হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ - মেয়েদের চুল গজানোর ঔষধ
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। বিভিন্ন কারণে আমাদের চুল পড়তে পারে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ আমরা আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব।
হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়া নিয়ে আমরা সবাই ভুক্তভোগী। কিন্তু আমরা কোন ভাবেই বুঝে উঠতে পারি না আসলে আমাদের কি কারনে চুল পড়ছে এবং চুল পড়া বন্ধ করব কিভাবে। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা এই সকল সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন। হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ এবং চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সহ আরও কিছু বিষয় বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ, মেয়েদের চুল গজানোর ঔষধ, মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার, মেয়েদের মাথায় চুল পড়া রোধে করণীয় সম্পর্কে জানব। সম্পূর্ণ আর্টিকেলে জুড়ে আমরা এই সকল বিষয়ে বিভিন্ন রকম তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করব, আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ
চুল পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। দিনে দিনে মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে, টাক হয়ে যাচ্ছে এমন কথা অনেকের মুখে শোনা যায়। চুল পড়া, উঠে যাওয়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকেরই। চুলে ৯৭ ভাগ প্রোটিন ও তিন ভাগ পানি রয়েছে। চুলের যেটুকু আমরা দেখি সেটা একটি মৃত কোষ। কারণ এতে অনুভূতিশীল কোন কোষ নেই।
চুল প্রতি মাসে আধা ইঞ্চি করে বড় হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে একটি চুল দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত বড় হতে পারে। এরপর বৃদ্ধি কমে যায় ।গ্রীষ্মকালে কালে দ্রুত চুল বড় হয় কিন্তু শীতকালে কম বড় হয়ে থাকে। একটি চুলের গড় আয়ু দুই আট বছর এবং চুল কিছু প্রতি দিন স্বাভাবিকভাবেই ঝরে থাকে।
কিভাবে আপনি বুঝবেন আপনার হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ। একজন সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ পর্যন্ত চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ টা পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু এর চেয়ে বেশি চুল পড়লে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন এবং আপনি চুল যাচাই করে দেখতে পারেন আপনার প্রতিদিন কয়টা চুল পড়ে।
আপনি কিভাবে যাচাই করবেন? চিরুনি, বালিশ, তোয়ালেতে লেগে থাকা চুলগুলি আপনি গুনে বুঝতে পারবেন আপনার প্রতিদিন কয়টা করে চুল পড়ছে। অন্তত পরপর দুই তিন দিন অথবা অল্প এক গোছা চুল হাতে নিয়ে হালকা টান দিয়ে যদি চার ভাগের এক ভাগ চুল উঠে আসে তবে তা চিন্তার বিষয়।
কি কারনে চুল বেশি পড়তে পারে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ হলো এন্ড্রোজেনিক হরমোন।
এটি সাধারণত পুরুষের বা নারীর শরীরের বেশি পরিমাণে থাকে। যাদের শরীরে হরমোনের প্রভাব বেশি, তাদের বেশি করে চুল পড়ে। হঠাৎ করে এন্ড্রোজেনিক হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে চুল বেশি করে পড়তে শুরু করে। এ ছাড়াই ছত্রাক সংক্রান্ত বা খুশকি হলে চুল পড়ার অন্যতম কারণ। সে ক্ষেত্রে ছত্রাক রোধী শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ওষুধ খেতে পারেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। খুশকি বা ছত্রাক সংক্রান্ত কিছু না থাকলে নতুন করে আবার চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে।
- নারী পুরুষের শরীর পুষ্টির ওপর চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। দৈনিক খাদ্য তালিকা আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন না থাকলে চুল পড়ে যাওয়া শুরু করে। এছাড়া শরীরের দীর্ঘদিন কোন একটি উপাদানের অভাবে চুল পড়ে যেতে থাকে।
