অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল গুলো জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল জানবো। আমরা অনেকেই অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার সময় অস্বস্তি বোধ করি। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো কিভাবে একজন অপরিচিত মানুষের সাথে আপনি খুবই সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন।
আমরা অনেকেই পরিচিত কিংবা অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। আবার অনেকে অল্প সময়ের মধ্যে সংবেদনশীল বিষয়ে কথা বলে বসে কিংবা উপদেশ দেয়। কিন্তু যাকে বলা হচ্ছে সে বিরক্ত হতে পারেন, বিব্রত হতে পারে। তার তোয়াক্কা কখনোই করেনা। আর্টিকেলের মধ্যে আমরা অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল সম্পর্কে জানব। যার মাধ্যমে আপনি একজন অপরিচিত মানুষের সাথে খুব সহজে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন।
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা সুন্দর করে কথা বলার কৌশল, মিটিংয়ে কথা বলার কৌশল, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল এবং কম কথা বলার উপায় গুলো জানব। যেগুলো জানার পরে আপনি কথা বলায় নিজেকে অনেকটাই দক্ষ মনে করতে পারবেন। তাহলে চলুন এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। যাতে করে অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার সময় আমাদের কোন অসুবিধা না হয়। চলুন শুরু করা যাক।
সুন্দর করে কথা বলার কৌশল
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা অনেক জ্ঞানী কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেদেরকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। এমনকি শিক্ষাজীবনে এমন অনেক শিক্ষক আমরা দেখেছি যাদের পড়া আমাদের বুঝতে অনেকটা কষ্ট হয়। নিঃসন্দেহে তারা অনেকটা জ্ঞানী। কিন্তু ঘাটতি ছিল তাদের উপস্থাপনায়।
সুন্দর করে কথা বলা একটা আর্ট। আর স্মার্টনেসের প্রথম শর্ত সুন্দর করে কথা বলার কৌশল গুলো জানা। অনেকেই এমন আছেন যারা শুধুমাত্র সুন্দর করে কথা কথা বলার কৌশল না জানার কারণে সঠিকভাবে নিজের মনোভাব প্রকাশ করতে পারেনা। যার ফলে শ্রোতারা অল্পতেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যের মধ্যে ভাব প্রকাশের সৌন্দর্য হচ্ছে অন্যতম একটি উপাদান।
আর এজন্যই সুন্দরভাবে কথা বলার কৌশল রপ্ত করা প্রয়োজন। সেই সাথে অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশলও আপনার জানতে হবে। চলুন সুন্দর করে কথা বলার কৌশল গুলো জেনে নেওয়া যাক।
নিজেকে বিশ্লেষণ করুনঃ প্রথমে নিজেকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। আপনি কি বিষয়ে কথা বলছেন, কিভাবে কথাটি শুরু করছেন, কার সাথে কথা বলছেন।
তার সাথে খেয়াল রাখতে হবে আপনার কন্ঠের দিকে। সেটা কি খুব বেশি মিষ্টি, নাকি স্বাভাবিক, নাকি বেশি কর্কশ। যে বিষয়টি নিয়ে আপনি কথা বলছেন সেই বিষয়ে আপনার দক্ষতা কেমন এটা জানা সবচেয়ে বেশি জরুরী। এসব বিশ্লেষণের ফলাফল একটি কাগজে লিখে রাখুন। সুন্দর করে যে কোন ভাষায় কথা বলা সেটা হোক বাংলা কিংবা ইংরেজি পুরোটাই আপনার অনুশীলনের উপর নির্ভর করে।
