শীত প্রধান দেশের তালিকা - শীত কোন মাসে শুরু হয়
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা শীত প্রধান দেশের তালিকা জানার চেষ্টা করব। সেই সঙ্গে শীত কোন মাসে শুরু হয় এ বিষয়টি সম্পর্কেও জানবো। শীত প্রধান দেশের তালিকা আমাদের অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। তাই শীত প্রধান দেশের তালিকা জানতে হলে আর্টিকেলের নিচের অংশটি পড়ুন।
আমাদের দেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। আমরা গরম এবং শীত সব রকম আবহাওয়াতেই মানিয়ে নিতে পারি। কিন্তু বিশ্বে এমন কিছু কিছু দেশের রয়েছে যেগুলোতে সারা বছর শীত থাকে। আমরা এরকম কিছু শীত প্রধান দেশের তালিকা দেখব।
শীত কোন মাসে শুরু হয়
শীত আসার আগেই শীত মোকাবেলার জন্য শীতের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত। কারণ শীতের দিনগুলো বছরের অন্যান্য সময়ের মতো না। এ সময়ে শীতের কাঁথা, কম্বল থেকে শুরু করে ত্বকের পরিচর্যার উপাদান অনেক কিছুই দরকার পড়ে। এখন আমরা জানবো শীত কোন মাসে শুরু হয়। একেক দেশে একেক সময়ে সে শুরু হয়।
নাতিশীতোষ্ণ এবং মেরু জলবায়ুতে শীতকাল শীতলতম ঋতু হিসেবে পরিচিত। শীতকাল শরতের পরে এবং বসন্তের আগে আসে। পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণনের ফলে ঋতুর সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সংস্কৃতি শীতের শুরু হিসেবে বিভিন্ন তারিখে ঘোষণা করেছে এবং কেউ কেউ আবহাওয়ার উপরে ভিত্তি করে একেক রকমের সংজ্ঞা ব্যবহার করে।
উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল, দক্ষিণ গোলার্ধ তখন গ্রীষ্মকাল এবং উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীতকাল। এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে শীতকাল তুষার এবং হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রা নিয়ে আসে। এবং শীতকালে যে দিনটিতে সূর্য দিগন্তের নিচে তার সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে সেই দিনটি সবচেয়ে ছোট দিন এবং দীর্ঘতম রাত হয়। শীতকাল কমে আসার সাথে সাথে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে পারে এবং রাতের দৈর্ঘ্য কমে যায়।
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। এর মধ্যে শীতকাল পঞ্চম ঋতু এবং গ্রীষ্মের বিপরীতে বছরের ঠান্ডা অংশ। শীতকাল শরতের শেষের দিকে শুরু হয় এবং পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস জুড়ে শীতকাল থাকে। বাংলাদেশের শীতকাল সবচেয়ে ভালো এবং উপভোগ্য একটি ঋতু। এটি সবচেয়ে ঠান্ডা ঋতু। সাধারণত নভেম্বর শুরু হয় এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকে।
শীত প্রধান দেশের তালিকা
পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ আছে যেখানে তাপমাত্রা সারা বছরই হিমাঙ্কের নিচে থাকে। এসব অঞ্চলের তাপমাত্রা কখনই শূন্য ডিগ্রীর উপরে উঠে না। সারা বছর সেই সব জায়গা বরফে ঢেকে থাকে এবং তাপমাত্রা মাইনাসে নেমে যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর শীত প্রধান দেশের তালিকা। অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম দেশ কোনগুলো।
রাশিয়াঃ বছরে প্রায় চার মাস এখানে তুষারপাত হয় এবং বৃষ্টি হয়। এ কারণে এখানকার স্বাভাবিক তাপমাত্রা -২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা 8 ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। ১৯৯২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তাপমাত্রা ছিল -৬৯,৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৯৩৩ সালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৫৫° সেলসিয়াস এর নিচে থাকে।
এস্তোনিয়াঃ অন্যান্য দেশের তুলনায় এস্তোনিয়া দেশটা কিছুটা গরম। কিন্তু নিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে সাধারণত সারা বছর শীতকাল বিরাজ করে। শীতকালে এখানকার তাপমাত্রা - ৩ ডিগ্রি থেকে -৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকে। যখন শীতকাল থাকে তখন এখানকার মানুষের জীবন যাত্রা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
