কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায় - অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে আমরা কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায় তা জানবো। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টা করব। বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
নতুন চুল গজানো
আমাদের শরীরে চুল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা আমাদের সৌন্দর্যকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। মানুষের শরীরে চুল প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মায়। আমাদের শরীরে ছোট থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত চুল পর্যায়ক্রমে গজায়, আবার উঠেও যায়। তাহলে চলুন কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায় এবং অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক, আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে যে বিষয়গুলো জানবো সেগুলো হল অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ, চুল পড়লে কি নতুন চুল গজায়, অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ, কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায়, প্রতিদিন কয়টি করে চুল পড়া স্বাভাবিক, অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান। এক কথায় আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা চুল পড়ার সম্পর্কিত সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। 

তাই আপনি যদি চুল পড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কত বছর পর্যন্ত নতুন চুল গজায় বিস্তারিত নিচে দেখুন।

অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ

চুল আমাদের শরীরের একটি বিশেষ অংশ। যা আমাদের দৈহিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখন অনেকেই রয়েছে যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে মাথায় টাক পড়ে যাচ্ছে। অথবা চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে। চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। চলুন অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ কি জেনে নেওয়া যাক।

বিভিন্ন কারনে চুল পড়ে যেতে পারে। বিভিন্ন রকম অসুস্থতার জন্য চুল পড়ে। যেমন জ্বর, লিভার এবং কিডনির অসুখ, কেমোথেরাপি নেওয়ার পরে রক্তস্বল্পতা, কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদির কারণে ও অতিমাত্রায় চুল পড়ে। আবার চুল পড়ার অন্যতম কারণ মানসিক চাপ, বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা, অপুষ্টি, অতিমাত্রায় ডায়েট ইত্যাদি। 

আবার উকুন, খুশকি, চটচটে মাথার ত্বক এবং শুষ্কতা ও চুলের সবচেয়ে বড় শত্রু। এগুলো অল্প বয়সে চুল পড়ার অন্যতম কারণ। বর্তমান প্রজন্মের চুল পড়ার পেছনে বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন তারা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং ঘুমের প্রচুর অনিয়ম করে। সেজন্য অতিমাত্রায় চুল পড়তে থাকে। এছাড়া বর্তমান সময়ে ব্যবসায়ী, স্টুডেন্ট কিংবা চাকরিজীবী সবার ক্ষেত্রেই মানসিক চাপ অনেক বেশি। 

যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হয় এবং মানুষিক চাপ বেশি থাকে তাহলে চুল পড়ার সমস্যা অনেকটাই বেড়ে যায়। অতিরিক্ত পরিমাণে ফাস্টফুড খাওয়া, সকালে নাস্তা না খাওয়া, সবজি এবং ফলমূল না খাওয়া, এসবের কারণে শরীরে পুষ্টির ঘাটতে দেখা যায়। সেজন্য চুল পড়ে যেতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে চুল পড়ে। 

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও চুল পড়ে যায়। আরেক ধরনের চুল পড়া রয়েছে যাকে অ্যালোপেসিয়া এরিয়েটা বলা হয়। এক্ষেত্রে মাথার কিছু কিছু জায়গা থেকে এক থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চুল একসঙ্গে উঠে যেতে পারে। যে কোন বয়সের নারী অথবা পুরুষ এই রোগের শিকার হতে পারে। শিশুরাও কিন্তু এর বাইরে নয়। 

আশা করছি, অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। নিচে আমরা কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায় এবং অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ

পুরাতন চুল ঝরে যাবে এবং নতুন চুল গজাবে এটাই নিয়ম। প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টা চুল ঝরে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই ঘাটতি আবার স্বাভাবিক নিয়মেই পূরণ হয়। কিন্তু যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়ে তাহলে অবশ্যই সেটি চিন্তার বিষয়। আপনি যদি না জানেন কত বছর বয়স পর্যন্ত চুল গজায় তাহলে আপনি এটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যাবেন। 

বিভিন্ন কারণে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন অযত্ন, অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা, চুলের রং করা, বিভিন্ন রকমের ঔষধ লাগানো, স্টাইল পরিবর্তন ইত্যাদি। বিভিন্ন রকম ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ও চুল ঝরে যায়। আবার কখনো কখনো অতিরিক্ত চুল পড়া কোন জটিল রোগের কারণ হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ।

রক্তশূন্যতাঃ শরীরে যদি অপুষ্টি, কৃমি কিংবা মাসিকের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ অথবা পরিপাকতন্ত্রে আলসার থাকে তাহলে তার শরীরে লৌহের ঘাটতি জনিত রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এর লক্ষণ হিসেবে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, শরীর দুর্বল, ক্লান্তি, অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত চুল পড়া এগুলো দেখা দেয়।

অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটাঃ এই রোগের কারণে মাথার বিভিন্ন স্থান থেকে এক থেকে পাঁচ মিলি পর্যন্ত চুল একসাথে উঠে যেতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অস্বাভাবিকতার কারণে চুলের গোড়ার ফলিকল ধ্বংস হয়ে যায়। শারীরিক এবং মানসিক চাপের কারণে এই রোগ দেখা দেয়।

মাথার ত্বকের সমস্যাঃ মাথার ত্বকের বিভিন্ন রকম রোগ যেমন আরসেপরী ডার্মাটাইটিস, টেনিয়াক্যাপিতিস, সোরিয়াসিস ইত্যাদির কারণে অতিরিক্ত চুল ঝরে যেতে পারে।

পলিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমঃ বিভিন্ন কারণে বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের ওজন বেড়ে যায়, মাসিক অনিয়মিত হয় এবং শরীরে অতিরিক্ত লোম গজায়। সেই সঙ্গে মাথার চুল অতিরিক্ত পরিমাণে পড়ে যায়। এই সমস্যা পারিবারিক ইতিহাস এবং এন্ড্রোজেন হরমোনের অসামঞ্জস্যতার কারণে হয়।

লুপাসঃ এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের নিজস্ব কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। নাক এবং গালে rash, মুখে ঘা, শরীরের জয়েন্টে ব্যথা এবং চুল পড়ে যেতে পারে।

থাইরয়েডঃ সাধারণত থাইরয়েড দুই রকমের হয়। একটি হাইপোথাইরয়েডিজম এবং অন্যটি হাইপার থাইরয়েডিজম। হাইপো থাইরয়েডিজম এর ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন হরমোনের ঘাটতি হলে বিভিন্ন রকম লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন ওজন বেড়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তি, দুর্বলতা, বিষন্নতা, অমনোযোগী, অনিয়মিত মাসিক, পা ফোলা ইত্যাদি। সেই সাথে চামড়ার খসখসে ভাব, ভঙ্গুর নখ এবং অতিরিক্ত চুল পড়া দেখা দেয়। 

অন্যদিকে হাইপার থাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে থাইরক্সিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে ওজন কমে যায়, অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, খিটখিটে ভাব, বুক ধরফর করা, ডায়রিয়া, অতিরিক্ত গরম লাগে, হাতের তালু ঘামে এবং অতিরিক্ত চুল ঝরে যায়।

এছাড়াও মনস্তাত্ত্বিক রোগ ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া হলেও চুল পড়ে যেতে পারে। কারণ এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা তাদের চুল বারবার টেনে ধরে। এ কারণে তাদের মাথায় টাক পড়ে যায়। এছাড়াও হঠাৎ করে মানসিক চাপ, অপারেশন, কোন আঘাত জনিত ঘটনা, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া, এসব কারণেও সাময়িকভাবে চুল পড়তে পারে। 

আশা করছি, অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ আপনি বুঝতে পেরেছেন। চুল পড়া বন্ধ করতে আমাদের নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এছাড়াও স্বাভাবিকভাবে চুল শুকাতে হবে ব্লো ড্রায়ার ব্যবহার করে উচ্চতাপে চুল শুকানো যাবে না। খুব টাইট ভাবে কোন হেয়ার স্টাইল করা যাবে না এবং নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। চুল ধোয়া এবং আঁচড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই যত্নশীলতার পরিচয় দিতে হবে। চুলে যে কোন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায়

কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায়? এই প্রশ্নটি আমাদের অনেকের মনে রয়েছে। চলুন এই প্রশ্নটির উত্তর জেনে নেওয়া যাক। চুলের সমস্যা কার নেই? কম বেশি আমরা সবাই চুলের সমস্যায় রয়েছি। আমাদের চুল টিকিয়ে রাখার জন্য চিন্তার যেন শেষ হয় না। যাদের চুল পাতলা হয়ে গেছে কিংবা টাক পড়ে যাচ্ছে তারা নতুন চুল গজানোর জন্য অনেক কিছুই করি। 

কিন্তু আমরা এটা জানি না যে কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায়। আমাদের মাথা থেকে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ চুল ঝরে পড়বে। আবার প্রাকৃতিক নিয়মেই তা পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু চুল পড়ার পাশাপাশি তখন চুল পাতলা হয়ে যায়। নতুন চুল গজানোর বিষয়টি অনেকটাই নিজের উপরে নির্ভর করে। এক এক মানুষের শারীরিক গঠন এক এক রকম। 