ভালো শ্রোতা হনঃ যেকোনো একটি আলোচনায় যোগ দিতে গেলে আগে শুনতে হবে কে কি বলছে। হুট করে কোন মন্তব্য করে দেওয়া যাবে না। তাহলে এটা হবে আপনার বোকামি। মূল বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করুন। যদি কেউ অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করে তবে তাকে অনুসরণ করতে পারেন। এটি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার একটি সুন্দর কৌশল।
আত্মবিশ্বাস রাখুনঃ আপনি যে কথাটি বলছেন তা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলুন। নিজের মধ্যে দিধা রেখে কোন কিছু বলা উচিত নয়। শ্রোতারা যদি বক্তাকে দ্বিধান্বিত দেখে তাহলে বক্তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আর যা বলছেন সেই কথাটি বলার সময় আত্মবিশ্বাসের কারণটিও বলবেন। যদি ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে চান তাহলে কিভাবে ইংরেজিতে কথা বলবেন এ বিষয়টি বেশি ভাবা যাবে না।
সুস্পষ্ট মতামত প্রকাশ করুনঃ কখনোই এমন কোন মতামত প্রকাশ করবেন না যাতে মানুষ খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে কিংবা বিষয়বস্তুর সঙ্গে একদমই আপনার মতামত খাপ না খাই। অনেকেই অন্যের কথা বলার মধ্যে কথা বলাটা পছন্দ করে না। তবে যদি কথা বলতে হয় সেটি ভদ্রভাবে বললে তাতে সবাই সাড়া দেবে ।যেমন এক্সকিউজ মি, বলে যদি আপনি বক্তার কথার সাথে কিছু কথা যোগ দিতে চান তাহলে সেটি করতে পারেন।
সঠিক আবেগ যুক্ত করুনঃ আমরা অনেকেই কথা বলার সময়ই সঠিক আবেগ যুক্ত করতে পারিনা। আনন্দের কথা বলার সময় যেমন আবেগীয় কন্ঠ ভালো শুনায় ঠিক তেমনি দুঃখের কথা বলার সময়ই মন খারাপের কণ্ঠস্বর ভালো শোনাই।
মুদ্রা দোষ বর্জন করুনঃ সুন্দর ভাবে কথা বলার জন্য আপনাকে মুদ্রা দোষ গুলো বর্জন করতে হবে। আমাদের অনেকেই অনেক ধরনের মুদ্রা দোষ রয়েছে। কথা বলার সময় একই শব্দ যেমন অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে দেখবেন আপনার কথা বলা এমনিতেই সুন্দর হচ্ছে।
ধীরগতিতে কথা বলুনঃ আমরা অনেকেই কথা বলার সময় অনেক দ্রুত কথা বলে ফেলি। এটা মোটেই ভালো অভ্যাস নয়। দ্রুত কথা বলতে গিয়ে আমরা অস্পষ্ট কথা বলে ফেলি এবং শ্রোতার কাছে এটা সঠিক ভাবে পৌঁছায় না। তাই গুছিয়ে কথা বলতে হলে অবশ্যই ধীরগতিতে কথা বলতে হবে।
মিটিং এ কথা বলার কৌশল
আপনি যদি মিটিং এ কথা বলার কৌশল জানেন তাহলে মিটিং গুলো আপনার জন্য সব থেকে বেশি সুবিধার। আমরা অনেকেই অফিসিয়াল মিটিংয়ে নিজেদের বক্তব্য রাখি। মিটিং এ কিভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে নিজের বক্তব্যকে আকর্ষণীয় করতে হয় সে ব্যাপারে কি আমরা জানি? আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা মিটিং এ কথা বলার কৌশল গুলো জানব।
পরিকল্পনা করুনঃ যেকোনো অফিশিয়াল মিটিং এর জন্য পূর্ব পরিকল্পনা করা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি কি বিষয়ে কথা বলবেন, কিভাবে বলবেন, কি কি বিষয়ে উল্লেখ করবেন এই সকল জিনিস আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিলে আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো তুলে ধরতে পারবেন।
নিজেকে পরিপাটি ভাবে উপস্থাপন করুনঃ যেকোনো মিটিং এ আপনাকে অবশ্যই নিজেকে পরিপাটি ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। যেমন সঠিক পোশাক নির্বাচন, পরিস্কার পোশাক পরতে হবে, পোশাকে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনি নিজেকে যত আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করবেন শ্রোতারা ততই মনোযোগী হবে। মিটিং এর ক্ষেত্রে পরিপাটি উপস্থাপক আবশ্যক।