- নারী-পুরুষ যেকোনো ব্যক্তিকে দুশ্চিন্তায় ভুগলে বা মানসিক সমস্যা থাকলে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি চুল পড়তে পারে। এমনটি টাক হওয়ার সম্ভাবনায অনেকটাই বেশি। তবে চুল পড়া সাময়িক এবং পুনরায় চুল গজায়। তবে দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে অনেক বেশি চুল পড়তে থাকে। এগুলো হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ যা আমাদের মানসিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
- যেকোনো ব্যক্তির হরমোন কমে যাওয়ার কারণে চুল উঠে যেতে পারে। যেমন থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হলে, গর্ভবতী অবস্থায় এবং বাচ্চার জন্মের পর হরমোন পরিবর্তন হয় বলে তখন চুল বেশি পড়ে। হরমোনের পরিবর্তন আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেলে পুনরায় চুল গজায়। তবে আগের অবস্থায় যেতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
- কোন ব্যক্তির যদি ক্যান্সার হয় কেমোথেরাপি দেওয়ার পর চুল উঠে যেতে পারে। কেমোথেরাপির প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই তিন দিন পর থেকে চুল পড়া শুরু হয়।
- এন্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া সাধারণত জেনেটিক এবং হরমোনের কারণে ঘটে থাকে। এ কারণে চুল পড়া শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়। পুরুষদের এন্ড্রোজেনেটিক এলোপেসিয়ার লক্ষণগুলো সাধারণত কপালের দিকে থেকে শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত চুল পড়ে গিয়ে মাথার মধ্যভাগের চামড়া স্পষ্ট হয়ে যায়।
- মেয়েদের এ ধরনের চুল পড়া সাধারণত পুরো মাথার চুল পাতলা হওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে মাথার সামনের দিক চুল সাধারণত অপরিবর্তিত থাকে। এন্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া সাধারণত মেয়েদের মধ্য বয়সে শুরু হয়। যে কারণে শেষ পর্যন্ত চুল পড়ে যেতে থাকে।
মেয়েদের চুল গজানোর ঔষধ
মিনোক্সিডিল প্রাথমিকভাবে চুল বৃদ্ধি এবং পুরুষের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি মাথার ত্বকের সামনে অংশ চুল পড়া দূর করে এবং টাক পড়া ক্ষতি করে না। এই ওষুধটি প্রায় দুই থেকে তিন শতাধিক মহিলাদের জন্য ব্যবহার করা হয়। মিনোক্সিডিল টপিক্যাল হচ্ছে প্রথমত USFDA কর্তৃক প্রমাণিত ট্রপিক্যাল সলিউশন মহিলাদের পুনরায় চুল গজানোর জন্য সাহায্য করে। এটি পরীক্ষিত ও গবেষণায় প্রমাণিত।
এই ওষুধ যথাযথ রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা করতে পারলে এটা বংশগতভাবে চুল পড়া বন্ধ করতে পারে। অনেকেই এই চিকিৎসার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। বংশগতভাবে চুল পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার । যা আমাদের জেনেটিক কারণে চুল পড়ার ক্ষেত্রে বংশগত হরমোন এবং বয়স একত্রিত ভাবে চুলের ফলিকল গুলোকে শুষ্ক করে ফেলে।
যা চুলের বৃদ্ধি সংক্ষিপ্ত করে ফেলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু চুলের বৃদ্ধি পর্যায় সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে মিনোক্সিডিল টপিকাল সলিউশন চুলের ফলিকল গুলোকে বৃদ্ধি করার মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি পর্যায় কে সংক্ষিপ্ত করে। যা চুলকে লম্বা ও ঘন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। যা চুলের বৃদ্ধিকে সঞ্চরণশীল করতে পারে।
যে মেয়েদের প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে তারা মিনোক্সিডিল সঠিক মাত্রায় তাদের জন্য ব্যবহার হয়। যা আপনার চুল পড়া রোধে সহায়তা করবে। আপনার পরিবারের অথবা বংশের কোন পুরুষ বা মহিলার চুল পড়া বা সমস্যা থাকলে আপনি তা গোসলের সময়, বালিশে বা চিরুনিতে আগে চেয়ে বেশি চুল পড়তে দেখলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। যার আপনি সঠিকভাবে আপনার মাথার চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন।
