অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা - বাংলাদেশে অনলাইন ব্যাংকিং

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকে আমাদের আর্টিকেলের মূল বিষয় হলো অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশ অনলাইন ব্যাংকিং। আপনি যদি অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অনলাইন ব্যাংকিং
অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে জানা আমাদের সকলের জন্য জরুরী। আশা করছি, আর্টিকেল টি পড়া শেষ হলে আপনি অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশ অনলাইন ব্যাংকিং নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ভূমিকা

আমাদের বর্তমান যুগের দৈনন্দিন জীবনে সবকিছু অনলাইনে নির্ভর হয়ে উঠেছে। মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত হলো অনলাইন ব্যাংকিং। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে অনেক বেশি সহজ করা হয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আমরা প্রায় সকলে কম বেশি অনলাইন ব্যাংকিং সেবা নিয়ে থাকি। 

অনলাইন ব্যাংকিং মূলত কি ভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। আজকে আমরা অনলাইন ব্যাংকিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।এছাড়াও অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা- বাংলাদেশ অনলাইন ব্যাংকিং এই দুটি বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেল বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। তাই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।

ডিজিটাল ব্যাংক কি

ডিজিটাল ব্যাংকিং হলো এমন একটি অনলাইন ব্যাংকিং যা সেবা গ্রহণের জন্য একটি প্রেক্ষাপট অংশ, যেখানে ব্যাংকিং সেবাগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। গতানুগতিক ব্যাংকের তুলনায় ডিজিটাল ব্যাংকিং স্থানান্তর ধীরে ধীরে হয়েছে । এর বিভিন্ন ডিগ্রী দ্বারা গঠিত ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য একটি প্রধান কার্যালয় থাকবে। কিন্তু সেবা প্রধানের ক্ষেত্রে কোন স্থাপনা থাকবে না। অর্থাৎ এই ব্যাংক কোন ওটিসি দেবে না। 

এর নিজস্ব কোন শাখা প্রশাখা, এটিএম, সিডিএম সিআরএম কিছুই থাকবে না। সকল সেবায় নির্ভর হবে মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে। ডিজিটাল ব্যাংক ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদান করবে। গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার জন্য ডিজিটাল ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড এবং অন্য কোন উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিবে। কিন্তু লেনদেনের জন্য কোন প্লাস্টিক কার্ড দিবে না। এ ব্যাংকের সেবা নিতে হলে গ্রাহককে অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টস সহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবে। ডিজিটাল ব্যাংক কোন ঋণপত্র খুলতে পারবে না। বড় এবং মাঝারি শিল্পে কোন ঋণ দিবে না।

কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক

ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত মানুষকে কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক সেবা প্রদান করতে চাই। অর্থাৎ ব্যাংকিং সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করতে চাই। কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাই। এক্ষেত্রে কড়ি ব্যাংকিং সেবার মাধ্যম হবে অ্যাপ। এজন্য কড়ি এমন একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করবে যার মাধ্যমে গ্রাহকরা আর্থিক সেবা খুব সহজ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে পাবে। এছাড়াও এম এফ এস সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ডিজিটাল ব্যাংকের হিসাবে টাকা জমা এবং উত্তোলন করা যাবে।

অনলাইন ব্যাংকিং কি

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব। কিন্তু তার আগে আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং কি এ বিষয়টি নিয়ে জানতে হবে। তাহলে চলুন অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে জানার আগে আমরা অনলাইন ব্যাংকিং কি বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারের আওতায় ব্যাংকের শাখা মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে এক শাখার চেকের অর্থ অন্য শাখায় প্রদান বা অর্থ জমা-গ্রহণের কম্পিউটারের সাহায্যে লেনদেন কে অনলাইন ব্যাংকিং বলে। সবচেয়ে সহজ ভাষায় বলতে গেলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকের যে সেবা গ্রহণ করে থাকে তাকে অনলাইন ব্যাংকিং বলা হয়। ঘরে বসে মোবাইলে ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকের সকল সুবিধা ভোগ করতে পারে। 