ভালো শ্রোতা হতে হবেঃ মিটিং এ অনেক মানুষ উপস্থিত থাকে। তারা একে একে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করে। সেজন্য আপনাকে অবশ্যই একজন ভালো শ্রোতা হতে হবে। অন্যের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। তাদের চোখে চোখ রেখে কথা শুনতে হবে। কথার মাঝখানে কখনোই কথা বলা যাবে না। অন্যেরা কথা বলার সময় কোন কাজ করা যাবে না।
কোন কিছু যদি না বুঝেন তাহলে কথা শেষে প্রশ্ন করতে হবে। তারা কি বলতে চাচ্ছে সে বিষয়টি বুঝতে হবে। আপনি যদি তাদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন তাহলে আপনি নিজের ভুলগুলো খুঁজে বের করে আপনার বক্তব্য প্রদান করতে পারবেন।
স্পষ্ট ভাবে কথা বলুনঃ আপনি যখন একটা মিটিং এ কথা বলবেন তখন আপনাকে অবশ্যই স্পষ্টভাষী হতে হবে। জোরালোভাবে এবং স্পষ্ট করে কথা বলার মাধ্যমে আপনি নিজেকে একজন আকর্ষণীয় বক্তা হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। আপনি যদি স্পষ্টভাবে কথা বলেন তাহলে শ্রোতা আপনার প্রতি মনোযোগী হবে। তাই যেকোনো মিটিংয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলা খুবই জরুরী।
কথা বোঝানোর দক্ষতা অর্জন করুনঃ মিটিংয়ে যেহেতু একাধিক মানুষ থাকে এবং একেক জনের বক্তব্য একেক রকম হয়। তাই আপনি যে মতামত প্রকাশ করবেন অনেকেই তার বিপরীত মতামত প্রকাশ করবে। এটা স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে আপনার নিজের কথা বুঝিয়ে বলতে হবে। নিজের বক্তব্য বোঝানোর দক্ষতা রাখতে হবে। অন্যের মতামতকে সম্মান করতে হবে এবং তাদের কথাও বুঝতে হবে।
অন্যদের আইডিয়াগুলো নোট করুনঃ মিটিংয়ে যখন অন্যরা কথা বলবে তখন অবশ্যই মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে এবং তাদের বক্তব্যে যে বিশেষ দিকগুলো উঠে আসবে সেগুলো নোট করে রাখতে হবে। যেমন
- মিটিংয়ে ও কি কি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
- কাকে কি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তাদের নাম।
- কে কে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং কি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে হয়।
- কেউ যদি কোন মূল্যবান কথা বলে সেটি নোট করতে হবে। মিটিংয়ে যদি কোন প্রশ্ন করা হয় তাহলে সেই প্রশ্ন এবং উত্তর নোট করতে হবে।
- মিটিং এর পরে যদি ফোন কল করতে হয় তাহলে সেটা নোট করে রাখতে হবে।
- মিটিংয়ে কারা কারা উপস্থিত ছিল তাদের নাম।
এতে করে আপনার বক্তব্য প্রদানে অনেকটাই সুবিধা হবে।
গুছিয়ে কথা বলতে হবেঃ মিটিংয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব কথা গুছিয়ে বলতে হবে। আপনার বক্তব্যের বিষয়গুলো এলোমেলোভাবে না বলে গুছিয়ে বললে তা শুনতে আরো ভালো লাগবে। এজন্য আপনি যে টপিকে কথা বলবেন সে বিষয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচিত বিষয়ের বাইরে কোন কথা বলা যাবে না। অঙ্গভঙ্গি এবং কথা বলার সময় আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে। কথার মধ্যে বিরতি দিয়ে কথা বলুন এবং মুদ্রা দোষ গুলো পরিহার করুন।