ওরাল মিনোক্সিডিল উচ্চ রক্তচাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। টপিক্যাল মিনোক্সিডিল এফডিএ দ্বারা অনুমোদিত। এন্ড্রোটিক এলোপেশিয়া এবং মহিলাদের পেছনের চুল পড়ার জন্য কার্যকরী। এটি বিভিন্ন চুলের ব্যাধিগুলোর জন্য অফ লেভেল ড্রাগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন-
- কেমোথেরাপি প্ররোচিত এলোপেসিয়া ।
- ফ্রটাল ফাইব্রোজিং এলোপেসিয়া।
২০ বছরে কম বয়সী, শিশু বা ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা পরামর্শ ছাড়া এ ওষুধটি ব্যবহার করা উচিত হবে না। অবশ্যই ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
এই ওষুধ যার শরীরে কাজ করবে তার চুল খুব দ্রুত বেড়ে উঠবে। আর যার শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে ওর জন্য এইসব ঔষধ না নিয়ে ন্যাচারাল যেসব পদ্ধতি আছে তা গ্রহণ করেন। অনেককে দেখেছি যারা ন্যাচারাল পণ্য ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পেয়েছে।
মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
আয়রনের অভাবে বিশেষ করে মেয়েদের চুল পড়ে একটি সাধারণ কারণ। মেয়েদের আয়রন, ভিটামিন ডি, এবং ভিটামিন বি এর মত মূল্যবান পুষ্টির ঘাটতি চুল পাতলা করে ফেলে এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করা চুলের বৃদ্ধিকে সমর্থন করতে পারে এবং ঝরে পড়া কমাতে পারে। এজন্য খাবার তালিকায় আয়রন, ভিটামিন, পুষ্টিগুণ দরকার।
পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ খাবার তালিকায় না থাকা জন্য মেয়েদের চুল পড়ার কারণ। অনেক সময় মেয়েরা ডায়েট করতে গিয়ে পুষ্টিকর খাবার কম খায়। এতে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান বিশেষত আমিষ, খনিজ, ভিটামিন এর ঘাটতি দেখা দেয়। চুলের স্বাস্থ্যকর কোন পুষ্টি না থাকার জন্য চুল পড়া শুরু হয়। আমিষের বেশি এর ঘাটতি পরলে চুল পড়া শুরু হতে পারে।
অনেক মেয়ের খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার থাকে না। অনেকে আমিষের তুলনায় শর্করা বেশি খান। এ তে চুলও পড়তে পারে। তাই খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ,ডালের মত খাবার রাখতে হবে। যা আমাদের চুলকে হেলদি ও শক্তিশালী করে চুলকে আরো শক্তিশালী করবে।ভিটামিন বি ১২ ও ভিটামিন ডি চুলের বৃদ্ধি ঘটায় ও মাথার ত্বকে প্রয়োজন পুষ্টি জোগাই।
এ দুটি ভিটামিনের অভাবে চুল পড়তে পারে। খাবার তালিকায় মাংস জাতীয় খাবারের ভিটামিন-১২ ও ভিটামিন ডি আছে। যেসব মেয়েরা সূর্যের আলোকে কম আসে তাদের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পরে বেশিভাগ মেয়েদের চুল পড়ে যাই। হঠাৎ করে চুল পড়া বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাল্টিভিটামিন ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
মেয়েদের কিছু কিছু সমস্যা আছে যার কারণে চুল পড়ে যায়। যেমন মেয়েদের চুলের নানা স্টাইল চুল পড়ার কারণ হতে পারে। উঁচু করে শক্ত করে চুল বেঁধে রাখলে চুল ভেঙ্গে যায়। এর ফলে চুল পড়া শুরু হতে পারে। এছাড়া চুলে বারবার রং করা বা ডিজাইন করা চুল পড়ার কারণ হতে পারে। গর্ভকালীন সমস্যার কারণে নারীদের চুল পড়া শুরু হতে পারে।
শারীরিক অসুস্থতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা, মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস, শরীরে ভিটামিন অভাব, উচ্চ রক্তচাপের খাওয়ার কারণে যেকোনো বয়সের মেয়েদের চুল পড়া শুরু হতে থাকে। মেয়েদের চুল আঁচড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। যেমন পিছনের উঁচু করে চুল না আঁচড়িয়ে যদি উপর থেকে নিচে বা পিছন থেকে সামনে চুল আঁচড়ানো হয় তাহলে চুল পড়া কমে যেতে পারে। কাপড় পেচিয়ে রাখবেন না। চুল পড়া কমাতে হলে অবশ্যই আপনাকে যে সব কারণ মেনে চলতে হবে
- মেয়েদের শরীরে অবশ্যই শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণ মতো আমিষ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
- অনেকদিন ধরে যদি একটানা ওষুধ খাওয়া হয় যার কারণে চুল পড়তে পারে। সে ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে বন্ধ করতে হবে।