কত বছর বয়স পর্যন্ত আপনার নতুন চুল গজাবে তা আপনার শারীরিক গঠনের উপরে অনেকটা নির্ভর করবে। বৃদ্ধ বয়স হয়ে গেলেও নতুন চুল গজাতে পারে। মানুষ জন্মগতভাবে মাতৃগর্ভ থেকে চুল নিয়ে আসে। চুল কেরাটিন নামক প্রোটিন দিয়ে তৈরি। একটি চুলের সাতানব্বই ভাগ্য প্রোটিন এবং তিন ভাগ পানি থাকে। চুলের যে অংশটুকু আমরা দেখতে পাই তা হচ্ছে মাতৃ কোষ। 

এর কারণ এতে অনুভূতিশীল কোন কোষ নেই। চুল প্রতিমাসে আধা ইঞ্চি বড় হয়। স্বাভাবিকভাবে একটা চুল চার বছর পর্যন্ত বড় হয় এবং শীতকালে তুলনামূলক কম বড় হয়। একটি চুলের গড় আয়ু আট বছর পর্যন্ত হয়। সাধারণত ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল বেশি পরিমাণে গজায়। তারপরেও চুল গজাবে কিন্তু সে কম হবে নাকি বেশি তা আপনার শারীরিক গঠনের উপরে নির্ভর করছে। 

আশা করছি, কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায় আপনি সেই সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পেয়েছেন।

প্রতিদিন কয়টি চুল পড়া স্বাভাবিক

অনেকে জানতে চান প্রতিদিন কয়টি চুল পড়া স্বাভাবিক। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মাথায় প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ পর্যন্ত চুল থাকে। সেখান থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টা চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এর চেয়ে যদি বেশি চুল পড়ে তাহলে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তাই আপনার বালিশ, তোয়ালে যে লেগে থাকা চুল গুনে দেখুন। বিশেষ করে একটানা তিন দিন। অথবা আপনার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে টান দেন যদি আপনার চুল উঠে আসে তাহলে তাহলে তো অবশ্যই চিন্তার বিষয়।

অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান

চুল পড়ার সমস্যা আমাদের সবারই আছে। বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। এর মধ্যে অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস অন্যতম। কারণ, কারো কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা একটু বেশি। তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় চুল পড়ে যায় কিন্তু নতুন চুল আর গজায় না। তখন আস্তে আস্তে চুল পাতলা হয়ে যায় একপর্যায়ে টাক পড়ে যায়। প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি চুল ঝরে পড়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। 

কিন্তু সমস্যা তখন হয় যখন চুল পড়ে যাওয়ার পরে আর গজায় না বরং আরো বেশি বেশি চুল পড়তে থাকে। তাই অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান করা উচিত। চুল পড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এমন কিছু ব্যবহার করা উচিত যা চুল পড়া কমাবে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়িয়ে দিবে। চলুন অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান আমরা ঘরোয়াভাবে করার চেষ্টা করি। যার মাধ্যমে আপনি এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। 

আপনি কি করে বুঝবেন যে আপনার অতিরিক্ত চুল পড়ছে? যখন দেখবেন মাথার সামনের দিকে চুলের ঘনত্ব কমে যাচ্ছে। ভুরু অথবা চোখের পাতা থেকে যদি চুল ঝরতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার অতিরিক্ত চুল পড়ছে। মাথায় যদি খুশকি হয় অথবা স্কেল বেড়ে যায় ইনফেকশন হয়ে চুল পড়া বেড়ে যায়। কয়েকটি ঘরোয়া উপায়ে আপনার চুল পড়া সমাধান হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক উপায় গুলো কি।

নিমের তেলঃ প্রাচীনকাল থেকে চুলে নিম পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। এমনকি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাও নিমের তেল ব্যবহার হয়। এর কারণ হচ্ছে নিম পাতায় উচ্চমাত্রার ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় নিমের তেল স্ক্যাল্প এ অতিরিক্ত তেল উৎপাদন বন্ধ করে চুলের গোড়া শক্ত করে ফেলে। 

এজন্য আপনাকে প্রথমে দশ বারোটি নিম পাতা নিয়ে সেগুলো ভালোভাবে বেটে পাতা থেকে রস বের করে নিতে হবে। এগুলো এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে স্কেল্পে কাজ করবে। নিম পাতার এই মিশ্রণের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ অলিভ অয়েল অথবা নারিকেল মিশিয়ে সেটি সামান্য গরম করে লাগাতে হবে।