যৌক্তিক বক্তব্য দেনঃ আপনি যে বিষয়ে বক্তব্য দেন না কেন তা অবশ্য যৌক্তিক হতে হবে। অহেতুক কথা বলা কেউ পছন্দ করেনা। মিটিং এ বিভিন্ন প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে বিষয়টি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন। সব সময় যৌক্তিক প্রশ্ন করুন এবং যৌক্তিক কথা বলুন।
অন্যদের অনুসরণ করুনঃ আপনি নিজের বক্তব্য রাখার পাশাপাশি অন্যদের কথা বলা অনুসরণ করুন। অন্যদের অনুসরণ করলে তাদের বক্তব্য বুঝতে এবং নিজের ভুলগুলো সংশোধন করতে সুবিধা হবে।
সালাম এবং শুভেচ্ছার মাধ্যমে কথা শুরু এবং শেষ করতে হবেঃ মিটিংয়ে কথা শুরুর আগে সালাম দেওয়া এবং সালাম দিয়ে কথা শেষ করা এক ধরনের ভদ্রতা। কথা বলা শুরুতে সালাম দিয়ে শ্রোতাদের অভিবাদন জানানোর ফলে তাদের মনে আপনাকে নিয়ে পজিটিভ ধারণা জন্মাবে। আবার একইভাবে সালাম এবং শুভেচ্ছা মাধ্যমে বক্তব্য শেষ করা উচিত। মিটিংয়ে কথা বলার সময় অবশ্যই দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে। মিটিং থেকে কি কি জানলেন বা বুঝলেন সে সকল কথা উল্লেখ করার মাধ্যমে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব।
এই সহজ কিছু মিটিংয়ে কথা বলার কৌশল অবলম্বন করলে আমরা অন্যদের সামনে একজন সফল বক্তা হিসেবে নিজেকে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করতে পারব।
অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল
অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে। সুন্দর করে কথা বলার কৌশল একটা আর্ট। যা সবার মধ্যে থাকে না। যে কোন মানুষেরই কথা বলার মধ্যে তার সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। একটা কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে আপনি যত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলবেন ঠিক ততটাই সুনাম, খ্যাতি এবং সৌন্দর্য লাভ করবেন।
আমরা খুব ছোটতে কথা বলতে শিখি। মাত্র এক বছর বয়স থেকে তিন বছর বয়স পর্যন্ত। কিন্তু সুন্দর করে কথা বলার কৌশল শিখতে আমাদের সারা জীবন লেগে যায়। আজকের আর্টিকেলে আমরা শিখব অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল। মানুষের মুখের কথা প্রেম হয় আবার এই মুখের কথার মাধ্যমে ঝগড়া বিবাদ হয়। সুতরাং কথা বলার মাধ্যমে আপনি কারো মনে জায়গা করে নিতে পারেন। আবার কারো মন থেকে উঠেও যেতে পারেন।
- আমাদের কথা বলার ধরনের ওপর নির্ভর করে মানুষ আমাদের চরিত্রের একটা প্রতিচ্ছবি তৈরি করে নেয়। তাই প্রথমে নিজেকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন। আপনি কোন বিষয়ে কথা বলছেন সে বিষয়টি সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট ধারণা আছে কিনা, আপনি কিভাবে আপনার কথাটি তুলে ধরবেন, এ বিষয়গুলো আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন।
- যেকোন বিষয়ে যদি আপনার মতামত দিতে হয় তাহলে সে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। হুট করে কোন মতামত দিবেন না। তাহলে অনেক বেফাঁস কথা বলার আগে আপনি বেঁচে যাবেন। আর এতে করে আপনার কথা অনেকটাই সুন্দর হয়ে উঠবে।