কাজাখস্থানঃ কাজাখস্তান মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। এটি গ্রীষ্মকালে খুবই গরম থাকে। তখন এখানকার গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। কিন্তু এখানে অবিরাম বৃষ্টির ফলে জলবায়ু এমন শীতল হয়ে যায় যে আর কোন তাপ অনুভূতি হয় না। শীতকালে এখানকার তাপমাত্রা -২০ থেকে - ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়।
আইসল্যান্ডঃ আইসল্যান্ডের গড় তাপমাত্রা ০ ডিগ্রির উপরে উঠতেও চায়না। যদিও ওঠে তাহলে খুব কম। এদেশের উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা সবসময় -১০ ডিগ্রির নিচে থাকে। এখানে সারা বছরের কনকনে ঠান্ডা বাতাস বয়।
মঙ্গোলিয়াঃ মঙ্গোলিয়াতে শীতকাল অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। সেই সময় মঙ্গোলিয়ার তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে। জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গোলিয়ায় রেকর্ড ভাঙ্গা শীত পড়ে। এই সময় তাপমাত্রা -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। যার কারণে চারপাশে পানি জমে যায় এবং চারিদিকে শুধু বরফ থাকে।
গ্রিনল্যান্ডঃ সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে। গ্রিনল্যান্ডের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালেও এখানকার গড় তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে এবং শীতকালে গ্রীনল্যান্ডের তাপমাত্রা খুবই কম থাকে।
ফিনল্যান্ডঃ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সবথেকে শীতল দেশ হচ্ছে ফিনল্যান্ড। শীতকালে দেশের তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি থেকে -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকে। শীতকালে কখনো কখনো -২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নেমে যায়।
আমেরিকাঃ উত্তর আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়ে। আমেরিকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এখানকার অতিরিক্ত কম তাপমাত্রার প্রভাব এখানকার মানুষের ত্বকের উপরে পড়ে। আমেরিকার সবচেয়ে শীতলতম স্থানের নাম হলো আলাস্কা।
কানাডাঃ কানাডাতে সূর্য সারা বছর তির্যকভাবে আলো দেয়। বছরের 5 মাস কানাডাতে শীত থাকে শীতকালে এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এন্টারটিকাঃ পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা দেশ হলো এন্টারটিকা। এখানে সারা বছরে একবারও সূর্যের দেখা মেলে না। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -৮৯° সেলসিয়াস।
আশা করছি, শীত প্রধান দেশের তালিকা আপনি খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। তার পরেও যদি শীত প্রধান দেশের তালিকা নিয়ে আপনার কোন কিছু জানার থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
শীত আর কতদিন থাকবে 2024
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। এখানে আমরা ছয়টি ঋতু দেখতে পাই। এখন আমরা শীতের মৌসুমে রয়েছি। বাংলাদেশের সাধারণত দুই আড়াই মাস শীত থাকে। এবার শীত এখন পর্যন্ত কিছুটা কম কিন্তু হয়তো সামনে ডিসেম্বর মাস থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। শীতকালে একটি ঋতু যা পৌষ ও মাঘ দুই মাস মিলে থাকে। পৌষ ও মাঘ দুই মাস শীতকাল এবং নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল থাকে। আশা করছি, শীত আর কতদিন থাকবে বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
সারা বছর শীত থাকে কোন দেশে
প্রিয় পাঠক, এবারে আমরা জানবো সারা বছর শীত থাকে কোন দেশে। আমাদের দেশে সাধারণত দুই আড়াই মাস শীত থাকে। কিন্তু বিশ্বে এমন কিছু দেশ রয়েছে যেখানে সারা বছর শীত থাকে। আমরা অবশ্য শীত প্রধান দেশের তালিকা জেনেছি। কিন্তু এ পর্যায়ে আমরা সারা বছর শীত থাকে কোন দেশে বিষয়টি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। বিশ্বে এমন কিছু দেশ রয়েছে যেখানে তাপমাত্রা সব সময় হিমাঙ্কের নিচে থাকে। এমনকি তাপমাত্রা মাইনাস ১০০° সেলসিয়াসের নিচেও নেমে যায় ।
- এন্টারটিকার একটি গবেষণা কেন্দ্রের নাম ভস্তক। এখানে হাড় কাঁপানো শীত পড়ে। সবচেয়ে বেশি শীত পরে আগস্ট মাসে। এ সময় এখানকার তাপমাত্রা -৮৯.২ ডিগ্রিতে পৌঁছায়।