- হরমোনের জন্য চুল পড়া প্রবণতা বাড়ে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা উচিত।
- আপনার চুলে ধরন অনুযায়ী প্রসাধনী নির্বাচন করা উচিত এবং সঠিক নিয়মে তা ব্যবহার করা উচিত।
- আপনার মাথার চুলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা থাকতে পারে। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা উচিত।
- সপ্তাহে দুই থেকে এ তিন দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। যেন মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকে।
- নিয়মিত রাত ছয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
- আপনার মন ভালো রাখার সব সময় চেষ্টা করবেন। যেন মানসিক চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়।
- চুলের প্রধান খাবার হল প্রোটিন। তাই প্রোটিন জাতীয় খাবার চাহিদা অনুযায়ী গ্রহণ করবেন।
প্রতিদিন একটা মানুষের ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক কিন্তু এর বেশি পড়তে শুরু করলেই আপনারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। আমাদের কিছু ভুলের কারণে বা শারীরিক সমস্যা কিংবা আমাদের কিছু ভুলের কারণে চুল পড়ে। যেমন-
- কিছু মেয়েদের বদ অভ্যাস আছে রাতে ঘুমানোর আগে চুল না আঁচড়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এর কারণে চুল পড়ে।
- যাদের চুল লম্বা তারা ঘুমানোর আগে চুল বেঁধে না ঘুমালে আগা ফেটে ভাঙতে শুরু করে।
- মেয়েদের জন্ডিস, টাইফয়েড জ্বর বা অন্যান্য তীব্র জরির পরেও অনেকের চুল পড়া শুরু হয়।
- নিয়মিত চুল পরিষ্কার না রাখার কারণে অতিরিক্ত খুশকি হয়ে যায়। ওই কারণে চুল পড়ে।
- আমরা চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইল করে ফেলি যা চুলের অনেক ক্ষতি করে।
- আমরা অনেকেই গোসলের পরে ভিজা চুল আচড়াই। চুল ভেজা থাক থাকার কারণে চুলের নরম হয়ে থাকে ওই অবস্থায় আঁচড়ালে চুল পড়ে।
মেয়েদের মাথার চুল পড়া রোধে করণীয়
মেয়েদের বহু পরিচিত একটি সমস্যার নাম চুল পড়া। নানা কারণে মেয়েদের চুল পড়ে। যেমন বায়ু দূষণ, ধুলা বালু ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে চুল পড়া আরো বেড়ে যায়। চুলে রাসায়নিক ও উপাদান যুক্ত শ্যাম্পু পরিহার করে প্রাকৃতিক উপাদানের তৈরি করার শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। এতে করে আপনার চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হবে। একটু হলেও চুল পড়া বন্ধ হবে। চুল হবে মজবুত ও শক্তিশালী যা আপনাকে মানসিকভাবে শান্তি দেবে।
এছাড়া মেয়েদের মাথার চুল পড়ার আরো কারণ আছে। যেমন গোসলে পরে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় এ সময় জোরে চাপ দিয়ে চুল মুছলে কিংবা আঁচড়ালে চুলের গোড়া ভেঙ্গে যায়। অনেকে আবার চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন। ড্রায়ারের গরম বাতাস চুলের জন্য ক্ষতিকর। চুলে গরম বাতাস বা কোন ধরনের তাপ নেওয়া যাবে না।
এতে করে চুল পড়া বেড়ে যাবে। চুল পড়া বন্ধ করতে হলে চুলের যত্ন অবশ্যই নিয়মিত নিতে হবে। নিয়মিত তেল ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে নারিকেলের তেল ব্যবহার করতে পারেন। স্বাস্থ্যবান ও সমৃদ্ধ চুল করতে হলে নারকেলের তেলের জুড়ে মিলা ভার। নারকেলের তেলে আছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য চুলকে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের এর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে। কেন চুল পড়ছে এটা জানতে হলে আমাদের কোথায় কোথায় সমস্যা এটি জানা বেশি জরুরী।
মেয়েদের কেন চুল পড়ে এটি জানতে হলে আমাদের প্রথমত জানতে হবে মেয়েরা কি খাচ্ছেন। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস চুল পড়ার অন্যতম কারণ। খাবার তালিকায় আমাদের পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। যেমন দুধ, ডিম, সামুদ্রিক মাছ ও ভিটামিন ই যুক্ত খাবার। এগুলো চুলের জন্য খুবই উপকারী। চুল পড়া রোধে, ত্বক পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা জরুরী।