- আমরা আশেপাশে এমন অনেক মানুষ দেখতে পাই যারা অফিসে কিংবা ক্লাসে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার জন্য ভালো প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় যেন তাদের মাথা একদম খালি হয়ে যায়। কোন কথা গুছিয়ে বলতে পারেনা। এর কারণ হলো আত্মবিশ্বাসের অভাব। আপনার কথায় যদি আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে তাহলে আপনি কখনোই নিজের কথা সহজ ভাবে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন না। মানুষ ও আপনার কথা বিশ্বাস করবে না। তাই কথা বলার সময় নিজের উপরে সম্পূর্ণ আস্থা রাখুন। এমন ভাবে কথা বলুন যেন শ্রোতা মনে করে যে আপনি যা বলছেন সেটাই ঠিক।
- খেয়াল করে দেখবেন যারা গুছিয়ে কথা বলে তারা কিন্তু খুব কম শব্দ বলে এবং কাজের কথা বলে। তাই কথা বলার সময় সাধারণ শব্দ এবং সরল বাক্য গুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। কোন কঠিন শব্দ ব্যবহার করে সহজ কথাকে অযথা কঠিন করে দেয়া যাবে না। এছাড়াও কারো সমালোচনা করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এর মাধ্যমে আপনার নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। তাই অন্যের সমালোচনা করতে হলে তা যৌক্তিক ভাবে করুন।
- আপনি যখন কারো সাথে কথা বলবেন তখন আপনাকে এটা জানতে হবে যে শ্রোতা কোন বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। সেভাবে আপনাকে কথা বলতে হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনি কিভাবে আপনার আইডিয়াটা তার সামনে উপস্থিত করবেন তার প্রস্তুতি আপনাকে আগে থেকে নিয়ে রাখতে হবে। যাতে কখনোই মনে না হয় আরেকটু বেশি সময় পেলে আরও সুন্দরভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারতাম।
- যেকোনো কিছু শিখার জন্য বা জ্ঞানার্জনের জন্য বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। বই আমাদের একমাত্র বন্ধু যার মাধ্যমে আমরা সহ শিক্ষা অর্জন করতে পারি। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর অজানা দিকগুলো সম্পর্কে জানতে পারি। যা আমাদের চিন্তার জগতকে অনেকটা প্রসারিত করে। এছাড়াও বিভিন্ন রকমের বই পড়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ হয়। যার ফলে আমরা সহজ এবং স্পষ্টভাবে নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরতে পারি।
- যে কোন বিষয়ে যদি আমরা ভালো কিছু শিখতে চাই তাহলে আমাদের একজন ভালো শিক্ষক প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনি যার মত হতে চান তাকে অনুসরণ করতে পারেন। আবার আপনার কোন প্রিয় অভিনেতার ভিডিও বা টিভির কোন উপস্থাপককে অনুসরণ করতে পারেন। বিভিন্ন ভিডিও অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকদের লাইভ ভিডিও দেখতে পারেন। ভিডিও দেখে তাদের মত করে কথা বলা আয়ত্ত করতে পারেন। এরপর পরিস্থিতি এবং পরিবেশ বুঝে তার কিছু অংশ বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে দেখুন। তবে খেয়াল রাখবেন কাউকে অনুসরণ করতে গিয়ে আপনার নিজের স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলবেন না। আপনি যেভাবে কথা বলতে স্বাস্থ্য বোধ করেন ঠিক সেভাবেই কথা বলুন।
আপনি যদি নিজেকে এভাবে তৈরি করতে পারেন তাহলে আশা করা যায় অপরিচিত কারো সাথে হঠাৎ যদি কথা বলতে হয় তাহলে আপনি খুব সহজেই নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবেন। আশা করছি, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশলগুলো আপনি ভালোভাবে রপ্ত করবেন এবং বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ করবেন।
