র) এবং পিপলস ব্যাংক অফ চায়না (চীন)।
ব্যাংক ব্যবস্থার উৎপত্তিস্থল কোথায়
ব্যাংকিং ইতিহাসে ৪ হতে ১৪০০ সাল পর্যন্ত সময়কে ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যযুগ বলা হয়। এই সময় হতে ব্যাংকের কার্যাবলী উন্নত হতে থাকে। উক্ত সময়ে ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বে ইতালীয় প্রজাতন্ত্রগুলি ব্যবসায়িক বাণিজ্যের দিক থেকে খুব উন্নত ছিল। সপ্তম শতাব্দীতে ইতালির রোম শহরের ইহুদি ব্যবসায়ীরা এবং মহাজনরা মিলে যৌথ থেকে ব্যাংক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ১১৫৭ সালে ভেনিস সরকার নিজ প্রচেষ্টায় ব্যাংক অফ ভেনিস প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বিশ্বের প্রথম সাংগঠনিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
ব্যাংকিং এর জনক কে
ব্যাংকিং এর জনক হচ্ছে আলেকজান্ডার হ্যামিলটন। আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন ১৯৭০ এর দশকে ট্রেজারি সচিব হিসেবে বিরোধিতা সদ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ব্যাংক ব্যবস্থা স্থাপন করেন। কিন্তু উনিশ শতকে ইউরোপের অনেক দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। আধুনিক ব্যাংকিং এর জনক হচ্ছে লুৎফর রহমান।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং বিশ্বের প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম কি তা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, ব্যাংকিং সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনি ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এ বিষয়ে যদি কোন কিছু বুঝতে আপনার অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
আমাদের লেখাটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো নতুন নতুন বিষয় পোস্ট পড়ার জন্য নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url