শরীরে পুষ্টিকর খাবার না পেলে ফিডব্যাক কখনোই ভালো দেবে না। বরং আমাদের শরীরে তৈরি হতে পারে হরমোনের ইমব্যালেন্স। তাই চুল সুস্থ রাখতে চাইলে পুষ্টিকর কর খাবার খেতে হবে যার ভিতর আছে শক্তি গুণ। চুলকে ভালো রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবার অবশ্যই খাওয়া জরুরী।
আপনি আরো কিছু ট্রাই করতে পারেন। নারকেলের তেল, কালোজিরা, মেথি মিশিয়ে ভালো করে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন তেলটি মাথায় ভালো করে মাসাজ করে লাগিয়ে নিবেন। তেলটি প্রসেস করার উপায় হল মেথি ও কালোজিরা করা রোদে শুকিয়ে একসাথে গুড়া করে নিন। এরপর নারিকেল তেলের সঙ্গে গুড়া করা মেথি ও কালোজিরা মিশিয়ে মিশ্রণ কে কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নিন। মিশনটি কে ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর একটি বাটিতে করে নিয়ে ময়লাটা পরিষ্কার করার পর আপনি এটি কাচের বোতলে রেখে দিতে পারেন। এই তেলটি অন্তত ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
এছাড়াও মিশ্রণটি চুলের লাগানোর আগে এর সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশ্রণ করতে পারেন। মাথার ফাঁকা স্থানে লাগিয়ে ভালো করে মাসাজ করুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করবেন। কয়েক মাসের মধ্যে হাতেনাতে ফল পাবেন। এইসব উপকরণ চুল পড়া বন্ধ করতে খুবই দ্রুত কাজ করে। আপনি যদি চুল পড়া কিছু ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়ে রোধ করতে চান তাহলে এটি আপনার জন্য বেস্ট হতে পারে।
নিম পাতার উপকারিতা কথা সবাই কমবেশি জানি। এটি প্রাকৃতিক জীবাণু নাশক। যা নতুন চুল গজাতে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে থাকে। এর পাশাপাশি তুলির গোড়া শক্ত করে। খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। নিম পাতা চুলে লাগানোর আগে নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে পেস্ট করে নিন। এরপর সেটা পেস্ট হয়ে গেলে রস বের করে মাথায় পুরো অংশে, চুলের গোড়াতে লাগিয়ে মাসাজ করুন।
আপনি চাইলে পেস্টটি সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন। কমপক্ষে ৩০ মিনিট রেখে বা তারও বেশি রাখতে পারেন। তারপরে হালকা গরম পানি দিয়ে ও শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। চুল পড়া সমস্যা দূর হবে এক মাসের মধ্যেই।
নিম পাতা আরেকটি উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন। নিম পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন এবং এই ফুটানোর নিম পাতাটি ঠান্ডা করা পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ভালো উপকার পেতে পারেন। দীর্ঘস্থায়ী ভাবে চুল পড়া বন্ধ করতে হলে ঘরোয়া উপায়ে যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি অগোছালো জীবনযাত্রা পরিবর্তন করতে হবে।
যেমন পরিমাণমতো পানি পান করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ ও সময়মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, খাবারের তালিকা অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে। যেমন শাক-সবজি, তাজা ফল, মাছ মাংস, ভিটামিন ই জাতীয় খাবার। চুল সুস্থ ও সুন্দর রাখতে প্রচেষ্টা থাকতে হবে আপনার।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক। আজকের আর্টিকেলে আমরা হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ, মেয়েদের চুল গজানোর ঔষধ, মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার, মেয়েদের মাথায় চুল পড়া রোধে করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি আর্টিকেলটি পড়ে এতক্ষণে এই সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
আমাদের লেখাটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো নতুন নতুন বিষয় তথ্য বহুল পোস্ট পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url