কথা কম বলার উপায়
কম কথা বলা এবং সংশোধিত হয়ে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা একটি খুবই ভালো দক্ষতা। এটি আপনাকে শান্ত, সংযমী এবং প্রভাবশালী করে তুলবে। নিচে কম কথা বলার কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলো।
- কথা বলার আগে চিন্তা করুন আপনি যা বলতে চাচ্ছেন তা কি সত্যিই দরকারি কোন কথা। এ কথাটি বললে কি অন্যদের উপকার হবে বা আপনার প্রয়োজন মিটবে। কথা বলার আগে 2-3 সেকেন্ড চিন্তা করে নিন।
- অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং শুধু প্রাসঙ্গিক হলে কথা বলুন। অন্যের কথা শুনতে পারার দক্ষতা আপনাকে অনেকটা প্রভাবশালী করে তুলবে।
- যেখানে কোন কথা বলার দরকার নেই সেখানে চুপ থাকা অভ্যাস করুন। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আলোচনা বা গসিপ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। মজা করার জন্যে যদি কেউ অপ্রয়োজনীয় কোন কথা বলে তাহলে তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
- সারা দিনের শেষে নিজেকে একবার বিশ্লেষণ করুন। ভাবুন আপনি কোথায় কোথায় অপ্রয়োজনীয় কথা বলেছেন। কিভাবে আরো কম কথা বলা যেতে পারে।
- আপনার যদি দ্রুত কথা বলার অভ্যাস থাকে তাহলে তা পরিহার করুন। এতে করে আপনি স্বাভাবিকভাবে কম কথা বলবেন এবং চিন্তা করে কথা বলার সুযোগ পাবেন।
- অল্প কথাই বেশি কিছু মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। আপনার বক্তব্য স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত করুন।
- সব জায়গায় কথা বলা জরুরী নয়। অনেক সময় নিরবতায় আপনাকে আরো স্মার্ট এবং বুদ্ধিমান হিসেবে অন্যদের কাছে উপস্থাপন করবে।
- মেডিটেশন করলে মনের অস্থিরতা কমে যায় এবং আপনার কথার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উপলব্ধি বাড়ে। মেডিটেশন আপনাকে সংযমী এবং আত্মনিয়ন্ত্রিত করে তুলতে সহায়তা করবে।
- কম কথা বলা মানেই শুধুমাত্র চুপ থাকা নয় বরং সুন্দরভাবে কথা বলা। সংক্ষেপে এবং বিনয়ের সাথে কথা বলুন।
- কম কথা বলার অভ্যাস কখনো রাতারাতি তৈরি হবে না। ধৈর্য ধরে ধীরে ধীরে নিজের অভ্যাস পরিবর্তন করুন।
চুপ থাকা মানে কখনো তা দুর্বলতা নয়। এটি একটি শক্তি যে আপনাকে বুদ্ধিমান এবং সম্মানিত করে তুলবে। নিজের আবেগ এবং চিন্তা কে নিয়ন্ত্রণ করে কথা বলার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এটি আপনাকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা সুন্দরভাবে কথা বলার কৌশল, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কৌশল, মিটিংয়ে কথা বলার কৌশল এবং কম কথা বলার উপায় সম্পর্কে জানলাম। আর্টিকেলটি পড়ে আমরা এইটুকু বুঝতে পেরেছি যে কোনো জায়গায় নিজেকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে হলে নিজেকে একজন ভালো শ্রোতা হিসেবে আগে প্রমাণ করতে হবে।
তাহলে আমরা সব জায়গাতে আমাদের নিজেদের বক্তব্য সুন্দর ভাবে তুলে ধরতে পারবো। আশা করছি, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এরকম আরো তথ্যবহুল পোস্ট পড়ার জন্য নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। কারণ আমরা এখানে প্রতিনিয়ত তথ্যবহুল পোস্ট লিখে পাবলিশ করি। ধন্যবাদ।
শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url