অনলাইন ব্যাংকিং এর বিভিন্ন সেক্টর আছে। যেমন- নেট ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি। অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সাপ্তাহিক ছুটির দিনও ব্যাংকে না গিয়ে বাসায় বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের একাউন্ট থেকে অন্য সকল অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন করা যায়। অনলাইন ব্যাংকিং সময় বাঁচিয়ে দেয় অন্যদিকে নির্ভুল ভাবে কাজ করে।

ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সুবিধা

  • ডিজিটাল ব্যাংকিং সকল কার্যক্রম অ্যাপের বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকরা করতে পারে। অনেক ধরনের লেনদেন ও সকল ধরনের ব্যাংক হিসেব পেতে পারে ডিজিটাল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
  • নানা রকম সুযোগ-সুবিধার কারণে ডিজিটাল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থা থেকেই ডিজিটাল ব্যাংকিং একাউন্টে প্রবেশ করা যায় এবং নিজের একাউন্টের ব্যালেন্স অন্য একাউন্টে ট্রান্সফার করা যায়। সব ধরনের বিল পরিশোধ এবং ঋণের জন্য আবেদন করা যায়।
  • ডিজিটাল ব্যাংক হল পুরোপুরি একটি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থা। এই ব্যাংকের কোন শাখা-উপ শাখা নাই। এটি একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। সবকিছুই অনলাইনে লেনদেন করা হয়ে থাকে।
  • যেসব গ্রাহক ব্যস্ত থাকার কারণে ব্যাংকে যেতে পারে না তাদের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং একটি নির্ভরশীল ও আস্থার জায়গা। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থাকার কারণে গ্রাহকদের অনেক সময় বাঁচে। ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। ব্যাংকে যেতে ভাড়ার পিছনে টাকা ব্যয় করতে হয় না। এক্ষেত্রে অনেক সময় সাশ্রয় হয়।
  • ডিজিটাল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনি দেশের যেকোনো প্রান্তে থেকে গ্রাহক একাউন্ট খুলতে এবং ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন। এছাড়াও ২৪ ঘন্টা যে কোন সময় এই ব্যাংকের সেবা নেওয়া যায়। ফলে ব্যাংকগুলো সাশ্রয় কম খরচে গ্রাহকদের সেবা দিতে পারে।

অনলাইন ব্যাংকিং এর সুবিধা

নানা রকম অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা রয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহারে অনেক সুবিধা। আমরা কয়েকটি অনলাইন ব্যাংকিং এর সুবিধার দিকগুলো তুলে ধরলাম।
  • অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যেকোনো জায়গায় বসে লেনদেন করা যায়। আপনি ব্যাংকে উপস্থিত না থাকলেও দেশে বা বিদেশে টাকা আদান প্রদান করতে পারবেন।
  • অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যেকোনো বিল সম্পন্ন করা যায়। বিশেষ করে বাসার ওয়াইফাই বিল, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি প্রয়োজনে চাহিদা গুলো যখন ইচ্ছা একাউন্ট লগ ইন করে করা যায়।
  • সাধারণত সপ্তাহে দুই দিন ব্যাংক বন্ধ থাকে। আপনাকে ছুটির দিন ব্যতীত ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংকের কাজ সমাধান করতে হয়। তবে অনলাইন ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বন্ধ নেই। অনলাইন ব্যাংকিং দিন রাত 24 ঘন্টায় কাজ করা যায়।
  • অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধায় নিজের ব্যালেন্স চেকসহ নানান ভাবে আপনার অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করার জন্য অনলাইন ব্যাংকিং অনেক সুবিধা প্রদান করে। এখান থেকে আপনার লেনদেন এর সকল হিসাব দেখতে পারবেন। পাশাপাশি আপনার একাউন্টে থাকা অর্থের পরিমাণও দেখতে পারবেন।
  • আপনি যদি অনলাইনে কোন কেনাকাটার জন্য লেনদেন করতে চান তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে সেই ধরনের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। বিশেষ করে -ক্রেডিট কার্ড।
  • যদি নিরাপত্তার দিকে চিন্তা করি তবে প্রচলিত মুদ্রা বিনিময়ের চেয়ে অনলাইন ব্যাংকিং অনেক বেশি ঝুঁকি মুক্ত। কারণ মুদ্রাতে জাল নোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অনলাইন ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে জাল মুদ্রা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
  • আপনি ব্যাংকে না গিয়ে যেকোন ভাবে টাকা সেন্ড করতে পারবেন। আবার বিভিন্ন স্থান থেকে আপনার একাউন্টে টাকা লোড করতে পারবেন। আর সকল তথ্যগুলো আপনি ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে মনিটরিং করতে পারবেন সব সময়।
  • অনলাইন ব্যাংকিং কাজ করা খুবই সহজ। যে কোন ব্যাক্তি চাইলে কাজ টি সহজেই শিখে ফেলতে পারে।
  • অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করে এটিএম বুথের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা খুবই সহজ পদ্ধতি।
  • আপনি যদি ব্যাংকে টাকা জমা দেন বা উঠানোর ক্ষেত্রে আপনাকে লাইন ধরে বসে থাকতে হবে না। বরং অনলাইন ব্যাংকিং আপনার অনেক সময় বাঁচিয়ে দেবে।
  • আপনার লেনদেনের ঝুকি এড়াতে অনলাইন ব্যাংকিং এর কোন বিকল্প ব্যবস্থা বর্তমান সময়ে নেই। অনলাইন ব্যাংকিং আপনাদের ডিজিটাল হতে সহায়তা করেছে।

অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা

অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ হওয়ার জন্য আমাদের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। বিকাশ, নগদ, রকেট, শিওর ক্যাশ, ডেভিড ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি অনলাইন ব্যাংক সেবার কারণে আর্থিক লেনদেন জনগণের কাছে অনেকটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। কিন্তু অনলাইন ব্যাংকিং এর কিছু সমস্যা রয়েছে। আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমরা অনলাইন ব্যাংকিং এর সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চলেছি। 

অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা বা ঝুঁকি গুলো জেনে নেওয়া যাক।

অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংঃ অনলাইন ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে অনলাইন একাউন্ট হ্যাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, একাউন্ট পাসওয়ার্ড এগুলোর মত গুরুত্বপূর্ণ যে সকল তথ্য রয়েছে সেগুলো নিরাপদে রাখতে না জানলে হ্যাকারদের আক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই। তাই এসব খুবই নিরাপদে রাখতে হবে। একাউন্টে খুব শক্তিশালী একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে। যাতে আপনার একাউন্ট নিরাপদ থাকে।

ভুল একাউন্টে টাকা চলে যেতে পারেঃ আমরা যদি কোন একাউন্টে টাকা পাঠাতে যাই তাহলে একাউন্ট নাম্বারের জায়গায় যদি দুই একটা সংখ্যা ভুল টাইপ করে ফেলি তাহলে ভুল নাম্বারে টাকা চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। যেন এ ধরনের কোন সমস্যা না হয়।

নকল পেমেন্ট গেটওয়েতে একাউন্টের গোপনীয় তথ্যঃ অনেক সময় সত্যিকারের ওয়েবসাইটের মতো করে ভুয়া ফিশিং সাইট তৈরি করা হয় এবং এগুলোতে অনলাইন গেট ওয়ের মাধ্যমে একাউন্টের সকল গোপনীয় তথ্য হ্যাক করে নিয়ে নিজ একাউন্টে টাকা স্থানান্তরকে করে নেওয়া হয়। তাই অনলাইন পেমেন্ট ওয়েতে তথ্য দেওয়ার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যদি কোন ওয়েবসাইটে এ ধরনের কোন সন্দেহ হয় তাহলে চেনার জন্য গুগলে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন।

অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়াঃ অনেক সময় অনলাইনে কোন একাউন্টের সাবস্ক্রিপশন, ট্রেন, বাস বা লঞ্চের টিকেট কেনার সময় টাকা কেটে নেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সেবাটি আমরা পাই না। কখনো কখনো এমনও হয় ঢাকা প্রদানের কোন মেসেজই আসে না যা দিয়ে আমরা অর্থ প্রদানের কোন প্রমাণ দিতে পারব। এমন সমস্যা যদি কখনো পড়েন তাহলে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের সময় সমস্যাঃ এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের সময় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয় কিন্তু এটিএম মেশিন হতে টাকা বের হয় না। যান্ত্রিক গন্ডগোলের কারণে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আপনার সমস্যার সমাধান করে নিতে হবে।