- রাশিয়ায় ওমাইকোন নামে একটি গ্রাম রয়েছে। যেখানে সারা বছর তুষারে ঢাকা থাকে। এখানকার ফসলি জমিগুলোতে সারা বছর বরফ জমে থাকে যে কারণে এখানে মানুষের পক্ষে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। ১৯২৪ সালে ওমাইকন এর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল -৭১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এখন পর্যন্ত এখানকার পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি।
- গ্রিনল্যান্ডের একটি গ্রাম নর্থ আইচ। সেখানে শীতকালে তাপমাত্রা - ৬৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যায়। এক সময় এই গ্রামটি গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন ওই জায়গাটিতে এতই ঠান্ডা যে কেউ ওখানে আর থাকতে চায় না।
- কানাডায় ইউকনের স্ন্যাক এর তাপমাত্রা খুবই কম। এখানেও কখনো কখনো তাপমাত্রা -৬৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অল স্কাইপ নামে একটি স্থান রয়েছে যেখানে তাপমাত্রা -৬২ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর কমে নেমে গিয়েছিল। যারা ঠান্ডা সহ্য করতে পারেন না তাদের এই গ্রামে যাওয়া একেবারেই উচিত না।
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এই স্থানগুলোতে সবচেয়ে বেশি শীত পরে এবং সারা বছরের শীত বিরাজ করে।
শীতকাল সম্পর্কে ১৫ টি বাক্য
আপনি কি শীতকাল সম্পর্কে ১৫ টি বাক্য জানতে চান? প্রত্যেক ঋতুর কিছু আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তেমনি শীতকালেরও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা শীতকাল সম্পর্কে ১৫ টি বাক্য বা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব। নিচে শীতকাল সম্পর্কে 15 টি বাক্য তুলে ধরা হলো।
- শীতকালে দিন ছোট এবং রাত বড় হয়।
- কোন কোন অঞ্চলেই শীতকালে বরফ পড়তে দেখা যায়।
- শীতকালে বাইরের কনকনে ঠান্ডা হয়।
- শীতকালে গাছপালার সমস্ত পাতা ঝরে যায়।
- শীতকালের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো সুস্বাদু পিঠা। এই সময় নানা রকম তৈরি হয়।
- শীতকালে আমরা সাধারণত সবাই গরম কাপড় পরি।
- শীতকালে তাপমাত্রা সব সময় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে থাকে।
- শীতের সকাল কুয়াশার চাদরে মোড়ানো থাকে।
- শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য গবাদি পশুর অনেক কষ্ট হয়।
- শীতকালে আমরা সবাই গরম খাবার খেতে পছন্দ করি।
- শীতের আবহাওয়া অন্যান্য ঋতুর চেয়ে অনেক শুষ্ক হয়। সেজন্য হাত-পা এবং ঠোঁট খুব সহজেই ফেটে যায়।
- শীতকালে রাস্তার পাশের সবাইকে আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোয়াতে দেখা যায়।
- শীতকালে হাত পায়ের আদ্রতা বজায় রাখার জন্য হাত পায়ে লোশন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকি।
- শীতকালে আমরা সবাই লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে খুবই পছন্দ করি।
- শীতকালে গবাদি পশুর অনেক কষ্ট হয়।
প্রিয় পাঠক আশা করছি উপরে আলোচনার মাধ্যমে আপনি শীতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমরা সকলেই শীতকালের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানি কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারি না। সেজন্যই আমাদের এই ছোট্ট প্রচেষ্টা।
উপসংহার - শীত প্রধান দেশের তালিকা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের জন্য শীত প্রধান দেশের তালিকা সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। শীতকাল সম্পর্কে ১৫ টি বাক্য শেয়ার করেছি। আপনি যদি এ বিষয়গুলো অর্থাৎ শীত প্রধান দেশের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে উপরে শীত প্রধান দেশের তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা রয়েছে। আপনি চাইলে সেখানে পড়ে নিতে পারেন। আশা করছি, এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন।
আমাদের লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে এটি শেয়ার করতে পারেন। এরকম আরো নতুন নতুন বিষয় পোস্ট পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url