পেঁয়াজের রসঃ নতুন চুল গজানোর জন্য পেঁয়াজের রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি স্কেল্প ইনফেকশন রোধ করতে পারে। এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা চুল ঘন করে। 

এজন্য প্রথমে একটি বড় পেঁয়াজ নিয়ে তা থেকে রস বের করে নিতে হবে। সেই রস সরাসরি মাথায় লাগানো যায়। আবার আপনি চুলেও লাগাতে পারেন। পেঁয়াজের রস লাগানোর সময় মাথার ত্বকে খুব ভালোভাবে মাসাজ করতে হবে। পেঁয়াজের রস লাগিয়ে এক ঘন্টা রেখে তারপর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে এক মাস পর নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।

জবা ফুলঃ জবা ফুল চুল পড়া বন্ধ করতে পারে। সেইসাথে চুলের সমস্যা খুশকি থেকে চুলকে রক্ষা করে চুল ঘন এবং শক্তিশালী করে। জবা ফুল একটি প্রাকৃতিক উপাদান তাই যেকোনোভাবে এটি ব্যবহার করা যায়। কয়েকটি জবা ফুল এবং সমপরিমাণ পাতা নিয়ে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটাতে হবে। তেল ঠান্ডা হওয়ার পরে মাথায় লাগিয়ে নিতে হবে আধা ঘন্টা পরে চুল ভালো করে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।

এছাড়াও যদি শরীরে পানির অভাব দেখা দেয় তাহলে চুল পড়তে পারে। তাই চুল পড়া প্রতিরোধ করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। চুলের গোড়ায় ভিটামিন ই ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চর্বিযুক্ত খাবার, মাছ, মাংস সহ প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখতে হবে। নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে হবে। মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তায় এড়িয়ে চলতে হবে। 

এজন্য আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। চুল পড়া প্রতিরোধে গ্রিন টি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ধূমপানের কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে। তাই ধুমপান এড়িয়ে চলতে হবে। হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এতে করে চুল পড়ার সমস্যার সমাধান হবে। 

উপরে উল্লেখিত নিয়ম গুলো যদি আপনি ভালোভাবে মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনার চুল পড়ার সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে। এরপরেও যদি চুল পড়া সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মানুষ জানতে চায় এমন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

প্রশ্নঃ ৩০ বছরের পর কি চুল গজায়?
উত্তরঃ ৩০ বছরের পর চুল গজাবে কিনা তা আপনার দেহের গঠনের উপর নির্ভর করবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত চুল গজাতে পারে। হরমোনের কারণে কারো কম কারো বেশি এভাবে চুল গজায়।

প্রশ্নঃ চুলের আয়ু কত দিন?
উত্তরঃ একটি চুলের গড় আয়ু দুই থেকে আট বছর পর্যন্ত। একটি চুল দুই থেকে চার পর্যন্ত চার বছর পর্যন্ত বড় হয়। এই হিসেব মতো প্রতিদিনই কিছু না কিছু চুল আমাদের মাথা থেকে ঝরে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে চুল ঝরতে পারে। যেমন খুশকি, হরমোনের তারতম্য, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ রাত জাগলে কি চুল পড়ে?
উত্তরঃ শরীরে হরমোনের কম বেশির কারণে চুল পড়ে। বেশি রাত জাগলে বা অথবা বারবার ঘুম ভাঙলে আমাদের হরমোনের ওপর প্রভাব পড়ে। আমাদের শরীরে এন্ড্রোজেন নামক যে হরমোন রয়েছে তার উপরে চুল পড়া অনেকটাই নির্ভরশীল।

প্রশ্নঃ নতুন চুল গজানোর ঔষধ কি?
উত্তরঃ চুল গজানো বা বৃদ্ধির অন্যতম একটি ওষুধের নাম মিনিক্সিডিল। এটি সাধারণত পুরুষদের টাকের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যে সব মহিলাদের চুল পাতলা হওয়ার সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নঃ কি কি খাবার খেলে চুল গজায়?
উত্তরঃ এমিনো এসিড যুক্ত খাবার খেতে হবে। মাছ, মাংস, দুধ, পনির, ডিম এগুলো রাখতে হবে। সয়াবিন, মটরশুঁটি, কলা, বাদাম এগুলো নিয়ম করে খেতে হবে। প্রোটিনের পরিমাণ যাতে বেশি হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে কত বছর বয়স পর্যন্ত নতুন চুল গজায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে চুল পড়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এতক্ষণে জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। 

আমাদের লেখাটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম আরো নতুন নতুন বিষয় পোস্ট পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেজা ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url