প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা যাওয়াঃ অনেক সময় এরকমটা হয় যে, যে পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা ছিল সেই পরিমাণ না দিয়ে বেশি টাকা চলে যায়। ভুল করে ১০০০ টাকা কে 20000 লিখে ফেলা অস্বাভাবিক কোন কিছু নয়। এ ধরনের সমস্যা এড়ানোর জন্য টাকার এমাউন্টের প্রতি ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। টাকার অংক টাইপ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।

অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরিঃ মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বিকাশ বা অন্য কোন অ্যাকাউন্ট অচল বা ব্লক হয়ে যাবার ভয় দেখিয়ে টাকা চুরি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনার ফোন নাম্বারে ওটিপি পাঠানো হয় এবং নানা রকম বিশ্বাসযোগ্য কথাবার্তা বলে একাউন্টের মালিক এর থেকে ওটিপি টি নেওয়ার চেষ্টা করে। এই ওটিপি যদি আপনি দিয়ে দেন তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টের সব টাকা প্রতারকের একাউন্টে চলে যাবে। বাংলাদেশ এ ধরনের ঘটনা খুবই অহরহ ঘটতে দেখা যায়।

এবারে আমরা অনলাইন ব্যাংকিং এর সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। বাংলাদেশের প্রায় ৫৭ টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৪০ টি তে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে। দিনে দিনে এই অনলাইন ব্যাংকিং সেবা জনপ্রিয় হচ্ছে। কিন্তু তারপরও এর গ্রাহক সংখ্যা ২০ লাখের নিচে। বাংলাদেশ অনলাইন ব্যাংকিং সেবা আরও বড় পরিসরে চালু করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্ত ব্যাংকের নেটওয়ার্ক বাড়ানো হচ্ছে। 

এতে করে রিয়েল ফ্যামিলির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। প্রতিমাসে নতুন ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক এ যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায়, দেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন এমন গ্রাহক সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ বিদেশি ব্যাংকের গ্রাহক ছিল। 

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার জন্য প্রতিজন গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো মাসে ২০০-৩০০ টাকা করে নেয়। তবে নানা প্রচেষ্টা করেও গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর প্রতি তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রাহকরা একাউন্ট খোলা, পরিবর্তন বা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, মোবাইল লোকেশন, ছোট বড় স্টেটমেন্ট, ঋণ সংক্রান্ত তথ্য, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, balance, বকেয়া দেনার হিসাব এবং পরিশোধের সীমা সবকিছু জানতে পারছে। 

ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা তাদের ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে অ্যাপস ব্যবহার করে। একেক ব্যাংক একেক নামে অ্যাপস চালু করেছে। স্মার্ট ওপেনার স্কাই, ব্যাংকিং আইচার ,আইস্মার্ট, আলফা এরকম আরো অনেক মোবাইল এপপ্স রয়েছে। গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই অ্যাপস গুলো ব্যবহার করতে পারে। 

গুগল প্লে স্টোর থেকে মোবাইলে খুব সহজেই এই অ্যাপস গুলো ডাউনলোড করা যায়। অনেক ব্যাংক তাদের ব্যাংকের সঙ্গে মিলে এপস ভিত্তিক লেনদেন চালু করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি একটি কোম্পানি চালু করেছে। এর মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যাংকিং ক্যাশ আউট, ক্যাশ ইন, বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা করা যাবে।

আশা করছি, অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তারপরে যদি অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

ই ব্যাংকিং কি

ই ব্যাঙ্কিং এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এমন একটি ব্যাংকিং সেবা পদ্ধতি যেখানে উন্নততর ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও খুব অল্প সময়ের মধ্যে নির্ভুল এবং ব্যাপক বিস্তৃত সেবা প্রধান করা সম্ভব। এ ধরনের পদ্ধতি প্রথাগত, কয়িক শ্রম নির্ভর, সনাতন, সীমিত সেবা সংবলিত, মন্থর কাগজ চমকিত স্তুপ এর সেকেলে ব্যাংকিং পদ্ধতির অবসান ঘটেছে। ইলেকট্রনিক ব্যাংকের সুবিধা গুলো হচ্ছে।
  • স্বয়ংক্রিয় গণনা যন্ত্র
  • ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড
  • অনলাইন ব্যাংকিং
  • হোম ব্যাঙ্কিং
  • মোবাইল ব্যাংকিং
  • বিক্রয় বিন্দু
  • আন্ত ব্যাঙ্কে নিকাশ ঘর পরিশোধ পদ্ধতি
  • স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘর
সবশেষে এটা বলা যায় যে, ই ব্যাংকিং হলো এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে আধুনিক তড়িৎবাহী পদ্ধতি কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার পরিবর্তীত নির্ভুলভাবে সম্প্রসারিত ব্যাংকে সেবা সুবিধা প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে টাকা উত্তোলন, সংগ্রহ, স্থানান্তর, তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, তথ্য প্রদান, যোগাযোগ ইত্যাদি সকল কাজ ইলেকট্রনিক্স পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয়।

বাংলাদেশে অনলাইন ব্যাংকিং

অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমটি চালু হয় ১৯৯০ সালে। এর মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমটি সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেম এখন ইউরোপ, আমেরিকা সহ বিশ্বের সব বড় বড় দেশ এর ব্যাংকগুলোতে গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি করেছে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তথ্য প্রযুক্তির এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইন ব্যাংকিং নানা রকম সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে। 

আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে উন্নত দেশের ব্যাংকিং লেনদেন অনলাইন নির্ভর হলেও বাংলাদেশ সেই তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে। দেশের মধ্যে বিদেশি অনেক ব্যাংকের শাখা অনলাইনে রয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলো ৯৯% বেসরকারি ব্যাংকক ৯৭ শতাংশ ও বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংকগুলোর ২৫ শতাংশ শাখা অনলাইনে রয়েছে। অনলাইনে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়ে থাকে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক হল -
  • ডাচ বাংলা ব্যাংক
  • স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
  • সিটি ব্যাংক
  • ইবিএল
  • শাহজালাল ব্যাংক
  • এবি ব্যাংক
  • ব্যাংক এশিয়া
  • সাউথইস্ট ব্যাংক ইত্যাদি
শুধুমাত্র অনলাইন বা ই ব্যাংকিং সেবায় গত ডিসেম্বরে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৪০ হাজার। ওই এক মাসে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। ১ কোটি ৫৪ লাখ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে কত ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছে ১৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সারাদেশে এটিএম বুথ রয়েছে ১০ হাজার ৩৫৫ টি। পয়েন্ট অফ সেল রয়েছে ৪৫ হাজার ৮৯৬ টি। দেশের ১০ হাজার ১০৯ টি শাখার মধ্যে ৮৯৯ টি ব্যাঙ্ক শাখা অনলাইনের আওতাভুক্ত। 

বর্তমানে বাংলাদেশের সব মিলিয়ে ৫৯টি ব্যাংকের কার্যক্রম চালু আছে। এর মধ্যে হাতে গোনা না কয়েকটি ব্যাঙ্ক ছাড়া সব ব্যাংকে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ পুরোটা অনলাইন সেবা দিচ্ছে এবং কেউ কেউ অল্প কিছু দিচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে অনেকটা উন্নতি করেছে। বর্তমানে আইসিটির ব্যাংকের সাথে নতুন নতুন অনেক গ্রাহক সেবা যোগ হয়েছে। সবশেষে আমরা এটা বলতে পারি যে বাংলাদেশে অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা দুটোই রয়েছে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি জানতে পেরেছেন। আপনার যদি আজকের এই আর্টিকেল সম্পর্কে অর্থাৎ অনলাইন ব্যাংকিং সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদেরকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 

এরকম আরো নতুন নতুন পোস্ট পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। এতক্ষন ধৈর্য ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url